ঠিকাদার লাপাত্তার দুই বছর পর পটিয়ার কৈয়গ্রাম সেতুর কাজ আবার শুরু

দ্বিতীয় দফায় ৩১ কোটি টাকার টেন্ডার

দক্ষিণ চট্টগ্রামের পটিয়ার কৈয়গ্রাম সেতুর কাজ বন্ধ করে দিয়ে ঠিকাদার লাপাত্তা হওয়ার দুই বছর পর জুলাই মাসে আবারও দ্বিতীয় দফায় হল ৩১ কোটি টাকার নতুন টেন্ডার। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রথম দফায় কাজ আটকে যাওয়ার পর এখন নতুন করে ঠিকাদার নিযুক্তির পর সেতুর কাজ শুরু হয়েছে আবারও। এর মধ্যে ভূমি অধিগ্রহণের টাকাও শোধ করা হয়েছে ক্ষতিগ্রস্থদের মাঝে।

কর্ণফুলী নদীর মোহনায় শিকলবাহা খালের ওপর নির্মিত জিরি ইউনিয়নের কৈয়গ্রাম এলাকায় অবস্থিত নির্মাণাধীন এ সেতুর কাজ প্রথম দফায় পেয়েছিল আল আমিন কনস্ট্রাকশন ও তাহের ব্রাদার্সের যৌথ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু কাজটি পাওয়ার পর সেতুর উভয় পাড়ের স্থানীয়দের সঙ্গে জমি অধিগ্রহণের টাকা নিয়ে জটিলতার কারণে কোনমতে সেতুর পূর্ব পাড়ের (পটিয়া অংশে) দৃশ্যমান কিছু কাজ হলেও সেতুর পূর্ব পাড়ের কর্ণফুলীর শাহমীরপুর অংশে কোনো কাজই হয়নি।

খালের উভয় পাড়ের জায়গার মালিকদের ভূমি অধিগ্রহণের টাকা সময়মতো পরিশোধ না করায় স্থানীয়দের চাপের মুখে পড়ে ঠিকাদার কাজ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায়। এর ফলে সেতুর পূর্ব পাড় দৃশ্যমান হলেও পশ্চিম পাড়ে বসেনি একটি পিলারও।

অভিযোগ উঠেছে, সেতুর উভয় পাড়ে যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে তার টাকাগুলো ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে সময় মতো পরিশোধ না করার কারণে সেতুটি নির্মাণে বারবার জটিলতা দেখা যাচ্ছে। অথচ চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের এলএ শাখায় ক্ষতিগ্রস্তদের টাকা এলজিইডি নির্দিষ্ট সময়ে হস্তান্তর করেছে বলে জানা গেছে। কিন্তু এলএ শাখার কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারণে ভূমি অধিগ্রহণের টাকাগুলো যথাসময়ে পরিশোধ না হওয়ায় প্রথম দফার টেন্ডার প্রক্রিয়া বাতিল করে আবারও ৩১ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে ঠিকাদার নিয়োগ করে কাজ শুরু করা হয়েছে প্রায় দুই বছর পর। এবার কাজটি এককভাবে পেয়েছে তাহের এন্ড ব্রাদার্স।

ঠিকাদার লাপাত্তার দুই বছর পর পটিয়ার কৈয়গ্রাম সেতুর কাজ আবার শুরু 1

সরেজমিনে সেতু এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, সেতুর পূর্ব পাড়ের (পটিয়া অংশে) দৃশ্যমান কাজ হলেও পশ্চিম অংশে (কর্ণফুলি) শাহমীরপুর পাড়ের অংশে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। সেতুর পূর্ব পাড়ে ৫০০ বসতঘর ও পশ্চিম পাড়ে ২০০ বসতঘর রয়েছে।

