টিকার অ্যাপে চবির আবাসিক শিক্ষার্থীরা নিবন্ধনে বিফল হচ্ছে, অনাবাসিকরা সারছেন সহজেই

করোনাভাইরাসের টিকার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারছেন না চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) বেশিরভাগ আবাসিক শিক্ষার্থীই। বিশ্ববিদ্যালয়ের নির্ধারিত অনলাইন ফরমে আবেদন করার পরও সুরক্ষা অ্যাপে তাদের ‘ভ্যাকসিনের জন্য নির্বাচিত নয়’ বলে জানানো হচ্ছে। অন্যদিকে আবাসিক না হয়েও অনেকে বিনা বাধায় নিবন্ধন করতে পেরেছেন।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, গেল মার্চে ইউজিসির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ও অনাবাসিক সব শিক্ষার্থীকে টিকার আওতায় আনার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সে লক্ষ্যে গত ৪ মার্চ দুই দিনের সময় দিয়ে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের পৃথক দুটি অনলাইন ফরমে আবেদন করতে বলা হয়। এতে ২৭ হাজার ৫৫০ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে টিকার জন্য আবেদন করেছে মাত্র ১৫ হাজার শিক্ষার্থী। এদের মধ্যে আবাসিক শিক্ষার্থী রয়েছে মাত্র ৪ হাজার। পরে এই তালিকা ইউজিসিতে পাঠিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে গত ১ জুলাই ইউজিসি থেকে শুধুমাত্র আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকার জন্য সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে বলা হয়।

শিক্ষার্থীরা জানান, ইউজিসি নির্দেশনা দেওয়ার পর থেকে বারবার চেষ্টা করেও তারা নিবন্ধন করতে পারছেন না। অন্যদিকে আবাসিক না হয়েও অনেকে নিবন্ধন করতে পারছেন কোন ঝামেলা ছাড়াই।

এদিকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার নামক একটি গ্রুপে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া হলের আবাসিক শিক্ষার্থী উম্মে জে মিতু নামের এক শিক্ষার্থী একটি জরিপের আয়োজন করেন। সেখানে ৭ ঘন্টায় প্রায় দুই হাজার শিক্ষার্থী অংশ নেন। সেখানে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণ করেও সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পারেননি এমন আবাসিক শিক্ষার্থীর সংখ্যা মিলেছে ৬২৮ জন। তবে অনলাইনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণ করে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পেরেছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা মাত্র ১২ জন।

অন্যদিকে অনাবাসিক হয়েও সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে পেরেছেন এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৬৪ জন। এছাড়া জাতীয় পরিচয়পত্র না থাকায় নিবন্ধন করতে পারছেন না এমন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৬৫ জন। এছাড়া আরও বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে কয়েকশত শিক্ষার্থী অংশ নেন।

এ বিষয়ে উম্মে জে মিতু চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘দুঃখজনক হলেও সত্যি, বাংলাদেশ সরকার, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের যৌথ নির্দেশনা অনুযায়ী ভ্যাকসিন প্রদানে আবাসিক শিক্ষার্থীদের প্রাধান্য দেওয়ার কথা থাকলেও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশিরভাগ আবাসিক শিক্ষার্থী ভ্যাকসিন গ্রহণ থেকে বঞ্চিত হতে যাচ্ছে। এ অবস্থায় হাজার হাজার আবাসিক শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যঝুঁকি নিরসনে ভ্যাকসিন নিশ্চিতের উদ্দ্যেশ্যে সমস্যাটি খতিয়ে দেখার জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।’

সোহরাওয়ার্দী হলের আবাসিক শিক্ষার্থী নাজমুল হুদা বলেন, ‘আমি আগে সব তথ্য দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরম পূরণ করেছি। কিন্তু ইউজিসি থেকে সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করতে বলার পর দুই দিন ধরে নিবন্ধন করার চেষ্টা করছি। কিন্তু আমি ভ্যাকসিনের জন্য নির্বাচিত নই বলে জানায়।’

আবাসিক শিক্ষার্থী না হয়েও সফলভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করা তোফায়েল নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আমি অনাবাসিক শিক্ষার্থী হলেও কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সুরক্ষা অ্যাপে নিবন্ধন করেছি। এছাড়া আমি আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরমও পূরণ করিনি।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসান বলেন, ‘এটা হয়ত সার্ভারের সমস্যা হবে। ধীরে ধীরে ঠিক হয়ে যাবে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. আবু তাহের বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবাসিক শিক্ষার্থীদের যে তালিকা পাঠানো হয়েছে, সেটি আমরা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছি। শিক্ষা মন্ত্রণালয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দিয়েছে। বাকিটা আর আমরা বলতে পারবো না।’

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!