ডিমও গেল সিন্ডিকেটের কবলে, খরচ বেড়েছে ৫ হাজার—হাতিয়ে নিচ্ছে ৫ লাখ

দেশের বাজারে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর এবার শুরু হয়েছে ডিম নিয়ে কারসাজি। চট্টগ্রামের বাজারে এক লাফে ডিমের দাম প্রায় ৫০ শতাংশ বেড়ে গেছে। যা এ যাবতকালের মধ্যে ডিমের সর্বোচ্চ দাম। ট্রাকপ্রতি পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা খরচ বাড়লেও অসাধু সিন্ডিকেট গাড়িপ্রতি ডিমের দাম বাড়িয়েছে পাঁচ লাখ টাকা।

ডিমের অস্বাভাবিক এই দাম বৃদ্ধির জন্য জ্বালানি তেলসহ মুরগির খাবারের দাম বৃদ্ধিকে দায়ী করা হলেও আসলে এসবের কোনো সামঞ্জস্যতা নেই।

জানা যায়, টাঙ্গাইল বা ঠাকুরগাঁও থেকে চট্টগ্রামের ডিমের আড়তে আসা ২০ ফুটের একটি বড় ট্রাক প্রায় ১ লাখ ৩৪ হাজার ৪০০ ডিম বহন করে। এতে ট্রাকের ভাড়া পড়ছে ১৮ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ২২ হাজার টাকা। যা জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার আগে ছিল ১২ হাজার থেকে ১৫ হাজার টাকা।

এদিকে নগরীর ডিমের পাইকারি বাজার খ্যাত পাহাড়তলী বাজারে সরেজমিনে দেখা গেছে, এ বাজারে ডিমভর্তি ট্রাকের সারি। টাঙ্গাইল, ঠাকুরগাঁওসহ দেশের নানা জায়গা থেকে আসা এসব ট্রাকে থাকা লাখ লাখ ডিম মজুদ করা হচ্ছে ডিমের আড়তে। এসব আড়তে প্রতি একশটি ডিম বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ১৬০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা পর্যন্ত। ফলে ডিমের আড়তগুলো পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে হালিপ্রতি ডিম বিক্রি করছে ৪৬ টাকা থেকে ৫০ টাকা দরে। গত ৪/৫ দিন আগেও এ বাজারের আড়তগুলোতে ডিম বিক্রি হয়েছিল ৮৫০ টাকা থেকে ৯০০ টাকা দরে। যা হালিপ্রতি ছিল ৩৪ টাকা থেকে ৩৬ টাকা পর্যন্ত।

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার ফলে গাড়ি ভাড়া বেড়েছে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা। তবে বাজার দর অনুযায়ী প্রতি ডিমে ৪ দিনে বেড়েছে অন্তত ৫ টাকা। এতে এক গাড়ি ডিমের দাম বেড়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা। হিসেব অনুযায়ী তেলের দাম বাড়ায় ৫ হাজার টাকা বিপরীতে এক গাড়ি ডিমের দাম বেড়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

চট্টগ্রাম নগরীর খুচরা বাজারে ডিম বিক্রি হচ্ছে হালিপ্রতি ৫৬ টাকা থেকে ৬০ টাকা দরে। যেখানে প্রতিটা ডিমের দাম পড়ছে ১৪ টাকা থেকে ১৫ টাকা। অথচ ৪-৫ দিন আগেও প্রতিটি ডিম বিক্রি হয়েছিল ৯ টাকা দরে। ফলে বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় এ খাদ্য পণ্যটির দাম হুট করে এক লাফে ডিম প্রতি ৫-৬ টাকা বেড়ে গেছে। এতে চরম অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে।

চট্টলার অধিকার ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা ও সমাজকর্মী কায়সার আলী চৌধুরী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডিম হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের নিত্যদিনের খাবার। কিন্তু এ ডিমের দাম এখন মধ্যম আয়ের মানুষেরও নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। হঠাৎ করে ডিমের এত দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে সাধারণ মানুষ। অন্যান্য দ্রব্যাদি নিয়ে নানা অভিযান হলেও ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধি নিয়ে কোনো ধরনের অভিযান এখনও পরিচালিত হয়নি। এসব অসাধু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে ডিমের দাম যেন আগের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনা দরকার। এতে হিমশিম খাওয়া সাধারণ মানুষজনের মাঝে ডিম নিয়ে স্বস্তি ফিরে আসবে।’

এ বিষয়ে মেসার্স বিছমিল্লাহ ট্রেডার্স এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ উমর হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চট্টগ্রামের ডিমের আড়ৎ থেকে ডিম কিনে পাইকারি দরে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করি। আড়ত থেকে মাত্র চারদিন আগেও যে ডিম আমরা ৯০০ টাকা (প্রতি ১০০টি) দরে কিনেছিলাম। অথচ আজকে আড়ত থেকে ডিম কিনেছি ১১৮০ টাকা করে। আমাদের থেকে পাইকারি দরে ডিম কিনে খুচরা ব্যবসায়ীরা। এভাবে চক্রাকারে আড়ৎ থেকে পাইকারি দোকান, আবার পাইকারি দোকান থেকে খুচরা দোকান, পরিশেষে খুচরা দোকান থেকে সাধারণ ক্রেতাদেরকে প্রতিটি ডিম ১৩/১৪ টাকায় কিনতে হচ্ছে।’

চট্টগ্রাম নগরীর সবচেয়ে বড় বাজার পাহাড়তলী বাজারের ডিমের আড়তদার প্রতিষ্ঠান মেসার্স আবদুল সাত্তার পোল্ট্রির ব্যবস্থাপক মো. ফয়েজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা টাঙ্গাইল থেকে আড়তে ডিম এনে চট্টগ্রামের পাইকারি বাজারে বিক্রি করি। গত কয়েকদিনের মধ্যে হঠাৎ করে দেশের সকল বাজারে মতো টাঙ্গাইলের বাজারেও ডিমের দাম বেড়ে গেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ফলে গাড়ি ভাড়া বৃদ্ধি ও মুরগির খাদ্য উপাদানের দাম বাড়ার ফলে ডিমের দামের ওপর এর প্রভাব পড়েছে। এসবের কারণে আমাদেরও বেশি দামে পাইকারি বাজারে ডিম বিক্রি করতে হচ্ছে।’

এ ব্যাপারে দেশের বাজারে অন্যতম বৃহত্তম ডিম সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ডায়মন্ড এগ লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) আসাদুজ্জামান মেজবাহ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সারাদেশে উন্নতমানের ডিম সরবরাহ করে থাকি। আমাদের ডিম উৎপাদন খরচ আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পাশাপাশি মুরগির খাদ্য উপাদানের দামও বেড়ে গেছে। তাই বর্তমানে ডিমের দাম বেড়েছে।’

এমএফও/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!