টাকা নিয়ে রোহিঙ্গাদের এনআইডি দেন চসিকের কাউন্সিলরসহ দুই কর্মকর্তা

চট্টগ্রাম নগরীতে অর্থের বিনিময়ে সনদ তুলে দেওয়া হয়েছিল চার রোহিঙ্গার হাতে। জালিয়াতির মাধ্যমে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বানাতে নেওয়া হয় মোটা অংকের টাকা। টাকা হলেই মিলবে জাতীয়তা সনদ ও জন্ম নিবন্ধনসহ ভুয়া এমবিবিএস ডাক্তারের সত্যায়িত স্বাক্ষরও। দুর্নীতি দমন কমিশন অনুসন্ধান করে এসব তথ্য জানতে পারে। এ বিষয়ে দুদক বলছে, রোহিঙ্গাদের এনআইডি তৈরিতে সহযোগিতাকারীরা হলো ওয়ার্ড কাউন্সিলর, ওয়ার্ডের সচিব ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তা। তদন্তকালে এ ওয়ার্ডে আরও রোহিঙ্গা ভোটার হওয়ার সম্ভবনাও রয়েছে।

অভিযুক্তরা হলেন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী, ওয়ার্ডের সচিব কাজল কান্তি চৌধুরী ও জন্ম নিবন্ধন সহকারী হাবীবুর রহমান।

অবৈধভাবে এনআইডি পাওয়া চার রোহিঙ্গা হলেন চট্টগ্রামের সাতকানিয়া ১২৫ এ তাহের বিল্ডিংয়ের মো. জহিরুল ইসলামের মেয়ে ইসরাত ফাতেমা। তিনি বর্তমান নগরের বন্দর থানার ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের মাইজপাড়া এলাকার মালিকা ভবনে বসবাস করেন। বান্দরবান জেলার আলীকদম এলাকার ফুটের ঝিরি গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে মোছাম্মদ মাজেদা আক্তার। তিনি বর্তমানে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের আনন্দবাজার এলাকার মিয়া কলোনির বাসিন্দা। পতেঙ্গা থানার উত্তর পতেঙ্গা এলাকার নুর মোহাম্মদের পুত্র এনামুল হক। হালিশহর থানার ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা আহমদ হোসাইনের পুত্র সেলিম উল্লাহ। পরবর্তীতে এনআইডির মাধ্যমে পাসপোর্টও বানিয়েছে এই চার রোহিঙ্গা।

অবৈধভাবে সনদ দেওয়ার বিষয়ে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের জন্ম নিবন্ধন সহকারী হাবীবুর রহমান বলেন, ‘বিষয়টি দেখতে হবে। রোহিঙ্গা সনদ কে দিয়েছে, কিভাবে পেয়েছেন? ডকুমেন্ট না দেখলে বুঝা যাবে না? ’

একই বিষয়ে এই প্রসঙ্গে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব কাজল কান্তি চৌধুরী বলেন, ‘আমরা তো স্বচ্ছতা মেনেই সনদ দিই। শুধু তাই নয়, সবার এনআইডি যাচাই-বাছাই করে মূলত সনদ দিতে সহযোগিতা করি। বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা যদি হয়ে থাকে, তাহলে করার কি আছে আমাদের?’

বিষয়টি নিশ্চিত করে ৩৮ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর গোলাম মোহাম্মদ চৌধুরী বলেন, ‘জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে আমার অজান্তে হয়তো কেউ কেউ নিতে পারে সনদ। কিন্তু ওয়ার্ডে নিয়োজিত সচিব ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তারা কি সনদ দেওয়ার সময় যাচাই-বাছাই করে না করে সনদ দিয়ে থাকলে সেটা আমার জানা নেই। গত সাম্প্রতিক ভোটার হালনাগাদ করার সময়ে সনদ জালিয়াতির প্রমাণ পাওয়ায় পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় এখানকার ১০ রোহিঙ্গা।’

দুদক জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়ার্ডের সনদ নিয়ে রোহিঙ্গারা এনআইডি বানিয়েছেন। আবার এসব এনআইডির সাহায্যে অধিকাংশ রোহিঙ্গারা পাসপোর্ট বানায়।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাম্প্রদিক এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় নগরের বেশ কয়েকজন কাউন্সিলরসহ সংশ্লিষ্ট সচিব ও জন্ম নিবন্ধন কর্মকর্তাদের তলব করা হয়েছে। যাচাই-বাছাই চলছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর মিয়ানমার থেকে কক্সবাজারে আসা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মধ্যে অনেকে টাকার বিনিময়ে জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) তৈরি করে নিতে সক্ষম হয়েছে। একই সঙ্গে দালালদের সহযোগিতায় পাসপোর্টও বানিয়েছে তারা। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার তদন্ত করতে অনুসন্ধানে যান দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এনফোর্সমেন্ট টিম। প্রাথমিক তদন্তে জালিয়াতির প্রমাণ পেয়ে অধিকতর তদন্তে অনুমতি চেয়ে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয় দুদক টিম। পরে ২২ সেপ্টেম্বর রোহিঙ্গাদের এনআইডি জালিয়াতির ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের অনুমতি দেয় দুর্নীতি দমন কমিশন।

মুআ/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!