টাকা হাতাতে আইআইইউসি নিয়ে প্রপাগাণ্ডা ছড়াচ্ছে জামায়াতপুষ্ট সংঘবদ্ধ চক্র

অভিযোগ আইআইইউসি কর্তৃপক্ষের

আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম (আইআইইউসি) যখন সব ক্ষেত্রেই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে এগিয়ে যাচ্ছে, তখন স্বাধীনতাবিরোধীদের পৃষ্ঠপোষকতায় একটি চক্র দেশের স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানটির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করতে মিথ্যা প্রপাগান্ডা ছড়াচ্ছে সুকৌশলে। এজন্য তারা অখ্যাত বিভিন্ন অনলাইন পোর্টাল ব্যবহার করছে। এইসব অনলাইন পোর্টালের কথিত সাংবাদিকদের কেউ কেউ কাল্পনিক প্রপাগান্ডা ছড়িয়ে অনৈতিক সুবিধা আদায়েরও চেষ্টা করছে। এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ তুলেছে আইআইইউসি কর্তৃপক্ষ।

দেশ ও বিদেশে বহুল প্রশংসিত প্রতিষ্ঠান আইআইইউসিকে নিয়ে এসব মিথ্যা, বানোয়াট, কাল্পনিক ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সংবাদ ও প্রপাগান্ডার প্রতিবাদ জানিয়েছেন আইআইইউসির উপাচার্য প্রফেসর আনোয়ারুল আজিম আরিফ (ডিন, আইন অনুষদ), উপ উপাচার্য প্রফেসর ড. মছরুরুল মওলা, ট্রেজারার প্রফেসর ড. হুমায়ুন কবির, আইআইইউসি বোর্ড অব ট্রাস্টের সদস্য ও ফাইন্যান্স কমিটির চেয়ারম্যান ড. ইঞ্জিনিয়ার রশীদ আহমদ চৌধুরী, আইআইইউসি মিডিয়া প্রেস পাবলিকেশন্স এন্ড এডভারটাইজমেন্ট কমিটির চেয়ারম্যান খালেদ মাহমুদ, রেজিস্ট্রার এএফএম আখতারুজ্জামান কায়সার এবং আইন অনুষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর হোসেন পাটোয়ারী।

সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা উদ্যোক্তারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, অপপ্রচারের অংশ হিসেবে সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে একটি অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদ তাদের দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর তারা বিস্মিত হয়েছেন।

তারা বলেন, আইআইইউসি’র বর্তমান প্রশাসন অত্যন্ত দক্ষতার সাথে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিবদ্ধ নিয়ম, শৃঙ্খলা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সার্ভিস রুল এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১০ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সংখ্যক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে আসছে। এ নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম বা আইনের বিন্দুমাত্র বাত্যয় ঘটেনি।

একুশে পত্রিকা নামের একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদকের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে ওই বিবৃতিতে বলা হয়, ওই ব্যক্তি তার ব্যক্তিগত আক্রোশ চরিতার্থ করতে মনগড়া, কাল্পনিকভাবে আইন অনুষদে শিক্ষকসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ বিষয়ে সংবাদ প্রচার করেছেন। অথচ মূল বিষয় হলো, আইআইইউসি প্রশাসনের কাছে বিভিন্ন ব্যক্তিকে অনৈতিকভাবে চাকরি দিতে তদবির করেছিলেন ওই সম্পাদক। তারা যোগ্য না হওয়ায় এই চাকরি দেওয়া সম্ভব হয়নি কর্তৃপক্ষের। বিভিন্ন সময় আইআইইউসি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপির কাছ থেকে অনৈতিক সুবিধা দাবি করে আসছিলেন। গত কয়েক বছর ধরে ওই সম্পাদক নিজে প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর চট্টগ্রামের চাঁন্দগাও থানার রুপালী আবাসিকস্থ বাসায় এসে আর্থিক সহযোগিতা নিয়েছেন।

এতে বলা হয়, ওই অনলাইন পোর্টালটির সম্পাদক দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প গ্রুপ এস আলম, কেএসআরএমসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে অনৈতিক আর্থিক সুবিধা নিয়ে দিতেও প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীকে চাপ দিতে থাকেন।

তারা বলেন, অনলাইন পোর্টালটির সম্পাদক তার নিজের শারীরিক অসুস্থতার জন্য একাধিকবার সাহায্য চাওয়ার পর প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী প্রতিষ্ঠিত আল্লামা ফজলুল্লাহ ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে তাকে আর্থিক সহযোগিতা দিয়েছেন। কিন্তু পরবর্তীতে আরও টাকার জন্য মাত্রাতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করতে থাকলে প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী তাকে আর যোগাযোগের সুযোগ দেননি। এরপর ঠিকাদারিসহ বিভিন্নভাবে আইআইইউসি থেকে অনৈতিক সুযোগ-সুবিধার জন্য চাপ প্রয়োগ অব্যাহত রেখেও কোনো সাড়া না পাওয়ায় একুশে পত্রিকা নামের একটি অনলাইন পোর্টালের সম্পাদক আইআইইউসি ও প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভীর পরিবারকে জড়িয়ে একাধিক বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করে।

যুক্ত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি সরকার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের প্রগতিমনা ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করার পর অতীতের মতো অনৈতিক সুবিধা দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। জামায়াতের এজেন্ডা বাস্তবায়নকারী হিসেবে খ্যাত অনলাইন পোর্টাল ও তার সম্পাদকের এহেন ঘৃণ্য ও ব্যক্তিগত আক্রোশবশত সংবাদ পরিবেশন ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮’সহ দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী অপরাধ।

