টাকার বিনিময়ে ‘পদোন্নতি’ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে— অভিযোগ নিয়ে মতামত জানতে চেয়েছে মন্ত্রণালয়

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে ঘটছে ‘অস্বাভাবিক’ সব কাণ্ড। এ বিষয়ে অভিযোগ পেয়ে খোদ স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকেই এ বিষয়ে ‘মতামত’ চেয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।

সম্প্রতি এমন দুটি ‘অতিরিক্ত দায়িত্ব’ দেওয়া নিয়ে তোলপাড় তৈরি হয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগে। গত ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে থাকাকালে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সবেতনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেন সচিব খালেদ মাহমুদ। এরপর ২৬ মে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খাঁনকে একই বিভাগে সহকারী প্রকৌশল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেন একই সচিব খালেদ মাহমুদ। এই দুই ক্ষেত্রেই ছুটিতে ছিলেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম। হঠাৎ পদোন্নতি দানে এই ছুটির সুযোগ নেওয়া হয়েছে— এমন অভিযোগ করা হয়েছে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির পাঠানো চিঠিতে।

এদিকে ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় অভিযোগের বিষয়ে মতামত জানতে চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে।

বুধবার (৭ সেপ্টেম্বর) স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির অভিযোগ উদ্ধৃত করে বলা হয়, ‘উপর্যুক্ত বিষয়ের পরিপ্রেক্ষিতে জানানো যাচ্ছে যে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশল (বিদ্যুৎ) উপ-বিভাগের অধীনে জনাব এনামুল হক (পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি ব্যতিরেকে) বাতি পরিদর্শক হিসেবে অস্থায়ীভাবে যোগদান করেন। কয়েক বছর পর তাকে বাতি পরিদর্শক পদে স্থায়ী করা হয়। পরবর্তীতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন হতে অনিয়মতান্ত্রীকভাবে উপ-সহকারী (বিদ্যুৎ) চলতি দায়িত্ব দেয়া হয়। বর্তমানে আবার তাকে বিধি বহিঃভূতভাবে প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার অনুপস্থিতিতেই সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) এর অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। অথচ দায়িত্ব প্রদানকালে তার মুল পদ বাতি পরিদর্শক উল্লেখ করা হয়নি। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রেডেশন তালিকাতেও তার নাম নেই। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নিয়োগ বিধিমালায় এ জাতীয় দায়িত্ব প্রদানের বিধান না থাকা সত্ত্বেও কৌশলে অর্থের বিনিময়ে তাকে এ দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে। যার ফলে কর্পোরেশনে কর্মরত উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে মারাত্মক ক্ষোভ ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে। তাই বাতি পরিদর্শক জনাব এনামুল হক-কে সহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রদানের অফিস আদেশটি বাতিলপূর্বক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সূত্রোস্থ পত্রে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘এমতাবস্থায়, বর্ণিত বিষয়ে মতামত প্রদানের জন্য পত্রের অনুলিপি এতদসঙ্গে নির্দেশক্রমে প্রেরণ করা হল।’

জানা গেছে, সনদ জালিয়াতিসহ নানা অভিযোগ থাকার পরও নিয়মবর্হিভূতভাবে সম্প্রতি অস্থায়ীভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খাঁনকে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়। ‘নিয়ম না মেনে’ দেওয়া এমন সিদ্ধান্তে বিদ্যুৎ বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

২০১৩ সালের ৮ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খানসহ মোট চারজনকে অস্থায়ী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সেখানে আমির আবদুল্লাহ খানের অবস্থান ছিল সিরিয়ালে ৪ নম্বরে। ওই অস্থায়ী নিয়োগে যোগদানের সময় তার সার্টিফিকেটের বয়স ৩০-এর মধ্যে থাকা বাঞ্ছনীয় হলেও জন্মসনদ অনুসারে তার বয়স উল্লেখ ছিল ৩৭ বছর।

অভিযোগ রয়েছে, আমির আবদুল্লাহ খান ডিপ্লোমা পাশ না করেও ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগদানের সময় ভুয়া সার্টিফিকেট জমা দেন। ২০১৬ সালে স্পেশাল পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ২০১৮ সালে তিনি ডিপ্লোমা পাশ করেন। ওই পাশের সার্টিফিকেট হাতে পান ২০১৯ সালে। বিশেষ বিবেচনায় উত্তীর্ণের সার্টিফিকেট তিনি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে জমা করেন ২০২১ সালে।

২০২২ সালের ২৬ মে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে অস্থায়ীভাবে নিয়োজিত বিদ্যুৎ প্রকৌশল বিভাগের এই উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খাঁনকে একই বিভাগে সহকারী প্রকৌশল হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেন সচিব খালেদ মাহমুদ। ওই সময় ছুটিতে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম।

এর আগে ২০০৯ সালের ৪ এপ্রিল বিদ্যুৎ বিভাগের বাতি পরিদর্শক মো. এনামুল হককে সবেতনে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চলতি দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদ। চলতি বছরের ৭ এপ্রিল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছুটিতে থাকাকালে উপসহকারী প্রকৌশলী থেকে সবেতনে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে আদেশ দেন সচিব খালেদ মাহমুদ।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব খালেদ মাহমুদকে একাধিকবার মুঠোফোনে কল করেও সাড়া মেলেনি।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শহীদুল আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আজ বুধবার এনামুল হকের চলতি দায়িত্ব বাতিলের ব্যাপারে আদেশ পেয়েছি। এ ধরনের আদেশ পাওয়া আরও কেউ থাকলে তাদের ব্যাপারেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। এককথায় নিয়মবর্হিভূতভাবে কারও এখানে দায়িত্ব পালনের সুযোগ নেই।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!