ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের পোস্টারে বাংলাদেশী মুনিরা

ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের পোস্টারে বাংলাদেশী মুনিরা 1আন্তর্জাতিক ডেস্ক : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বিশ্বের বড় বড় শহরগুলোতে অনুষ্ঠিত হয়েছে নজিরবিহীন বিক্ষোভ। পথে নেমেছেন নারীরাও। ট্রাম্পবিরোধী সিস্টার মার্চে মুখরিত হয়েছে পুরো বিশ্ব। চলমান এ বিক্ষোভের পোস্টারে জায়গা পেয়েছে মার্কিন পতাকা দিয়ে মাথায় হিজাব পরা এক মুসলিম তরুণীর ছবি। তিনি বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুনিরা আহমেদ। বিশ্বজুড়ে চলমান বিক্ষোভে ব্যবহার করা হচ্ছে মুনিরার ছবিযুক্ত এ পোস্টার।

৩২ বছর বয়সী মুনিরার বাস নিউইয়র্কের কুইন্সে। গত শনিবার (২১ জানুয়ারি) বিক্ষোভে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসেন। তখনও তিনি এ পোস্টারের ব্যাপারে কিছুই জানতেন না। মিছিল চলার সময় একজন নারী কংগ্রেস সদস্য তার দিকে একটি পোস্টার এগিয়ে দেন। জানতে চান, এতে ব্যবহৃত ছবিটি তার কি না? এসময় তিনি প্রথম জানতে পারেন তার ছবিযুক্ত পোস্টার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়েছে। উৎসাহ যোগাচ্ছে বিক্ষোভকারীদের। পরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম সারির গণমাধ্যমগুলোতে চলমান বিক্ষোভের প্রতীক হিসেবে এ পোস্টারের ছবি ছাপা হয়।

ছবিতে দেখা যায়, লাল-নীল-সাদা রঙের মার্কিন পতাকা দিয়ে হিজাব পরেছেন মুনিরা। একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন ক্যামেরার দিকে। তবে ছবিটি নতুন নয়। মুনিরা জানান, প্রায় এক দশক আগে এই ছবি তুলেছিলেন রিদওয়ান আধামি নামের একজন ফটোগ্রাফার। তিনিও কুইন্সের বাসিন্দা। নিউইয়র্ক স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে এ ছবি তোলা হয়। মূলত ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের টুইন টাওয়ার হামলার প্রতিবাদে ব্যবহারের জন্য ছবিটি তোলা হয়েছিল।

ফটোগ্রাফার রিদওয়ান বলেন, ‘ছবিটিতে একটি জোরালো বার্তা আছে। আর তা হল, আমরা মুসলিম এবং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিক। আর এটাই মার্কিন সমাজের অনন্য বৈশিষ্ট্য।’ মুনিরার ছবিযুক্ত পোস্টার

৯/১১ পরবর্তী সময়ে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে মার্কিনদের মনে মুসলিমদের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস জন্মায়। এরই প্রতিবাদ জানাতে জাতীয় পতাকা দিয়ে হিজাব পরেন মুনিরা। তার এ ছবি দিয়ে গ্রাউন্ড জিরোর (টুইন টাওয়ারের জায়গার বর্তমান নাম) সামনে প্রতিবাদ হয়। পরে একটি মুসলিম ব্লগে ছবিটি ব্যবহার করা হলে, তা অনলাইনে ভাইরাল হয়ে যায়।

ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের পোস্টারে বাংলাদেশী মুনিরা 2গত বছর এমপ্লিফায়ার ফাউন্ডেশন নামের বিজ্ঞাপনী সংস্থা ছবিটি ব্যবহার করলে এটি আরো জনপ্রিয় হয়। ট্রাম্পবিরোধী বিক্ষোভের আগে ছবিটি ব্যবহার করে পোস্টার তৈরি করেন শেফার্ড ফেইরি নামের একজন শিল্পী। তিনি সদ্য সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, মিয়ানমারের নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চিসহ বিশ্বনেতাদের ছবি দিয়ে পোস্টার বানিয়ে খ্যাতি পেয়েছেন।

শেফার্ড বলেন, ‘মুনিরার ছবিতে একটি শক্তিশালী বার্তা আছে। এটা মানুষকে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও ধর্মীয় স্বাধীনতার বিষয় মনে করিয়ে দেয়। আর এ স্বাধীনতাই মার্কিন সমাজের বৈচিত্র্য। তবে দুঃখজনক হলেও সত্যি, ডোনাল্ড ট্রাম্প ও তার প্রশাসন মার্কিন সমাজের এ বৈশিষ্ট্যকে অস্বীকার করছেন।’মুনিরার ছবিযুক্ত প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভকারী

মুনিরা বলেন, ‘আমি অন্যদের মতই আমেরিকার নাগরিক। একইসাথে আমি মুসলিম। দুটি পরিচয় নিয়েই আমি সমান গর্বিত। আমার ছবি চলমান বিক্ষোভের প্রতিকৃতি হওয়ায় আমি গর্বিত। তবে আমার প্রতিবাদ কারো বিরুদ্ধে নয়। বরং এটা জানানোর জন্য যে, এদেশে আমার অধিকার রয়েছে।’

মুনিরার মতে, মুসলিম অভিবাসীদের মার্কিন সমাজ ও অর্থনীতিতে বিশেষ অবদান আছে। কিন্তু ট্রাম্প অভিবাসী ও মুসলিম বিদ্বেষী। তিনি এসব মানুষদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে চান। কিন্তু এতে মার্কিন সমাজ তার বিশেষত্ব হারাবে।

পেশায় ভ্রমণ বিষয়ক ফিল্যান্স ফটোগ্রাফার বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত মুনিরা। জন্ম নিউইয়র্কের জ্যামাইকার কুইন্সে। এখানেই বেড়ে ওঠা। বাবা-মা ১৯৭০ এর দশকে বাংলাদেশ ছেড়ে নিউইয়র্কে পাড়ি জমান। পরে নিউইয়র্ক ছেড়ে মিশিগানে স্থায়ী হন।

প্রসঙ্গত, মুনিরার ছবিযুক্ত পোস্টার হাতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে সিস্টার মার্চ হয়েছে পুরো যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে। একই সাথে পুরো ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, জাপান, ফিলিপাইন, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের বড় বড় শহরগুলোতে নারী বর্ণবাদ ও বিদ্বেষবাদের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলেছে মানুষ।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান ও লস অ্যাঞ্জেলস টাইমস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!