ডেঙ্গুতে কতো লোক মরলে চট্টগ্রামে মশার জরিপ হবে?

ঢাকায় নিয়মিত, চট্টগ্রামে হল না তিন বছরেও

চার বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গেল বছরই— ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা চট্টগ্রামে ছাড়িয়েছে ৭ গুণ বেশি। ২০১৭ সালের পর তিন বছরেও হয়নি কোনও মশক জরিপ। ঢাকায় নিয়মিত চার মাস পর পর মশক জরিপ হলেও চট্টগ্রামে না হওয়ায় জানা নেই মশার সর্বশেষ অবস্থা।

তবে ঢাকায় মশক জরিপ করার জন্য লোকবল পাঠানো হয় চট্টগ্রাম থেকে। অথচ তিন বছর ধরে ঢাকার টিম আসি আসি করেও আসেনি চট্টগ্রামে। যার কারণে গেল তিন বছর আটকে আছে চট্টগ্রামের মশক জরিপ কার্যক্রম। সিভিল সার্জন থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কাছে কয়েক দফা মশক জরিপের জন্য দল পাঠানোর আবেদন করলেও তা ঝুলে আছে। কেন বা কী কারণে আসছে না মশক জরিপ টিম তার সঠিক তথ্যও দিতে পারছেন না সিভিল সার্জন কর্তৃপক্ষ। তবে গত আগস্টের দিকে মশক জরিপের সিদ্ধান্ত নিয়েও লোকবল সংকট এবং জরিপ বিশেষজ্ঞ না থাকার কারণে বারবার পিছিয়ে যাচ্ছে মশক জরিপ কার্যক্রম এমন মন্তব্য সিভিল সার্জন কার্যালয়ের একাধিক কর্মকর্তার।

সর্বশেষ ২০১৯ সালে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) তথ্য অনুসারে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৫৭ জন। তবে চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৬ জন।

সিভিল সার্জনের তথ্য মতে, ২০১৭ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ৬৬ জন, ২০১৮ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ১৭৭ জন, ২০১৯ সালে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী সনাক্ত হয় ২,২০০ জন।

মশক জরিপ
সর্বশেষ ২০১৭ সালের আগষ্ট মাসের ২১-২৫ তারিখ। ৪১ ওয়ার্ডকে ৭টি জোনে ভাগ করে ৮২০ স্থানে জরিপ চালানো হয়।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, কীটতত্ত্ব বিভাগে বিভিন্ন পদে কর্মরত আছেন ৫ জন। এতো অল্পসংখ্যক লোকবল দিয়ে মশক জরিপ চালানো সম্ভব না বলেই ঢাকার টিমের জন্য অপেক্ষায় থাকতে হচ্ছে সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের।

এ প্রসঙ্গে সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি গত বছরের শেষের দিকে এখানে এসেছি। এ সম্পর্কে তেমন কিছু জানা নেই। তবে গত বছর ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে একটু সময় লেগেছে। আমার জানা মতে ২০১৭ সালের পর চট্টগ্রামে আর মশক জরিপ করা হয়নি। গত বছর অনেক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে। এপ্রিলের দিকে বর্ষা মৌসুমে এর প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে জরিপটি দ্রুত করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে জানানো হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের লোক ঢাকায় গিয়ে জরিপ কাজে অংশ নিয়েছে। আমাদের এখানে কেন দেরি করছে তাই বুঝতে পারছি না।’

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের কীটতত্ত্ববিদ এনতেজার ফেরদৌস চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১৭ সালের পর তিন বছর হয়ে গেল চট্টগ্রামে কোনও জরিপ চালানো হয়নি। আসলে জরিপ করার জন্য অতো লোকবল আমাদের নেই। তাই বড় একটা টিম আসে ঢাকা থেকে। গত বছর তারা আসার কথা ছিল। কিন্তু আসেননি। আমি নিজেও ঢাকায় মশক জরিপের টিমের সাথে কাজ করছি। আমাদের চট্টগ্রামে হবে হবে করেও কেন যে হচ্ছে না তাই বুঝতে পারছি না। মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয়েছে ঢাকার পরে বিভাগীয় শহরগুলোতে জরিপ চালায় হবে।’

তিনি বলেন, ‘ঢাকায় নিয়মিত হচ্ছে। গত বছরেও চট্টগ্রাম ছাড়া বিভাগীয় শহরগুলোতে জরিপ কার্যক্রম চালানো হয়। আমাদের এখানে কোন ধরনের মশার প্রকোপ বেশি বা কোন জায়গায় মশার অস্তিত্ব বেশি তা জানার জন্য জরিপটি দ্রুত চালানো দরকার।’

এসআর/এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!