টেকনাফে ৪০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার

টেকনাফে ৪০ কোটি টাকার ইয়াবা উদ্ধার 1গিয়াস উদ্দিন ভুলু, টেকনাফ : মিয়ানমারের মরণ নেশা ইয়াবা এখন গভীর বঙ্গোপসাগর ফাঁড়ি দিয়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করছে। প্রতিদিন এই নৌপথ দিয়ে ফিশিং ট্রলারে করে বস্তা বস্তা ইয়াবা পাচার হচ্ছে। ইদানিং এই অভিশপ্ত ইয়াবা পাচার এমন ভাবে বেড়ে গেছে তার কোন সঠিক সংখ্যার পরিমান কারো জানা নেই। সাগর পথে বস্তা বস্তা ইয়াবা পাচারের গোপন সংবাদের তথ্য যখন প্রশাসনের কানে আসে ঠিক তখনি এই ইয়াবা পাচার প্রতিরোধ করতে কঠোর অভিযান শুরু করে বাংলাদেশ নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, বর্ডার গার্ড বিজিবি ও র‌্যাব সদস্যরা। সেই কঠোর অভিযানের ধারাবাহিকতায় গভীর সাগর থেকে কোস্টগার্ড, র‌্যাব ও নৌবাহিনীর সদস্যরা উদ্ধার করে বস্তা বস্তা ইয়াবা। এদিকে মাত্র কয়েক দিনের ব্যবধানে সীমান্ত প্রহরী টেকনাফ ২ বিজিবি সদস্যরা গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সীমান্ত এলাকা টেকনাফের বিভিন্ন উপকুলে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে উদ্ধার করেছে প্রায় ৩০ লক্ষ ইয়াবা।

বিভিন্ন সুত্র থেকে গোপন সংবাদ নিয়ে জানা যায়, টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের বেশ কিছু চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ী গভীর বঙ্গোপসাগরের উপকুল ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসছে বস্তা বস্তা ইয়াবা। বর্তমানে সাবরাং ইউনিয়নে ইয়াবা পাচার খুব বেশি বেড়ে গেছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছে স্থানীয়রা। এলাকাবাসী সুত্রে আরো জানা যায়, সাবরাং ইউনিয়নের খুরের মুখ উপকুল দিয়ে চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা মাছ শিকারের নাম দিয়ে ফিশিং ট্রলার ব্যবহার করে মিয়ানমার থেকে নিয়ে আসছে বস্তা বস্তা ইয়াবা। বিগত কয়েক বছর আগে সাবরাং ইউনিয়নের এই এলাকাটি মালয়েশিয়া আদম পাচারের ঘাট হিসাবে পরিচিত ছিল। তারা আরো বলেন, বাংলাদেশ পুলিশ ও বিজিবি সদস্যদের কঠোর অভিযানে মালয়েশিয়া মানব পাচার বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এই এলাকাটি খুবেই শান্ত ছিল। অথচ মানব পাচারের সেই চিহ্নিত দালালরা এখন মরণ নেশা ইয়াবা পাচারে জড়িত হয়েছে। তাদের ইশারায় প্রতিদিন সাগর পথ অতিক্রম করে বাংলাদেশ সীমান্তে প্রবেশ করছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা।
বিজিবি সুত্রে জানা যায়, গতকাল ২৮ এপ্রিল শুক্রবার সকাল ১০ টার দিকে টেকনাফ সাবরাং ইউনিয়নের সমুদ্র সৈকত কচুবনিয়া এলাকার একটি পানের বরজ থেকে অভিনব কায়দায় লুকিয়ে রাখা ৪ বস্তা ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয় বিজিবি। গভীর রাতে মিয়ানমার থেকে একটি বড় ইয়াবার চালান সাবরাং কচুবনিয়া উপকুলে প্রবেশ করবে। সেই গোপন সংবাদের তথ্যমতে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ ও নবাগত অধিনায়ক লে: কর্ণেল এস এম আরিফুল ইসলাম এর নেতৃত্বে কচুবনিয়া খুরের মুখ বিওপির সদস্যরা গোপন জায়গায় অবস্থান নেয়। কিন্তু পাচারকারীরা বিজিবি উপস্থিতি টের পেয়ে সু-কৌশলে ইয়াবার বস্তা গুলো পানের বরজে লুকিয়ে রেখে চলে যায় আড়ালে। এর পর সকাল ১০ টার দিকে বিজিবি সদস্যরা বস্তা বন্ধি ইয়াবা গুলো উদ্ধার করতে সক্ষম হয়। ইয়াবা গুলো গননা করার পর ১২ লক্ষ ১০ হাজার পিস ইয়াবা পাওয়া যায়। অপরদিকে একই দিন সন্ধ্যায় টেকনাফ মডেল থানার পুলিশ সদস্যরা একই এলাকায় অভিযান চালিয়ে ১ লক্ষ ২০ হাজার পিস বস্তা বন্ধি ইয়াবা উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু এই অভিযানেও পুলিশ সদস্যরা কোন পাচারকারীকে আটক করতে সক্ষম হয়নি। এই অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন টেকনাফ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ ওসি মাইন উদ্দন খাঁন। পুলিশ-বিজিবি পৃথক অভিযানে উদ্ধার ইয়াবার সংখ্যা ১৩ লক্ষ ৩০ হাজার। এই ইয়াবা গুলোর পুলিশ-বিজিবির নির্ধারিত মুল্য ধরা হয়েছে ৪০ কোটি টাকা । তবে বিজিবি-পুলিশের হাতে আটক হওয়া সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালানটির সাথে জড়িত কোন পাচারকারীকে আটক করতে পারেনি।
অভিযানের সত্যতা নিশ্চিত করে টেকনাফ ২ বিজিবি অধিনায়ক লে: কর্ণেল আবুজার আল জাহিদ জানান, বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড বিজিবি সদস্যদের হাতে আটক হওয়া এই ইয়াবার চালানটি সর্ববৃহৎ । এর আগে এত বড় ইয়াবার চালান আমাদের সদস্যদের হাতে আটক হয়নি। তার পাশাপাশি তিনি আরো বলেন, চিহ্নিত ইয়াবা ব্যবসায়ীরা বেশি বেশি ইয়াবা পাচারের জন্য ব্যবহার করছে গভীর বঙ্গোপসাগরকে। কারন সড়ক পথে প্রশাসনের সদস্যদের কঠোর নজর দারী থাকায় এই পথ বেচে নিয়েছে পাচারকারীরা। ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে সীমান্ত প্রহরী বিজিবি সদস্যরা কঠোর অভিযান অব্যহাত রেখেছে। তার সফলতা হিসাবে আমাদের সদস্যদের হাতে ধরা পড়ছে কোটি কোটি টাকার ইয়াবা। স্থানীয়রা সহযোগিতা করলে এই ইয়াবা পাচারের সাথে কারা জড়িত। ইয়াবা ব্যবসার মুলহোতা কারা তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওয়াতাই নিয়ে আসতে পারলে এই সীমান্ত এলাকা থেকে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধ করতে আমরা আরো সফলতা অর্জন করতে পারব।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!