টাকা চেয়ে স্ত্রী ও কিশোরী মেয়ের ওপর বর্বরতা, স্বামীর বিরুদ্ধে স্ত্রীর মামলা

চট্টগ্রামের চন্দনাইশে যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী ও কিশোরী সন্তানকে বেধড়ক মারধর করার অভিযোগ উঠেছে জাহাঙ্গীর আলম (৪৫) নামে একজনের বিরুদ্ধে। ঘটনার পর চট্টগ্রাম নারী ও শিশু নির্যাতন ট্রাইব্যুনাল-১ এ মামলা দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী গৃহবধূ সুমি আক্তার। তবে ওই মামলা তুলে নিতে প্রতিনিয়ত হুমকি দিয়ে যাচ্ছেন স্বামী পক্ষের লোকজন—এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী সুমি আক্তারের।

বুধবার (২০ অক্টোবর) অমানবিক নির্যাতনের মুখে পড়ে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয় চন্দনাইশের কানাইমাদারী নিদাগের পাড়ার সুমি ও তার ১৯ বছরের মেয়ে হেনা আক্তারকে। নির্যাতনের পর ভুক্তভোগীর স্বামী জাহাঙ্গীর আলম, ননদ পারভিন আক্তার ওরফে পাখি আক্তার (৪০), নাছির উদ্দিন (৪৮) এবং মো. জামালকে (৪৫) আসামি করে চন্দনাইশ থানায় এজাহার দায়ের করেছেন সুমি।

এজাহার সূত্রে জানা যায়, ‘দুই সন্তানের জননী গৃহবধূ সুমি আক্তারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা যৌতুক দাবি করেন জাহাঙ্গীর আলম। এছাড়াও বিভিন্ন অজুহাতে তার সন্তান ও তার ওপর চরম অত্যাচার নির্যাতন করছেন স্বামীসহ পরিবারের লোকজন। যৌতুকের টাকা এনে দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে গত ২০ অক্টোবর সকালে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হাতের চিড়ানো কাঠ এবং লাঠিসোটা নিয়ে মেয়ে হেনা আক্তারকে বেধড়ক মারধর করেন জাহাঙ্গীর। হেনার পায়ে মারাত্মক জখম করে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে ফেলে দেন। পরবর্তীতে ঘরের পাশের পুকুর থেকে মেয়ের চিৎকার শুনে দৌড়ে আসলে তাকেও বেধড়ক মারধর করে মারাত্মক জখম করে পালিয়ে যান।’

এজাহারে বলা হয়, আশপাশের লোকজন চিৎকার শুনে ঘটনাস্থল থেকে আহতদের উদ্ধার করে চন্দনাইশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগীর ভাই মো. শামীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ২০ বছর আগে জাহাঙ্গীর আলমের সাথে আমার বোনের বিয়ে হয়। আমার বোনের এক মেয়ে এবং এক ছেলে। কিছুদিন ধরে আমার বোনের স্বামী জাহাঙ্গীর আলম ৫০ হাজার টাকা এনে দিতে বারবার বোনকে বাবার বাড়িতে আসতে বলেন। বাবার বাড়ির আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় বোন টাকা আনতে পারবে না বলে জানান। এরপর থেকে আমার বোন, কলেজ পড়ুয়া ভাগ্নি এবং ভাগিনার ওপর নির্যাতন শুরু করেন।

তিনি বলেন, ‘একপর্যায়ে গত ২০ অক্টোবর সকালে আমার বোন ঘরের কাজে পুকুরে গেলে ওই সময়ে হঠাৎ বোনের স্বামী, ননদ, ননদের স্বামী, ভাসুররা মিলে কাঠের লাঠি এবং তক্তা দিয়ে আমার ভাগ্নিকে বেধড়ক মারধর করে মাটিতে ফেলে দেয়। ভাগ্নির চিৎকার শুনে আমার বোন ঘটনাস্থলে আসলে আমার বোনকেসহ আবার বেধড়ক মারধর করে ডান পা এবং হাত ভেঙে দেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বোন এবং ভাগ্নির চিৎকারে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে চন্দনাইশ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে রেফার করেন। আমার বোন এবং ভাগ্নি বর্তমানে চমেক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।’

চন্দনাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাছির উদ্দিন সরকার বলেন, ৫০ হাজার টাকা যৌতুকের দাবিতে স্ত্রী-সন্তানকে বেধড়ক মারধর করে ঘর থেকে বের করে দেন স্বামী ও স্বামীর পরিবারের লোকজন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী গৃহবধূ স্বামীসহ চারজনকে অভিযুক্ত করে মামলা দায়ের করেন। স্ত্রীর দায়ের করা যৌতুকের মামলা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএস/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!