ঠিকাদার উধাও—কর্ণফুলীতে ৩ কোটি টাকার সড়ক নির্মাণের কাজ ফেলে

চট্টগ্রামের কর্ণফুলী উপজেলার হাফেজ মনির আহমদ সড়কের সংস্কার কাজ শেষ না করেই ঠিকাদারের লোকজন উধাও হয়ে গেছে। তারা সড়কটি খুঁড়ে কিছু অংশে কাজ করেছেন। এরপর ঠিকাদার সংশ্লিষ্ট লোকজনের দেখা নেই।

২৭ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে দেখা যায়, সড়ক খুঁড়ে বালুর স্তুপ ও ইটের খোয়া ফেলে রাখায় সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। ফলে মানুষের দুর্ভোগ পৌঁছেছে চরমে।

স্থানীয় সরকার বিভাগ (এলজিইডি) সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার চরপাথরঘাটা ইউনিয়নের আইআরআইডিপি-৩ প্রকল্পের অধীনে এস আলম সুগার মিল থেকে খোয়াজনগর হাফেজ মনির উদ্দিন পর্যন্ত ১০০৮ মিটার সড়কে কালভার্টসহ পাকাকরণের জন্য একটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। ওই দরপত্রে সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা হিসেবে ৩ কোটি ১৩ লাখ ৮৩ হাজার ৭৬৮ টাকায় কাজ পায় চট্টগ্রাম নগরীর মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কাজ করছেন না। এলজিইডি চিঠি দিয়েও হাজির করাতে পারছেন না তাদের। সর্বশেষ গত ১৬ আগস্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ বুঝে নিলেও পরে কাজ ফেলে উধাও হয়ে যায়।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাফেজ মনির আহমদ সড়কটি খোয়াজনগর ও ইছানগর এলাকাকে সংযুক্ত করেছে। যাতায়াতের জন্য এটি জনগুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কার্যাদেশ পেয়েই মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজ সড়কটি খুঁড়ে ফেলে। পরে সড়কের পাশে বালু তুলে রাখে। পরবর্তীতে নতুন করে আর কোনো কাজ তারা করেনি। ফলে দীর্ঘদিন ধরে সড়কে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা ইঞ্জিনিয়ার সেলিম উদ্দিন বলেন, ‘জনসাধারণের চরম কষ্ট হচ্ছে। এই রাস্তা দিয়ে চরলক্ষ্যা, জুলধা, খোয়াজনগরের হাজার হাজার মানুষ যাতায়াত করেন। তার মধ্যে বিন হাবিব গ্যাস কোম্পানী ও প্যারাগন ব্রিকস ফিল্ডের ভোগান্তি বেশি হচ্ছে। এমন ধীরগতিতে কাজ চলতে থাকলে বিন হাবিব গ্যাস কোম্পানী বন্ধ করে দিতে হবে। জনদুর্ভোগের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কয়েকবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।’

এর মধ্যে গত ২৫ সেপ্টেম্বর উপজেলা এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা কাজ বাস্তবায়ন প্রসঙ্গে নিপা এন্টারপ্রাইজকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। তাতে তিনি লিখেছেন, প্রথম চিঠি পাওয়াত ২৮ দিনের মধ্যে কাজ শুরু করার কথা থাকলেও নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হয়েছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার কোনো কাজ করেনি। পরে চুক্তি বাতিলের পত্র দেওয়া হয়।

এরপর গত ১৬ আগস্ট প্রতিষ্ঠানটি এলজিইডি অফিসের সাথে যোগাযোগ করে কাজ বুঝে নেয়। সড়ক নির্মাণে একপাশে আংশিক গাইড ওয়ালের কাজ করার পর আবারও কাজ বন্ধ রাখে তারা।

স্থানীয় কয়েকজন জানান, জনসাধারণ ও যানবাহন চলাচলে চরম বিঘ্ন ঘটায় তারা মানবন্ধন কর্মসূচীর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এলজিইডির ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। এমনকি কাজ করার উপযুক্ত পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও কোনো কারণ ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে ইচ্ছাকৃত ভাবে কাজটি বন্ধ রেখেছেন। যা চুক্তির পরিপন্থি বলেও চিঠিতে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।

কর্ণফুলী এলজিইডি অফিসের প্রকৌশলী মো. গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘বিলম্ব না করে অতিদ্রুত অবশিষ্ট কাজ যথাযথ ভাবে সমাপ্ত করার জন্য ঠিকাদারকে অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় চুক্তির শর্তানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

এ বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিপা এন্টারপ্রাইজের প্রোপাইটর মোহাম্মদ ইসমাইলের মুঠোফোনে একাধিক কল করা হলেও ফোন বন্ধ থাকায় মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

চট্টগ্রাম নির্বাহী প্রকৌশলী এ.কে.এম আমিরুজ্জামান বলেন, ‘কর্ণফুলীর হাফেজ মনির আহমদ সড়কের কাজ নির্দিষ্ট সময়ে শেষ না হওয়ায় ঠিকাদারকে বারবার চিঠি দেওয়া হয়েছে কাজ শেষ করার জন্য। কাজ শেষ না করলে নিয়ম অনুযায়ী চুক্তি বাতিল হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!