টাকার লোভ—গলাটিপে মৃত্যু নিশ্চিত করে স্বামী, মুখ চেপে ধরেন মামা

মামা মনির চেপে ধরেন মুখ। আর স্বামী ফরহাদ টিপে ধরেন গলা। এভাবে দুইজন মিলে হত্যা করে জেসমিনকে। গত ২ অক্টোবর আকবরশাহ থানার হারবাতলী গ্যাস লাইনের পাশের ঝোপ থেকে যে গলিত লাশ উদ্ধার করেছিল পুলিশ, সে লাশটি হল পোশাক শ্রমিক জেসমিনের।

এর আগে ২১ সেপ্টেম্বর স্বামী ফরহাদ ও তার মামা মনির তাকে গলা টিপে হত্যা করেছিল। এ ঘটনার পর অভিযানে নেমে নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার মাউরাদি গ্রাম থেকে পুলিশ আটক করে ফরহাদকে। ফরহাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী খুনে সহায়তাকারী তার মামা অজিউল্ল্যাহ সেলিম প্রকাশ মনিরকেও আটক করে। মামা-বাগিনা দুইজনই শনিবার (৩১ অক্টোবর) চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিনের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।

ভোলার লালমোহন উপজেলার চরভুতা ইউনিয়নের ইদ্রিস মিয়ার মেয়ে জেসমিনের সাথে বিয়ে হয় একই উপজেলার পাশ্ববর্তী ধলী গৌরনগর ইউনিয়নের ইব্রাহীমের। দুই ছেলে আর এক মেয়ে সন্তানের সংসার রেখে ইব্রাহীম আরেক মেয়েকে বিয়ে করে চট্টগ্রাম ত্যাগ করেন। আর অসহায় জেসমিন পোশাক শ্রমিক হিসেবে যোগ দেন চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট এলাকার মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রাঃ) লিমিটেডে।

চলতি বছরের শুরুতে জেসমিনের সাথে মুঠোফোনে পরিচয় হয় ভোলার আরেক যুবক ফরহাদের সাথে। পরিচয় এবং ঘনিষ্ঠতার সূত্রে ফরহাদ বুঝতে পারে জেসমিনের কিছু জমা টাকা আছে। সেই টাকার লোভে এক সন্তানের জনক ফরহাদ বিয়ে করেন জেসমিনকে। জেসমিনের সংসারেও ছিল ১৫ ও ৭ বছরের দুই ছেলে, ৩ বছরের এক মেয়ে। সকাল থেকে সন্ধ্যা জেসমিন পোশাক কারখানায় থাকতে হয়। মেয়ে লালনপালনে তার সমস্যা হওয়ায় মেয়েকে রেখে আসেন ভোলায় জেসমিনের মায়ের কাছে।

প্রায় ৪ মাস আগে ৩০ বছরের জেসমিন দ্বিতীয় স্বামী হিসেবে গ্রহণ করেন ২৬ বছরের যুবক ফরহাদকে। কিন্তু সুখের আশায় বিয়ে করলেও প্রাণটাই কেড়ে নেয় ঘাতক ফরহাদ। আর জেসমিনকে হত্যা করে লাশ চট্টগ্রাম নগরীর আকবরশাহ থানার হারবাতলী গ্যাস লাইনের দক্ষিণে ঝোপের মধ্যে ফেলে ফরহাদ আত্মগোপন করেন নারায়নগঞ্জে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে আকবরশাহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. জহির হোসেন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২ অক্টোবর স্থানীয় এক যুবকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আকবরশাহ থানার হারবাতলী গ্যাস লাইনের পাশের ঝোপ থেকে একটি গলিত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উপ-পরিদর্শক মোহাম্মদ ছায়েম লাশের আশপাশের ঝোপ-ঝাড় খুঁজে কিছু আলামত উদ্ধার করেন। আলামত দেখে নিহত জেসমিনের ভাই মনির ও ছেলে শাহাদাত তার লাশ শনাক্ত করেন। প্রথমে অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারে একটি মামলা দায়ের হয়। পরে জেসমিনের ভাই মনির বাদি হয়ে আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।’

জেসমিনের ভাই মনির হোসেনের দায়ের করা মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, অন্যদিনের মতো জেসমিন বেগম ২১ সেপ্টেম্বর সকাল সাড়ে ৭টায় কালুরঘাট এলাকার মার্ক ফ্যাশন ওয়্যার (প্রা.) লিমিটেডে চাকুরির উদ্দেশ্যে ঘর থেকে বাহির হন। সাধারণত রাত ৮টায় জেসমিন ঘরে ফিরলেও সেদিন তিনি ফিরে আসেননি। জেসমিনের ছেলে শাহাদাত মায়ের ফোন বন্ধ পেয়ে মনির হোসেনকে জানান। আকবরশাহ থানা থেকে জেসমিনের পরিচয় জেনে তার কর্মস্থলে যোগাযোগ করা হলে মার্ক ফ্যাশন থেকে তার পরিবারের সদস্যদের বিষয়টি জানানো হয়। তখন জেসমিনের ভাই ও মামলার বাদী মনির হোসেন আকবরশাহ থানায় এসে আলামত দেখে লাশ সনাক্ত করেন।

আদালত সূত্রে জানা গেছে, খুনের দায় স্বীকার করে দেওয়া জবানবন্দীতে উঠে আসে, ফরহাদ ২১ সেপ্টেম্বর রাত ৮টায় তার মামা মনিরের বাসার পাশে জেসমিনের সাথে ধস্তাধস্তি করার সময় তার মামা দেখেন। ভাগিনা ফরহাদ তার মামা মনিরকে ডেকে জেসমিনের মুখ চেপে ধরতে বলেন। জেসমিন যাতে চিৎকার করতে না পারে তা নিশ্চিত করতে মনির তার মুখ চেপে ধরেন, আর জেসমিনের স্বামী ফরহাদ নিজ হাতে গলা টিপে তার মৃত্যু নিশ্চিত করেন। মৃত্যুরপর জেসমিনের লাশ ঝোপের মধ্যে ফেলে ফরহাদ আত্মগোপন করেন নারায়নগঞ্জ।

আদালতে খুনের দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দেওয়ার পর আদালত ফরহাদ ও মনিরকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন।

এফএম/এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!