ডিসেম্বরেই কমিটি পাচ্ছে চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড ও থানাগুলো

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ওয়ার্ড ও থানা কমিটি নিয়ে জট যেন খুলছেই না। বারবার উদ্যোগ নেওয়া হলেও স্থানীয় এবং নগরের নেতাদের অন্তর্কোন্দলের জন্য হচ্ছে না কমিটি গঠন। তবে এবার কোমর বেঁধে নেমেছে নগর আওয়ামী লীগ। যে করেই হোক, ডিসেম্বরের মধ্যেই ঘোষণা হবে কমিটি। ডিসেম্বরেই চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশ এবং কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন। মূলত এই দুই কারণে দ্রুত ওয়ার্ড ও থানা কমিটি দিতে চাইছেন নেতারা।

প্রধানমন্ত্রীর সম্মেলন নিয়ে সর্বশেষ গত ২৯ অক্টোবর জরুরি বৈঠক করেন নগর আওয়ামী লীগের নেতারা। সেই বৈঠকে আগামী ৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ সফল করার প্রস্তুতিসহ আলোচনা হয় বাকি থাকা ওয়ার্ড ও থানা কমিটিগুলোর বিষয়েও। যে ইউনিটগুলোতে কমিটি দিতে নগর কমিটিকে বেগ পেতে হবে না, সেসব কমিটিই আগেভাগে দিতে চায় নগর আওয়ামী লীগ। এই সিদ্ধান্তে একমত হয়েছেন চট্টগ্রামের রাজনীতির প্রধান দুটি বলয়ের নেতা আ জ ম নাছির উদ্দীন ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল—এমনটাই জানান মিটিংয়ে উপস্থিত থানা ও নগর আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা।

সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণের পর ইতোমধ্যে কয়েকটি ওয়ার্ডের কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। তবে নগর আওয়ামী লীগ একটিও থানা কমিটি দিতে পারেনি এখনও।

নওফেলপন্থী নেতাদের পাশ কাটিয়ে নতুন কমিটিগুলো করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ফলে বেশিরভাগ থানা, ওয়ার্ডে ঝামেলায় জড়ায় দু’পক্ষের নেতারা। এমনকি ওয়ার্ডের সম্মেলন চলাকালীন সভা পণ্ড করে দেওয়ার মতোও ঘটনা ঘটে।

এছাড়া পূর্বের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকই নতুন কমিটিতে বহাল থাকবেন—এমন একটি সিদ্ধান্তের কথায়ও বেশ বিরোধ তৈরি হয় দুটি গ্রুপের মধ্যে। তবে বিষয়টি কিছুদিন পরই সমঝোতায় আসে। এরপর চকবাজার ও ফিরিঙ্গিবাজার ওয়ার্ডে ভোটের মাধ্যমে নতুন নেতা নির্বাচন করা হয় সম্মেলনের মাধ্যমেই।

এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সামনে মহাসমাবেশ ও সেন্ট্রাল কমিটির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে আমাদের বাকি ওয়ার্ড, থানার কমিটিগুলো ঘোষণা করতে হবে। কয়েকদিনের মধ্যেই কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হবে।’

ওই জরুরি বৈঠকে এই বিষয়ে সম্মতিসূচক কথা বলেছেন শিক্ষা উপমন্ত্রী নওফেল। বিষয়টি নিশ্চিত করেন নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘নওফেল সেদিন স্পষ্ট করেই বলেছে, সংগঠনের নেতা হচ্ছেন পার্টির প্রেসিডেন্ট ও সেক্রেটারি এবং ফোরাম হলো মহানগর আওয়ামী লীগ। নগর আওয়ামী লীগের ওয়ার্কিং কমিটি যে সিদ্ধান্ত নেবেন তার বিরোধিতা করার ক্ষমতা আমার নেই।’

নঈম উদ্দিন চৌধুরী আরও বলেন, ‘আসলে নওফেলের বক্তব্যকে মানুষ ‘টুইস্ট’ করে প্রচার করে। সে কিন্তু স্পষ্ট বক্তব্যই দেয়। সে স্পষ্ট করেই বলেছে, যে ওয়ার্ড, থানা কমিটিগুলো দেওয়া সম্ভব সেগুলো যাতে সবার আগে ঘোষণা করা হয়। সে বিষয়ে উপস্থিত নেতাদের আহ্বান জানানো হয়। সমাবেশকে কেন্দ্র করে নওফেল আরও বলেন, ১০ বছর পর নেত্রী আসবেন, সমাবেশ যাতে সম্পূর্ণ হয় তার জন্য সব ধরনের কাজ করতে হবে।’

তবে আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা বলছেন, ‘৪ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের তারিখ থাকলেও চট্টগ্রামে প্রধানমন্ত্রীর সমাবেশের জন্য পিছিয়েছে নগরের সম্মেলন। তবে নগরের সেই কাঙ্ক্ষিত সম্মেলন কবে হবে, সেই দিনক্ষণ জানা নেই। সমাবেশের জন্য ৯ নভেম্বর কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে বৈঠক আছে উত্তর, দক্ষিণ ও নগরের নেতাদের। সেদিনই কেন্দ্রীয় নেতারা জানিয়ে দেবেন নগরে সম্মেলনের তারিখ।

কমিটি ঘোষণার বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নঈম উদ্দিন চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘নেত্রীর সমাবেশে যাতে নেতাকর্মীরা আনন্দ নিয়ে সমবেত হতে পারে সেজন্য কমিটিগুলো করা খুব জরুরি। তাছাড়াও ডিসেম্বরে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সম্মেলন। সেহেতু তার আগেই আমাদের নগরের সম্মেলন শেষ করতে হবে। আর আমাদের নগরের সম্মেলন শেষ করতে গেলেতো ওয়ার্ড, থানার কমিটিগুলো করে ফেলতে হবে। ৪১ ওয়ার্ডের মধ্যে যদি আমরা ২৫-৩০টির কমিটি করে দিতে পারি, তবে আমরা অনায়াসে আমাদের সম্মেলন শেষ করতে পারবো।’

নতুন কমিটিগুলো কিভাবে হবে? আগের নেতা নাকি নতুন কেউ আসবেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘আসলে যেখানের পরিস্থিতি যেরকম, সেভাবেই হবে। যদি আগের নেতাদের আবারো নেতা বানাতে অন্য কারো আপত্তি না থাকে, তবে ওনারাই সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক থাকবেন। আর আপত্তি থাকলে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচিত হবেন। তবে যেভাবেই হোক, পুরাতন-ত্যাগী নেতারা যাতে বাদ না পড়েন সেদিকে খেয়াল রাখা হবে।’

তিনি সদ্য সমাপ্ত হওয়া চকবাজার ওয়ার্ডের সম্মেলনের বিষয় উল্লেখ করে বলেন, ‘ভোটের মাধ্যমেই চকবাজার ওয়ার্ডের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত করা হয়েছে।’

এর আগে গত ২৫ মে চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে ১ অক্টোবর সম্মেলনের তারিখ ঘোষণা করেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফ। তবে সেই তারিখেও সম্মেলন করতে পারেনি নগর আওয়ামী লীগ।

সর্বশেষ ২৬ অক্টেবর চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে মহানগরীর ১৫ থানার নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুইপ আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। ওই বৈঠকে নগর আওয়ামী লীগকে ৪ ডিসেম্বর সম্মেলনের তারিখ ঠিক করে দেন তিনি। সেই হিসেবে সম্মেলন সফল করতে কাজ করা শুরু করলেও বিভাগীয় সমাবেশের কারণে ফের পেছালো কাঙ্ক্ষিত সম্মেলন।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!