ডিসিওএসকে ৫% কমিশন দিলে রেলের কাজ মেলে

অফিস বন্ধ রেখে কাজ চলে বাসায়

চট্টগ্রামের খুলশী থানাধীন পাহাড়তলীতে রেলওয়ে নিউ স্টোর ডিপোর দপ্তর সিলগালা রেখে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের জেলা সরঞ্জাম নিয়ন্ত্রক (ডিসিওএস) আরিফুজ্জামান শিকদার অফিস করেন বাসা থেকে। নিজের বাসভবনে বসেই ৫ শতাংশ কমিশনে বিক্রি করেন স্টক রিকোয়ারমেন্ট (এসআর)। কমিশন নিয়ে রেলের কোটি কোটি টাকার কাজ দেন অন্যদের। এছাড়াও অংশীদার থেকে নিজেও নেন স্টক রিকোয়ারমেন্ট (এসআর)। এভাবেই তিনি হয়েছেন প্রচুর বিত্তবৈভবের অধিকারী। একই অভিযোগ রয়েছে ওই অফিসের চিফ ফিল্ড অ্যাসিস্টেন্ট (সিএফএ) সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধেও।

ঠিকাদাররা বলছেন, ওদের কারণেই সাধারণ ঠিকাদাররা কাজ (স্টক রিকোয়ারমেন্ট কার্যাদেশ) পায় না। বেআইনিভাবে সব কাজ তারাই লগ্নি করে করে রাখেন। অফিস প্রতিদিন বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায় না অফিসেও।

রোববার (২৮ জুন) দুপুরে রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অফিস পাহাড়তলী নিউ স্টোর ডিপোতে গেলে সেটি সিলগালা অবস্থায় দেখা যায়। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দায়িত্বরত আরএনবি সদস্য বলেন, ‘সিএফএ সাইফুল ইসলাম দুপুর একটায় প্রধান গেট সিলগালা করে দিয়েছেন।’

রোববার (২৮ জুন) সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, প্রতিদিন অফিসের কর্মঘণ্টা শেষ হওয়ার পর প্রধান গেট সিলগালা করার নিয়ম। অফিস ৪টা, অথচ দুপুর একটায় কেন প্রধান গেট সিলগালা হয়েছে তার কারণ জানাতে চাননি অফিস কর্মচারীরা। সরু পকেট গেট (অন্য প্রবেশপথ) দিয়ে প্রবেশ করলে দেখা যায়, প্রবেশমুখেই নিষিদ্ধ হওয়া জীবাণুনাশক মেশিন। স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর জানিয়ে রেল ভবন থেকে সেটি সরিয়ে নিতে চিঠি দিলেও তা আরিফুজ্জামান শিকদারের নির্দেশে সচল রয়েছে। ডিসিওএস দপ্তর সিলগালা। সেটি খুলতে পারেন সিএফএর দায়িত্বে থাকা সাইফুল ইসলাম। তিনিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।

রেলের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘বেআইনিভাবে দিনের পর দিন সরকারি দপ্তর বন্ধ রেখেছেন ডিসিওএস আরিফুজ্জামান শিকদার। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অফিস পাহাড়তলী নিউ স্টোর ডিপো ছাড়াও তিনি বন্ধ রেখেছেন সরকারি ফোনও। কাউকে না জানিয়েই তিনি দাপ্তরিক কাজ সারছেন নিজ বাসভবনের নিচতলায়। এতে কাজেও স্থবিরতা এসেছে।’

নির্ভরযোগ্য কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ৩-৪ জন ঠিকাদারের মাধ্যমে বছরে কোটি কোটি টাকার কাজ গোপনে নিয়ে নেন আরিফুজ্জামান ও সাইফুল ইসলাম মিলে। তার অনুমোদন দেওয়া এসআরের মাধ্যমে করোনার সময়ে কয়েক ট্রাক ব্লিচিং পাউডার সাপ্লাই দেন জাফর নামের এক ঠিকাদার। এ ছাড়াও কাজের চাহিদাপত্র (এসআর) নিতে লাখে ৫ শতাংশ পরিশোধ করতে হয় আগেই। তাই বাসায় গিয়ে এসআর নিয়েছেন রেলওয়ের আরেক ঠিকাদার রাশেদ।

এ ব্যাপারে ফোনে সাইফুল ইসলামের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি বাসায় থেকে কাজ করছি। অফিস বন্ধ রেখে বাসায় অফিস কেন সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষই ভালো জানবেন। ৫ শতাংশ কমিশনের বিষয়ে বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই কোন মন্তব্য করতেও পারছি না।’

অন্যদিকে ডিসিওএস আরিফুজ্জামান শিকদারকে ফোন করা হলে তার নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।

দীর্ঘদিন ধরে বাসায় অফিস করে ৫% কমিশন নিয়ে এসআর দেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে বিভাগীয় প্রধান সরঞ্জাম কর্মকর্তা রুহুল কবির আজাদ বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমি মন্তব্য করতে রাজি নই। ’

পূর্বাঞ্চল রেলওয়ের জিএম সরদার সাহাদাত আলী বলেন, ‘বিষয়টি সম্পর্কে এখনই খোঁজ নিচ্ছি। সত্যতা পাওয়া মাত্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!