ঠাঁই হারানোর আতঙ্কে পেকুয়ার সাগরপাড়ের জেলেরা

আমাদের দুঃখ কেউ বোঝে না। নিজের জমি না থাকায় বেড়িবাঁধের পাশে ঘর বেঁধেছি। এই ঘরটি যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে আমার কোথায় থাকবো? কোথায় যাব? এভাবেই হতাশার কথাগুলো বলছিলেন পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের জালিয়াপাড়া এলাকার মেহের আলী ছেলে আব্দুল খালেক (৫০)।

তিনি বলেন, মগনামা ইউনিয়নের এই এলাকায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের মালিকানাধীন বেড়িবাঁধের পাশ্ববর্তী জমিতে শতাধিক জেলে পরিবারের সহস্রাধিক মানুষের বসবাস। পানি উন্নয়ন বোর্ডের এ জায়গায় ছিন্নমূল জেলে পরিবারগুলো যুগ যুগ ধরে বসবাস করে আসছে। কিন্তু এ জায়গাসহ পার্শ্ববর্তী আরও ৪২২ একর জমি অধিগ্রহণ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য সাবমেরিন নৌঘাটি স্থাপন কাজ করছে সরকার। এতে উচ্ছেদ হতে যাচ্ছে ওই জেলে পরিবারগুলো। ইতোমধ্যে তাদেরকে জমি ছেড়ে দিতে মৌখিকভাবে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

মঙ্গলবার (৩ ডিসেম্বর) সরেজমিন দেখা যায়, পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউনিয়নের সাগরঘেঁষা বেড়িবাঁধের ভেতরের অংশে এসব জেলে পরিবারের বসবাস। যাদের অধিকাংশই সাগরে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।

কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা মোস্তাক ও আবছারের সঙ্গে। তারা বলেন, ৪০ বছর ধরে এখানে বসবাস করে আসছি। এ জায়গা থেকে অন্যত্র গিয়ে থাকার মতো জায়গা-জমি আমাদের নেই। তাই, মাননীয় জেলা প্রশাসক ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন ‘আমাদের পূর্ণবাসন করা হোক।’

বেড়িবাঁধের জমিতে বসবাসকারীরা জানান, সম্প্রতি মগনামা ইউনিয়নে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন স্টেশন স্থাপন কাজ শুরু হলে তাদের উচ্ছেদের প্রক্রিয়া শুরু হয়। এর প্রেক্ষিতে গত ৩০ অক্টোবর মগনামা মৌজার বিএস ৯৫১৩, ৯৫১২ ও ৯৫৩০ দাগের জমিতে বসবাসরত ৭৪ ছিন্নমূল পরিবারকে অবকাঠামো বাবদ ক্ষতিপূরণসহ পুনর্বাসন প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসক বরাবর একটি এলএ মামলা করেন ভুক্তভোগীরা (০২/২০১৯-২০)। জেলা প্রশাসক এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিলে তিনি পেকুয়ার এসিল্যান্ডকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন। কিন্তু পেকুয়ার এসিল্যান্ড এখনও পর্যন্ত এ ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।

মগনামা ইউপি চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ ওয়াসিম বলেন, ‘খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে সাবমেরিন নৌঘাঁটি স্থাপন কাজ। ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ওই জেলে পরিবারগুলোকে তাদের দখলে থাকা খাস জমি ছেড়ে দিতে বলেছেন। কিন্তু ছিন্নমূল মানুষগুলোকে উচ্ছেদের পূর্বে তাদের পূনর্বাসন করা উচিত। নয়তো গৃহহীন হয়ে তাদের মানবেতর জীবনযাপন করতে হবে।

পেকুয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাঈকা সাহাদাত বলেন, ‘ছিন্নমূল মানুষগুলোকে পুনর্বাসনের ব্যাপারে দ্রুত উদ্যোগ নেওয়া হবে।’

এএইচ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!