‘ডেঁডারে পুড়ি ফেলন পরেদ্দে’ বলেই চট্টগ্রামে সংখ্যালঘু প্রার্থীর পোস্টারে আগুন

‘ডেডারে পুড়ি ফেলন পরেদ্দে, ডেডারে এইল্লা রাখন নো যায়’— চট্টগ্রাম নগরীর হালিশহর সবুজবাগে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের এক প্রার্থীর পোস্টার ছিঁড়ে স্তুপ করে আগুন লাগাতে লাগাতে এমন করোই আক্রোশ প্রকাশ করছিলেন কয়েকজন যুবক।

শুধু পোস্টার ছেঁড়া এবং আগুন লাগানোই নয়, সঙ্গে সংখ্যালঘু ও বিদ্রোহী প্রার্থীকে হেনস্তা করার এই ‘বাহাদুরি’ ভিডিও করেন তারা। সেই ভিডিও পরে ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে।

ফেসবুকে তুমুল আলোচিত এই ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে ১১, ২৫ ও ২৬ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রাধা রানী দেবী টুনটু মুনের পোস্টার ছিঁড়ে আগুন লাগিয়ে দিতে দিতে সাম্প্রদায়িক ক্ষোভ উগড়ে দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছেন ৪-৫ জন যুবক।

শনিবার (১৬ জানুয়ারি) মধ্যরাতে ২৫ নং রামপুর ওয়ার্ডের সবুজবাগ অংশে এই ঘটনা ঘটে।

ভিডিওতে দেখা গেছে, হলুদ জ্যাকেট পরা এক যুবক বাঁশ দিয়ে প্রথমে পোষ্টারগুলো ছিঁড়ে নামান। এরপর সবগুলো পোস্টারে আগুন লাগিয়ে দেন। এ সময় ভিডিও ধারণ করা ব্যক্তি অকথ্য ভাষায় প্রার্থীকে ও তার ধর্ম নিয়ে গালিগালাজ করে যাচ্ছিলেন।

১ মিনিট ৫ সেকেন্ডের এই ভিডিওটির ৪৩ সেকেন্ডের সময় বলতে শোনা যায়, ‘ডেডারে পুড়ি ফেলন পরেদ্দে, ডেডারে এইল্লা রাখন নো যায়।’

অনুসন্ধানে ভিডিওতে হলুদ জ্যাকেট পরা ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত হওয়া গেছে। তার নাম মো. আবু ছালেহ সুমন। তিনি স্থানীয়ভাবে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আবদুস সবুর লিটনের কর্মী হিসেবে পরিচিত। তবে মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থী রাধা রানী দেবী দাবি করেছেন, সুমন আরেক সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী হুরে আরা বিউটির কর্মী। বাকিদের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যায়নি।

এই ধরনের ঘটনার জন্য বিউটির কর্মীদের দায়ী করে রাধা রানী দেবী বলেন, ‘প্রথম থেকেই আমাকে হুমকি দিয়ে আসছেন তারা। আমি সনাতন ধর্মের বলে কি আমার ভোট করার অধিকার নেই? আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা। নিজের জাতিকে গালি খাওয়ানোর জন্য তো আর বাবারা মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমার দোষ থাকতে পারে কিন্তু তাই বলে প্রকাশ্য আমার জাতি নিয়ে তারা কেন গালাগালি করবে? আমি এই ঘটনার বিচার চাই।’

এই বিষয়ে মৌখিকভাবে হালিশহর থানা ও চট্টগ্রাম বিভাগীয় আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা হাসানুজ্জামানকে অবগত করেছেন বলেও জানান টনটু মুন।

এদিকে ১১, ২৫ ও ২৬ নং ওর্য়াডের মধ্যে ১১ ও ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটাররাও এই ঘটনায় বেশ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। ঘটনাটিকে নিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেকের মধ্যে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও পড়েছে এর ছাপ।

টনটু মুনের অভিযোগ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ মনোনীত সংরক্ষিত আসনের প্রার্থী হুরে আরা বিউটি বলেন, ‘আমি এ ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানি না। প্রথম আপনার থেকে শুনলাম।’

পোস্টার ছেঁড়ার ঘটনায় অভিযুক্ত সুমন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি সুমনকে চিনি না। আমি এ কাজে সম্পৃক্ত নই। আমি কেমন প্রার্থী তা সকলে জানে।’

এ ব্যাপারে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমি এখনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই তদন্তে যাব। পোস্টারে আগুন দেওয়ার মত ঘটনায় পুলিশ কী ধরনের পদক্ষেপ নেবে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ঘটনাটি অবশ্যই আইনবিরোধী। আমরা অভিযোগ পাওয়ার পর অভিযুক্ত ব্যক্তিকে খুঁজে বের করবো।’

বিএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!