ডাক্তারের পরামর্শ/ কোরবানির ঈদে যেভাবে থাকবেন সুস্থ

আর মাত্র দু’দিন পরেই কোরবানির ঈদ। ঈদের আগে ও পরে পরিবেশ দূষণসহ অতিরিক্ত খাওয়াদাওয়ার কারণে মানুষের নানা রকম অসুখ হয়। সঠিক নিয়ম মেনে চললেই এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

পশুর বাজার
ঈদের আগে গ্রাম-গঞ্জে ও শহরের বিভিন্ন জায়গায় পশুর বাজার বসে। পশুর বাজারে পরিবেশ দূষণের বিভিন্ন উপকরণ থাকে। যেমন- পশুর মলমূত্র, কাঁচা ঘাস ও শুকনো খড় পঁচা, ময়লা আবর্জনা ইত্যাদি। এছাড়া পশুর নানা ধরনের রোগও থাকে। এসব দুর্গন্ধ ও নানা রোগের জীবাণু বাতাসের সঙ্গে মিশে বাজারে আসা মানুষের শরীরে (বায়ুর মাধ্যমে) প্রবেশ করে। ফলে মানুষ শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে। যাদের অ্যাজমা থাকে তাদের একটু সমস্যা বেশি হয়।

পশু জবাই
ঈদের দিন দেশের বিভিন্ন জায়গায় পশু জবাই করা হয়। পশু জবাইয়ের পর পশুর রক্ত, নাড়িভুঁড়ি, চামড়া, বর্জ্য পদার্থগুলো যদি নির্দিষ্ট সময়ে পরিষ্কার না করে, তাহলে পরিবেশ দূষিত হয়ে মানুষের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি থাকে। তখন মশা-মাছি বেড়ে যায়। সাধারণত পশু জবাইয়ের পর ৫-৬ ঘণ্টার মধ্যে এসব বর্জ্য পরিষ্কার করা উচিত। কিন্তু দেখা যায় ২৪ ঘন্টা পরও বর্জ্য থেকে যায়। সেখান থেকেই পঁচা দুর্গন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে মানুষের শরীরে নানা রোগ দেখা দেয়।

অতিরিক্ত খাওয়া
কোরবানিতে গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া জবাই করা হয়। সাধারণত সারা বছর এসব পশুর মাংসের দাম বেশি। তাই অনেকে খেতে পারে না। কিন্তু কোরবানি ঈদে সবার ঘরেই মাংস থাকে। সেজন্য সবখানে মাংস খেতে হয়। অতিরিক্ত মাংস খাওয়ার কারণে স্বাস্থ্যের মারাত্মক সমস্যা দেখা দেয়। অনেক সময় দেখা যায় এক মাস ধরে মাংস খেতে হয়। যার কারণে মানুষের শরীরে গ্যাস্ট্রিক, আলচার, হার্টের সমস্যা, ওজন বেড়ে যাওয়া, রক্তে কোলেস্টেরল বেড়ে যাওয়া ইত্যাদি সমস্যা দেখা দেয়।

বারবিকিউ
কোরবানিতে মাংসকে নানা পদে রান্না করা হয়ে থাকে। তার মধ্যে আমাদের তরুণ প্রজন্ম যারা বারবিকিউ খুব ভালোবাসে। বারবিকিউতে মাংস অতিরিক্ত আগুনে পুড়িয়ে ঝলসে নেওয়া হয়। সেজন্য মাংসে প্রি-ক্যানসার্ড জীবাণু তৈরি হয়। এ ধরনের খাবার বেশি খেলে মানুষের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।

ফ্রোজেনে সমস্যা
কোরবানির সময় বেশিরভাগ মানুষ মাংস ফ্রোজেন করে রাখে। কেউ কেউ আবার এক বছরও রেখে দেয়। এর ফলে মাংসের গুণাগুণ কমে যায়। খাদ্যের মান নষ্ট হয়ে যায়। যা স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।

করণীয়
আমাদের চারপাশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। পশুর বর্জ্য পদার্থগুলো পরিষ্কার করে ফেলতে হবে। আমাদের আশেপাশের পরিবেশকে দুর্গন্ধমুক্ত রাখতে হবে। যেন পরিবেশ দূষিত না হয় এবং রোগবালাই না ছড়ায়।

