গিয়াস উদ্দিন ভুলু , টেকনাফ : টেকনাফে নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া ত্রাণ বিতরণ করলেন জেলা প্রশাসক আলী হোসেন। মিয়ানমার সরকারের লাগাতার জুলুম, নির্যাতনের শিকার হয়ে পালিয়ে আসা হত,দরিদ্র ৩ শত পরিবারের মধ্যে মালয়েশিয়া দেওয়া ত্রাণসামগ্রী গুলো বিতরণ করেন। কিন্তু এই ত্রাণ গুলো গ্রহন করার সময় তাদের মুখে তেমন কোন হাসি ছিলনা।
২৩ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টার দিকে টেকনাফ আনরেজিষ্ট্যট লেদা রোহিঙ্গা বস্তিতে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) ও রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির যৌথ উদ্যোগে টেকনাফ উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় জেলা প্রশাসক মো: আলী হোসেন নিজে উপস্থিত থেকে রোহিঙ্গাদের মাঝে এই ত্রাণ গুলো বিতরণের শুভ সুচনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলাম মজুমদার, আইওএম ইমারজেন্সি কর্মকর্তা শাহজাদ মজিদ, উখিয়া-টেকনাফ (সার্কেল) পুলিশ সুপার ছাউ লাউ মারমা, টেকনাফ ২ বিজিবির উপ-অধিনায়ক মেজর আবু রাসেল ছিদ্দিকী, টেকনাফ সহকারী কমিশনার (ভূমি) তুষার আহমেদ, ওসি-তদন্ত শেখ আশরাফুজ্জামান এবং টেকনাফ রোহিঙ্গা ক্যাম্প আইওএম কর্মকর্তা মাছোনা।
ত্রাণ বিতরণ করার সময় জেলা প্রশাসক আলী হোসেন বলেন, ৩ শত রোহিঙ্গা পরিবারের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এই ত্রাণ গুলো পর্যায়ক্রমে সাড়ে পাঁচ হাজার নির্যাতিত রোহিঙ্গাদের মাঝে বিতরণ করা হবে। তিনি আরও বলেন, ‘সরকার কক্সবাজার জেলায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদেরকে খুব শীঘ্রই হাতিয়া ঠেঙ্গারচরে নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ঐ চরে বসবাসের ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করা হলে তাদেরকে সেখানে নিয়ে যাওয়া হবে।
মালয়েশিয়া সরকারের দেওয়া ত্রাণসামগ্রীর মধ্যে ১৬-১৯ প্রকারের নিত্য প্রযোজনীয় খাদ্য সামগ্রী রয়েছে।
এই ত্রাণ গুলো পেয়ে লেদা রোহিঙ্গা বস্তির নির্যাতিত জরিনা বেগম কেঁদে কেঁদে বলেন, আমাদের জন্মস্থান মিয়ানমারে, আমাদের বাপ-দাদার অনেক ধন সম্পদ রয়েছে, অথচ আজ আমরা নিজের সন্তানদের মুখে অন্য তুলে দিতে এই ত্রাণ গুলো গ্রহন করছি। এইভাবে আর কত দিন, কত রাত এই ত্রাণ নিয়ে আমাদের চলতে হবে। এইভাবে অন্যের কাছ থেকে সাহায্য নিয়ে কত দিন চলব। মহিলাটি কেঁদে কেঁদে আরো বলেন, লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মিয়ানমারের নিজের বসত-বাড়ি তৈরী করেছিলাম। কিন্তু সেই লক্ষ লক্ষ টাকার বসত-বাড়ি জ¦ালিয়ে-পুড়িয়ে ছাই করে দিয়েছে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা। আজ আমরা নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। রোহিঙ্গা বস্তিতে জায়গার সংকটের অভাবে থাকতে হচ্ছে গাদা-গাদি করে। এইভাবে আর কত দিন, কত রাত থাকতে হবে একমাত্র আল্লাহ পাক জানে। তাই আমাদের দাবি মিয়ানমার সরকারকে আন্তর্জাতিক ভাবে চাপ প্রয়োগ করা হোক। আমরা যেন আমাদের জন্ম ভুমি বাপ-দাদার বিটে মাঠিতে ফিরে যেতে পারি।