পরনে তাদের গোয়েন্দা পুলিশের জ্যাকেট (ডিবি লেখা)। হাতে ওয়্যারলেস সেট, কোমরে হ্যান্ডকাপ। কখনো মাইক্রোবাসযোগে, কখনো মোটরসাইকেলে শিকার করতে বের হয় তারা। শিকার নির্ধারিত হলে পরিকল্পিত স্থানে পৌঁছার পরই তারা শুরু করে মূল কাজ।
২১ মে নগরীর খুলশী ঝাউতলায় গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে বাস থামিয়ে গণেশ সিংহ নামের এক ব্যক্তি থেকে তিন লাখ ১০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। ঘটনার শিকার ওই ব্যক্তি খুলশী থানায় মামলা করলে মামলার তদন্তে উঠে আসে আবারো একটি নাম—মামুন উদ্দিন। মামুন সুকৌশলে গা ঢাকা দিতে পারলেও তার মতো দক্ষ হয়ে ওঠেনি তার নতুন দুই সহযোগী আরিফ আর জাহেদ। খুলশী থানা পুলিশ ফটিকছড়ি থেকে জাহেদ আর আরিফকে গ্রেপ্তার করে।
সহযোগীদের তথ্যমতে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাতে পুলিশ খুলশী থানার ভাঙ্গারপুল এলাকায় মামুনকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালায়। মামুন গ্রেপ্তার হয় গুলিবিদ্ধ অবস্থায়। এ ঘটনায় তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন বলে দাবি করেছেন খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রণব চৌধুরী।
এর আগে ২০১৭ সালের ২৮ ডিসেম্বর প্রবাসী মামার পাঠানো টাকা ব্যাংক থেকে তুলে বাসে উঠেছিলেন সিটি কলেজ পড়ুয়া ইমন। নগরীর লাভলেন এলাকায় বাস থেকে নামিয়ে অটোরিক্সাযোগে ইমনকে নিয়ে যাওয়া হয় কদমতলী ওভারব্রিজের ওপর। তাকে শারীরিক নির্যাতন করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ব্রিজের ওপর ফেলে চলে যায় ডিবি পরিচয় দেওয়া ছিনতাইকারীরা। ইমন অটোরিক্সার নম্বর মুখস্থ করে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। অটোরিক্সার সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশ মামুন উদ্দিনসহ ওই চক্রের ১১ সদস্যকে আটক করে। তাদের কাছ থেকে ছিনতাই হওয়া নগদ টাকার পাশাপাশি হ্যান্ডকাপ, ওয়্যারলেস সেট, ডিবির জ্যাকেট, খেলনা পিস্তল উদ্ধার করেছিল।
জানা গেছে, মামুনের নেতৃত্বে নগর ও জেলায় কাইছার হামিদ রাজু, হারাধন দাশ ধনি, শাহেদ রানা, শওকত আলী মানিক, জাহেদুল আজম, সেলিম মাহমুদ, রুবেল, রেজাউল, জাসেদুল করিম বাবুল, মাসুদ, জাহেদ, আরিফসহ প্রায় বিশজনের একটি চক্র ছিনতাইয়ের কাজে সক্রিয় আছে।
এদের কেউ কেউ নগরীর বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ছদ্মবেশে অবস্থান নিয়ে লেনদেন করতে আসা লোকজনের গতিবিধি লক্ষ করে। লেনদেন সেরে ব্যাংক থেকে বের হলে টার্গেট নির্ধারণ করে দলের অন্য সদস্যদের জানায়। সুবিধামতো স্থানে তারা গোয়েন্দা পুলিশ পরিচয়ে শিকার তুলে নেয় এবং আরো নিরাপদ জায়গায় গিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে দ্রুত গা ঢাকা দেয়।
‘গুলিবিদ্ধ অবস্থায়’ আটক মামুন উদ্দিনের বিরুদ্ধে ফটিকছড়ি থানায় হত্যা, ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান ওসি বাবুল আক্তার। মামুন ফটিকছড়ির ফাইন্দংয়ের নুরুল আলমের ছেলে।
জানা গেছে, মামুনের বিরুদ্ধে কোতোয়ালী থানায় পুলিশের পোশাক পরে ডাকাতি করার একটি মামলা আছে। খুলশী থানায় আছে চারটি মামলা। এছাড়াও নগর এবং জেলায় মিলে আরো কিছু মামলা রয়েছে।
এফএম/সিপি