ডা. মুরাদকে ঢুকতে দেয়নি কানাডা, তুলে দেওয়া হল মধ্যপ্রাচ্যগামী ফ্লাইটে

তীব্র বিতর্কের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ পেয়ে সদ্য পদত্যাগী তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানকে কানাডায় ঢুকতে দেয়নি দেশটির বর্ডার সার্ভিস এজেন্সি। রাজধানী টরন্টোর পিয়ারসন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে জানিয়েছে কানাডাভিত্তিক বাংলাভাষী সংবাদমাধ্যম ‘নতুন দেশ’। কানাডায় বসবাসরত ডা. মুরাদের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলোও ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন।

ডা. মুরাদ হাসান এমিরেটস এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে কানাডিয়ান সময় দুপুর ১টা ৩১ মিনিটে টরন্টো পিয়ারসন্স আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামেন। এর পরপরই কানাডা ইমিগ্রেশন এবং বর্ডার সার্ভিস এজেন্সির কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যান। দীর্ঘ সময় ধরে কর্মকর্তারা তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

বিমানবন্দর সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে ‘নতুন দেশ’ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদে কানাডার ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ডা. মুরাদ হাসানের কাছ থেকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক বিভিন্ন ঘটনা সম্পর্কে জানতে চান। কর্মকর্তারা বাংলাদেশের সদ্য সাবেক এই প্রতিমন্ত্রীকে জানান, বিপুলসংখ্যক কানাডিয়ান নাগরিক কানাডায় তার প্রবেশের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়ে কানাডা সরকারের কাছে আবেদন করেছেন।

জানা গেছে, দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা ডা. মুরাদকে কানাডায় ঢুকতে দিতে অসম্মতি জানান। এরপর তাকে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের বিমানে তুলে দেওয়া হয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) রাত ১২টা ৫৮ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে (ফ্লাইট নম্বর-ইকে-৮৫৮৫) কানাডার উদ্দেশ্যে রওনা দেন ডা. মুরাদ হাসান।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গত মঙ্গলবার (৭ ডিসেম্বর) তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান পদত্যাগ করতে বাধ্য হন।

এর আগে ১ ডিসেম্বর রাতে ‘অসুস্থ খালেদা, বিকৃত বিএনপির নেতাকর্মী’ শিরোনামে এক ফেসবুক লাইভে (সরাসরিতে) যুক্ত হন মুরাদ হাসান। ‘নাহি ড্রেইনস’ নামের এক ফেসবুকারের সঙ্গে লাইভের এক পর্যায়ে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কন্যা জাইমা রহমানকে নিয়ে তিনি বিভিন্ন মন্তব্য করেন। এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জন্ম ও পরিবার নিয়েও কথা বলেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি জাইমা রহমানকে লুইচ্চা বলে অভিহিত করেন। আরও বলেন, ‘প্রতিরাতে কৃষ্ণাঙ্গ পুরুষের সঙ্গে না শুইলে নাকি তার হয় না।’

একই টকশোতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রোকেয়া হলের ছাত্র নেত্রীদের নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করেন তিনি। এরপর তার সমালোচনায় মুখর হন বিভিন্ন মহলের লোকজন। এছাড়া তার পদত্যাগেরও দাবি ওঠে। নারীনেত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের মধ্য থেকেও উঠে পদত্যাগের দাবি। তবে এর প্রতিক্রিয়ায় মুরাদ হাসান গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি এসব বক্তব্য দিয়ে কোন ভুল করেননি। এগুলো তিনি প্রত্যাহারও করবেন না কিংবা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে সরকার ও দলের ওপর থেকে কোন চাপও নেই।

এর মধ্যেই ৬ ডিসেম্বর ডা. মুরাদ হাসানের সাথে ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি ও চিত্রনায়ক ইমনের একটি কথোপকথনের কলরেকর্ড ফাঁস হয়। যা ইতোমধ্যে তুমুল আলোচনা-সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। অডিও ক্লিপটিতে শোনা যায়, ওই নায়িকাকে তাৎক্ষণিক তার কাছে যেতে বলছেন মুরাদ। নায়িকা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও হুমকি দেন প্রতিমন্ত্রী। ওই কথোপকথনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী মাহিকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়ার পাশাপাশি আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর সহায়তায় তুলে আনার হুমকি দেন। এমনকি বিকৃত কায়দায় ওই চিত্রনায়িকাকে ধর্ষণের হুমকিও দেওয়া হয় এ সময়। বিষয়টি দেশজুড়ে তীব্র সমালোচনার জন্ম দেয়।

মুরাদ হাসান জামালপুর-৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য। তিনি নবম এবং একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ-এর প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৮ সালের মন্ত্রিসভায় তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসাবে দায়িত্ব পান। এরপর ২০১৯ সালের ১৯ মে থেকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!