খাওয়া-দাওয়া
অতিরিক্ত তেল ও চর্বিযুক্ত মাংস পরিহার করতে হবে। পরিমাণমতো খাওয়া-দাওয়া করতে হবে। খাবারের মেনুতে নানা ধরনের শাক -সবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। পাইলস রোগীরা অল্প মাংসের সঙ্গে শাক-সবজি ও কাঁচা পেঁপে রাখতে পরেন। বেশি পরিমাণে পানি খেতে হবে। কমপক্ষে ৬ ঘন্টা ব্যবধানে খাবার খেতে হবে।

যাদের ওজন বেশি কোরবানির সময় তারা দুপুরে ও রাতে সর্বোচ্চ ৩০ গ্রাম চর্বিছাড়া মাংস খেতে পারন। তেল ও ঝোল কম দিয়ে অল্প মসলায় মাংস রান্না করতে হবে। পানি, শাক-সবজি, সালাদ বেশি খেতে হবে। অ্যাজমার রোগীরা মাংস দিনে একবার খাবে। হার্টের রোগীদের জন্য চর্বিছাড়া মাংস রান্না করতে হবে। তাদের জন্য বেশি পানিতে মাংস সিদ্ধ করে ভেসে উঠা চর্বিগুলো বাদ দিয়ে মাংস রান্না করতে হবে। খাসিরমাংস না খাওয়াই ভালো।

ডায়াবেটিস রোগীরা গরু মাংস খেতে পারে। তবে পরিমাণমতো খেতে হবে। বেশি খাওয়া যাবে না। এতে নানান সমস্যা হতে পারে।

যাদের মাংস খাওয়া নিষেধ
উচ্চ রক্তচাপ, লিভার সিরোসিস ও যাদের হার্টে ব্লক আছে তাদের মাংস না খাওয়া উচিত। মাংসে উচ্চমাত্রার প্রোটিন থাকে। যা ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ও যাদের রক্তে কোলেস্টরেলের মাত্রা বেশি তাদের রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে দেয়। এতে রক্তনালী চিকন হয়ে রক্তচাপ বা প্রেসার বেড়ে যেতে পারে। ফলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

মাংসে যা থাকে
গরুর মাংসে আছে উচ্চমাত্রার প্রোটিন ও চর্বি। ফাইবার বা আঁশের পরিমাণ খুবই কম। আবার গরুর চেয়ে মহিষের মাংসে চর্বির পরিমাণ বেশি থাকে। যা অতিরিক্ত খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে। অনেক সময় বমি বা পেটে সমস্যা দেখা দিতে পারে। আবার মহিষের মাংসের চেয়ে খাসির মাংসে ফ্যাটের পরিমাণ থাকে আরো বেশি। মাংসের চেয়ে মগজ ও পায়াতে সবচেয়ে বেশি চর্বি থাকে। যা শিশু ও গর্ভবতীদের জন্য বেশ উপযোগী। তবে যাদের বয়স চল্লিশেরও বেশি তাদের এগুলো খাওয়ার সময় একটু সচেতন হওয়া উচিৎ।

তবে পশুর মাংসে গুরুত্বপূর্ণ অনেক উপাদান থাকে। যেমন উচ্চমাত্রার প্রোটিন, ফ্যাট, ক্যালরি, মিনারেল, আয়রন ও জিংক। যা শিশুর বেড়ে উঠতে সাহায্য করে। এছাড়া গর্ভবতী মায়েদের জন্যেও গরু বা খাসির মাংস খুবই উপকারী। এছাড়া মাংসে আছে ভিটামিন এ, ডি ও বি কমপ্লেক্স।

খাওয়ার পর
মাংস খাওয়ার পর কিছুক্ষণ হাঁটতে হবে। কারণ মাংস সহজে হজম হয় না। হাঁটলে মাংস ধীরে ধীরে হজম হবে।

ডা. জসীম উদ্দিন: মেডিসিন ও লিভার রোগ বিশেষজ্ঞ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

অনুলিখন : নুসরাত জাহান ও সাইরিন সাকী

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!