সম্প্রতি শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে ওই অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত সংবাদের উদ্ধৃতি দিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়, প্রকাশিত ওই বানোয়াট সংবাদে কোথাও আইন অনুষদে নিয়োগের জন্য নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক প্রভাষক পদে সুপারিশপ্রাপ্ত তিন শিক্ষকের শিক্ষাগত যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেনি। কারণ বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন অনুযায়ী বর্ণিত তিন শিক্ষকের যোগ্যতা রয়েছে। তাছাড়া নিয়োগ বোর্ড কর্তৃক গৃহীত লিখিত এবং মৌখিক পরীক্ষায় তারা উত্তীর্ণ হয়েছেন। প্রভাষক সুপারিশপ্রাপ্তদের মধ্যে সামিউল হাসান আইআইইউসি থেকে আইন বিভাগ থেকে ৩.৭২ এবং ৩.৮৫ (আউট অব ৪.০০) পেয়ে যথাক্রমে অনার্স ও মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। মো. খাব্বাব তাকীর আইআইইউসি থেকে অনার্সে আউট অব ৪.০০ পয়েন্টের মধ্যে অর্জিত সিজিপিএ হল ৩.৮১ এবং চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্সে তিনি অর্জন করেন ৩.৯৩। এছাড়া নুসরাত জাহানের আইআইউসি থেকে অর্জিত অনার্সের ফলাফল ৩.৮৮ এবং তিনি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্সে অর্জন করেন ৩.৮৮। এই প্রার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায়ও প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হন।

এতে বলা হয়, আইআইইউসিতে বিভাগগুলোর চাহিদার প্রেক্ষিতে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী পোস্ট ক্রিয়েশন, সিলেকশন এন্ড পে ফিক্সেশন (পিএসপি) কমিটিতে অনুমোদন হয়। উক্ত কমিটির অনুমোদনের পর বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় সিন্ডিকেট সভায় অনুমোদন লাভ করে। এরপর পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী প্রার্থীদের পাঠানো আবেদনগুলো বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটিতে উত্থাপন করা হয়। এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্ভিস রুল অনুযায়ী প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই-বাছাই করে। এরপর বিভাগীয় প্ল্যানিং কমিটির সুপারিশের এই প্রার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের নির্ধারিত সিলেকশন বোর্ড কর্তৃক গ্রহণ করা লিখিত পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করে। লিখিত পরীক্ষা উত্তীর্ণরা মৌখিক পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে। এই দুটি পরীক্ষা সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে গ্রহণ করা হয়, যারা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুষদে অধ্যাপনা করছেন।সিলেকশন বোর্ডের সুপারিশটি বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপন করা হয়। সিন্ডিকেট সভায় এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। এই প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপেই বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শতভাগ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করেছে। অথচ এ নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী চক্রের প্রেসক্রিপশনমতো অযৌক্তিক ও হাস্যকরভাবে সংবাদ পরিবেশন করা হয়েছে। একইভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম-কানুন সম্পর্কে কিছুই না জেনে একাডেমিক কাউন্সিলে শিক্ষক নিয়োগ অনুমোদনের কথা উল্লেখ করা হয়। অথচ কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে একাডেমিক কাউন্সিলের অনুমোদন কিংবা অবহিতকরণের কোনো বিধানই নেই।

বিবৃতিতে বলা হয়, আইআইইউসিতে নিয়োগের একমাত্র ভিত্তি হলো যোগ্যতা। সেক্ষেত্রে নির্দিষ্ট কোন এলাকার বাসিন্দাদের কেউ নিয়োগের সকল শর্ত পূরণের মাধ্যমে যোগ্য হয়ে থাকলে তাকে নিয়োগ দেওয়া দেশের প্রচলিত আইন ও সংবিধানের পরিপন্থি কোনো বিষয় হতে পারে না।

তারা বলেন, হাস্যকর ওই মিথ্যা সংবাদে উল্লেখ করা হয় গত ২৯ জুন ‘দেওয়াল’ নামে একটি অখ্যাত পত্রিকায় আইন বিভাগসহ ১৫টি বিভাগে শিক্ষক পদে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দেন বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্ট্রার। অথচ এই দাবি যে হাস্যকর, তা দিবালোকের মতো স্পষ্ট। কারণ বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চট্টগ্রামের জনপ্রিয় ও সরকার অনুমোদিত আঞ্চলিক পত্রিকাতেই সেই নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে।

যুক্ত বিবৃতিতে আরও বলা হয়, আইআইইউসির বোর্ড অব ট্রাস্টিজের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. আবু রেজা মোহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী এমপিকে বিতর্কিত করার পরিকল্পনা সামনে রেখে মিথ্যা ওই সংবাদে দাবি করা হয়, প্রফেসর নদভী লিখিত পরীক্ষায় ৩ জনকে সর্বোচ্চ নম্বর দিতে কড়া নির্দেশ দিয়েছিলেন। অথচ এর সমর্থনে কোন প্রমাণ তো দূরের, কোন অভিযোগের সূত্রও উল্লেখ করা হয়নি।

সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিবৃতিতে প্রথিতযশা এই শিক্ষাবিদ ও শিক্ষা উদ্যোক্তারা যৌথ বিবৃতিতে বলেন, প্রমাণ ছাড়া মিথ্যা কথা লেখা কখনও সাংবাদিকতা হতে পারে না। একে বলা যায় অপসাংবাদিকতা। মূলত আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম নিয়ে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির দোসরদের ষড়যন্ত্র ও নীলনকশা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে সাংবাদিকের ছদ্মবেশে একটি চক্র অনলাইন পোর্টালের আশ্রয় নিয়ে লাগাতার মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অচিরেই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলেও বিবৃতিতে জানানো হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!