ট্রেনের ৩০ স্পটে পাথর ছোঁড়ার মরণখেলা, চট্টগ্রামেই ৭

সুবর্ণ এক্সপ্রেসের ট্রেনটি মঙ্গলবার (৭ জানুয়ারি) বিকেল তিনটায় ঢাকা ছেড়ে চট্টগ্রাম আসার পথে রওনা হয়। সন্ধ্যা ৬টায় কুমিল্লার গোমতি ব্রিজ পার হওয়ার সময় একদল দুর্বৃত্ত হঠাৎ করে ট্রেনটি লক্ষ্য করে ৩-৪টি পাথর নিক্ষেপ করে। এতে ট্রেনের জানালার কাঁচ ভেঙ্গে দুই যাত্রীর হাতে আঘাত লাগে। এ ঘটনায় মোট ৪ যাত্রী আহত হন। তবে জানালার পাশে থাকা ২ যাত্রী বেশি আঘাত পান।

এভাবে চলন্ত ট্রেনে প্রায়ই ঘটছে পাথর নিক্ষেপের ঘটনা। পাথর ছোঁড়ার ঘটনায় রেলযাত্রীদের আহত হওয়ার ঘটনাও বাড়ছে। ঘটছে এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের সচেতনতা সৃষ্টি কিংবা কঠোর আইন প্রয়োগেও যেন বন্ধ হচ্ছে না চলন্ত ট্রেনে পাথর ছোঁড়ার মরণখেলা।

পাথর ছুঁড়ে মানুষ মারার এই মরণ খেলা বন্ধ না হওয়ার পেছনে নানা প্রতিবন্ধকতার কথা জানান পূর্বাঞ্চল রেলের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

রেল কর্তৃপক্ষের সূত্রমতে, পূর্বাঞ্চল রেললাইনে পাথর ছোঁড়ার ঘটনা বেশি ঘটে ৫ জেলায় এবং ঝুঁকিপূর্ণ ‘স্টোন থ্রোয়িং’ বা পাথর নিক্ষেপের ঘটনা বেশি ঘটে ৩০টিরও বেশি স্পটে।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, পূর্বাঞ্চল রেলের ফৌজদারহাট, সীতাকুণ্ড, কুমিরা, পাহাড়তলী, কৈবাল্যধাম, ইমামবাড়ি, কসবাসহ বেশকিছু ‘স্টোন থ্রোয়িং জোন’ বা পাথর নিক্ষেপপ্রবণ এলাকা রয়েছে পূর্বাঞ্চল রেললাইনে। ২০১৩ সালের ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থেকে ঢাকামুখী তূর্ণা নিশীথা ট্রেনটি সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী এলাকায় পৌঁছার পর বাইরে থেকে ছোড়া পাথরের আঘাতে ট্রেনের জানালার পাশে বসে থাকা চুয়েটের পুরকৌশলে স্নাতক প্রীতির মৃত্যুর ঘটনার পর এ নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

পূর্বাঞ্চল রেল সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পাথর ছুঁড়ে মারার এ ধরনের ঘটনায় সবচেয়ে বেশি জড়িত রেললাইন সংলগ্ন বস্তি এলাকার শিশু-কিশোররা। তবে অনেক ক্ষেত্রে পাথর ছুঁড়ে মারার ঘটনায় অপরাধীদের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে। রেলওয়ে পুলিশ পাথর ছুঁড়ে মারার এসব স্থান চিহ্নিত করতে পারলেও শনাক্ত করা সম্ভব হয় না এই অপরাধে জড়িতদের।

স্থানীয় প্রতিনিধিদের সহযোগিতার অভাব, যাত্রীদের অসচেতনতাসহ বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পূর্বাঞ্চল রেললাইনে অপরাধীদের শনাক্ত করা কিংবা পাথর নিক্ষেপ বন্ধ করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন পূর্বাঞ্চল রেলওয়ে সংশ্লিষ্টরা।

রেলওয়ে পুলিশ সূত্র জানায়, পাথর ছুঁড়ে মারার ঘটনা রেলওয়ে সাধারণত পুলিশ জানতে পারে কন্ট্রোল রুমের মাধ্যমে। তবে এরপরও পূর্বাঞ্চল রেল সংশ্লিষ্ট থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কিংবা অভিযোগ নেই। এ কারণে পাওয়া সম্ভব হয় না ঘটনার সঠিক তথ্য। যে কারণে অপরাধীদের শনাক্ত করতেও বিপাকে পড়তে হয়।

জানা গেছে, চলন্ত ট্রেনে পাথর ছুঁড়ে মারা বন্ধে সাপ্তাহিক, পাক্ষিক বা মাসিক সচেতনতামূলক কর্মসূচি পালন করছে সংশ্লিষ্টরা। জনসচেতনতা বাড়াতে যুক্ত করা হয়েছে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয়দের।

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) এবং রেলওয়ে পুলিশের একাধিক সূত্র বলছে, পাথর নিক্ষেপের এসব ঘটনায় জড়িত রয়েছে রেললাইন সংলগ্ন বস্তির শিশু-কিশোররা— যারা খুব নিম্ন আয়ের পেশার মানুষ। কাজেই রেলের নিরাপত্তা বিভাগের জনবল বাড়িয়ে স্টোন থ্রোয়িং জোনগুলোতে নির্মাণ করতে হবে স্থায়ী কিংবা ভ্রাম্যমাণ পুলিশ ফাঁড়ি।

১৮৯০ সালের রেলওয়ে আইনের ১২৭ ধারা অনুযায়ী চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের জন্য একজন অপরাধীর যাবজ্জীবন বা ১০ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে। এছাড়া ৩০২ ধারা মোতাবেক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে পাথর ছুঁড়ে মারার কারণে যাত্রীর মৃত্যু ঘটলে অপরাধীর মৃত্যুদণ্ডের বিধান রয়েছে। এমনকি ‘অপ্রাপ্তবয়স্ক’ কেউ যদি চলন্ত ট্রেনে পাথর নিক্ষেপের ঘটনায় জড়িত থাকে সেক্ষেত্রে বিধান রয়েছে অভিভাবককে আইনের আওতায় আনার। যদিও এসব আইনে কোনও অপরাধী শাস্তিপ্রাপ্ত হয়েছে— এমন নজির নেই।

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!