এলজিইডি ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, উপজেলার শিকলবাহা খালে পাকিস্তান আমলের স্টিলের নির্মিত একটি ব্রিজ ছিল। ওই সেতুটি কৈয়গ্রাম সেতু হিসেবে পরিচিত। স্টিল ব্রিজটি ভেঙে যাওয়ার পর স্থানীয় এলাকাবাসী নৌকা দিয়ে চলাচল করতেন। পরে উপজেলার জিরি ইউনিয়নের শিকলবাহা খালের ওপর ২০১৭ সালে এলজিইডির অর্থায়নে ৩৯০ মিটারের একটি গার্ডার সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। সেতু নির্মাণকাজের জন্য শুরুতে ৪১ কোটি ২৫ লাখ ৪২ হাজার ২৭৮ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আল-আমিন কনস্ট্রাকশন-তাহের ব্রাদার্স লিমিটেড জেভি নির্মাণকাজের কার্যাদেশ পায়। ২০১৭ সালের ৩০ ডিসেম্বর পটিয়ার স্থানীয় সংসদ সদস্য সামশুল হক চৌধুরী নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন।

এলজিইডি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আগের ঠিকাদারকে প্রায় ১৪ কোটি টাকা বিল দেওয়া হয়েছে। এদিকে অসমাপ্ত কাজের জন্য নতুন টেন্ডার প্রক্রিয়ায় আরও ৩১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

সেতুর পশ্চিম পাড়ের স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাপ দাদার ভিটেমাটির ওপর সেতুর সড়কের অংশ পড়াতে আমরা শঙ্কায় ছিলাম। তবে আমরা এতোদিন আমাদের জমির ক্ষতিপূরণের টাকা পাইনি। তাই আমরা সেতুর পশ্চিম পাড়ে কোনো কাজ করতে দিইনি। এখন আমরা সব টাকা বুঝে পেয়েছি। ঠিকাদারেরাও এখন কাজ করছে, কেউ বাধা দিচ্ছে না।

অপরদিকে সরেজমিনে সেতু এলাকায় পূর্ব পাড়ের অংশে গিয়ে দেখা যায়, চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। যে যেভাবে পারছে চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে। তবে সেতুর পূর্ব পাড়ের অংশটি বেশ দৃশ্যমান হয়েছে— যদিও সংযোগ সড়কের কাজটি এখনো পুরোপুরি শেষ হয়নি।

এলজিইডির পটিয়ার নির্বাহী প্রকৌশলী বিশ্বজিৎ দত্ত জানান, উপজেলার শিকলবাহা খালের উপর পিসি গার্ডার সেতুর বিষয়ে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (বিআইডাব্লিউটিএ) খালের ওয়াটার লেভেলের রিপোর্ট দেওয়ার পর এলজিইডির অর্থায়নে সেতুটি নির্মাণের জন্য প্রথম দফার টেন্ডার হয়। সেতুর কাজ ইতিমধ্যে ৪০ শতাংশ শেষ হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে প্রায় দুই বছর কাজ বন্ধ থাকার পর আগের টেন্ডার বাতিল করে সম্প্রতি নতুনভাবে ৩১ কোটি টাকার টেন্ডার করা হয়েছে। গত মাসে নতুন ঠিকাদার নিয়োগ চূড়ান্ত করা হয়েছে। ইতিমধ্যে তারা সেতুর পশ্চিম পাড়ের শাহমীরপুর এলাকার অংশে সংযোগ সড়কের কাজ করছে। এরপর পর্যায়ক্রমে অন্য পাড়ের মূল সেতুর কাজ করবে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান তাহের ব্রাদার্সের প্রজেক্ট ম্যানেজার প্রকৌশলী সৈয়দ নুর বলেন, কৈয়গ্রাম সেতুর প্রথম দফার টেন্ডার প্রক্রিয়ার কাজ আমরা ও আরেকটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান যৌথভাবে করে সেতুর পূর্ব পাড়ের অংশ দৃশ্যমান করেছি। এক পর্যায়ে উভয় পাড়ের স্হানীয় বাসিন্দারা জমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে ওই টেন্ডার বাতিল করে আবারও দ্বিতীয় দফায় নতুন করে টেন্ডারটি আমরা এককভাবে পাওয়ার পর চলতি মাস থেকে সেতুর পশ্চিম পাড়ের শাহমীরপুর অংশে সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করেছি। তবে কাজ করতে বেগ পেতে হচ্ছে বর্ষা মৌসুমের কারণে। বর্ষা মৌসুম শেষ হয়ে গেলে আগামী মাস থেকে পুরোদমে কাজ করতে পারব এবং নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ করতে পারব বলে আশা করছি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!