‘টাকার খনি’ সাতকানিয়া পৌরসভার সেই ২ কর্মকর্তা রংপুর ও দিনাজপুরে বদলি

তিন দিনের মধ্যে যোগ না দিলে স্ট্যান্ডরিলিজ

দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া চট্টগ্রামের সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশকে রংপুর জেলার হারাগাছ পৌরসভায় এবং হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা এএইচএম আলমগীরকে দিনাজপুর পার্বতীপুর পৌরসভায় বদলি করা হয়েছে।

বুধবার (১৪ অক্টোবর) স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের পৌর-১ শাখার উপসচিব মোহাম্মদ ফারুক হোসেনের স্বাক্ষরিত এক আদেশে এই বদলি করা হয়েছে।

সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশ ও হিসাবরক্ষক এএইচএম আলমগীরের বিরুদ্ধে ব্যাংক একাউন্ট ছাড়াও নগদে কোটি কোটি টাকার লেনদেনের এমন গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। অবৈধ এই লেনদেনের ‘স্বচ্ছতা’ রাখতে গিয়ে দুজনে আবার খুলেছেন যৌথ ব্যাংক একাউন্টও। অথচ কোটি কোটি টাকার লেনদেন করা এই দুজনের মধ্যে মধ্যে সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত ৭ম গ্রেডভুক্ত এবং হিসাবরক্ষক আলমগীর ১২তম গ্রেডভুক্ত কর্মচারী।

গত ১ অক্টোবর ‘সাতকানিয়া পৌরসভার দুই কর্তার ‘টাকার খনি’, যৌথ একাউন্টেই কোটি কোটি টাকার লেনদেন’ শিরোনামে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

এদিকে স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন এবং সমবায় মন্ত্রণালয়ের আদেশে সাতকানিয়া পৌরসভার হিসাবরক্ষক কর্মকর্তা এএইচএম আলমগীরকে ১৮ অক্টোবর দিনাজপুর পার্বতীপুর পৌরসভায় যোগদান করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। অন্যথায় ১৯ অক্টোবর থেকে স্ট্যান্ডরিলিজ হিসেবে গণ্য হবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়।

একইভাবে সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশকে ১৮ অক্টোবর রংপুরের হারাগাছ পৌরসভায় যোগদান করতে বলা হয়েছে।

অল্প বেতনের এই দুই সরকারি কর্মকর্তার আবার আছে যৌথ ব্যাংক একাউন্টও। সেই একাউন্টে ২২ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২৯ লাখ টাকা। অন্যদিকে হিসাবরক্ষকের ব্যক্তিগত একাউন্টে গত কয়েক বছরে ঢুকেছে মাত্র ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা! আবার সহকারী প্রকৌশলীর বৃদ্ধা মায়ের একাউন্টেও লেনদেন হয়েছে কয়েক কোটি টাকার। এ তো গেল স্বনামে পাওয়া একাউন্ট। বেনামে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে খোলা ব্যাংক একাউন্টেও বিস্তর লেনদেন করেছেন গুণধর এই দুই কর্মকর্তা। সবমিলিয়ে অন্তত অর্ধশত কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে দুজনের বিভিন্ন একাউন্টে— এমন দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা।

জানা গেছে, এনসিসি ব্যাংক কেরানীহাট শাখায় সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশ এবং হিসাবরক্ষক এএইচএম আলমগীরের যৌথ একাউন্টে (নম্বর ০০৫৮০৩২০০০১২৯০) ২০১৮ সালের ২৯ জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর পর্যন্ত ২২ মাসে লেনদেন হয়েছে ৩ কোটি ২৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮১৭ টাকা। এনসিসি ব্যাংকের ওই শাখায় আলমগীরের ব্যক্তিগত একাউন্টে (নম্বর ০০৫৮০৩১০০০৯৫২৪) ২০১৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে চলতি বছরের ২১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জমা হয়েছে ৪ কোটি ৪৯ লাখ ২০ হাজার ৪৮৫ টাকা। একই সময়ে উত্তরা ব্যাংক লোহাগাড়া শাখায় সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশের মা শোভা রানী দাশের নামে গড়ে তোলা ‘শোভা এন্টারপ্রাইজের’ একাউন্টে কোটি কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে।

এছাড়া জানা গেছে, সাতকানিয়ার কেরানীহাট ও লোহাগাড়ায় দুজনেরই ব্যক্তিগত ও ভিন্ন ভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে একাধিক ব্যাংক একাউন্ট। সেখানেও অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

নকশাকারক হিসেবে লামা পৌরসভায় চাকরিজীবন শুরু করা বিশ্বজিত দাশ বর্তমানে সাতকানিয়া পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী। অন্যদিকে সাতকানিয়া পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে হিসাবরক্ষক পদে চাকরি করে আসছেন এএইচএম আলমগীর। দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া পৌরসভায় একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে কর্তাব্যক্তিদের প্রশ্রয়ে দুজনে গড়ে তুলেছেন অবিচ্ছেদ্য সিন্ডিকেট।

জানা গেছে, সহকারী প্রকৌশলী বিশ্বজিত দাশ এবং হিসাবরক্ষক এএইচএম আলমগীর দীর্ঘদিন ধরে সাতকানিয়া পৌরসভাভিত্তিক ঠিকাদারি কাজ ছাড়াও বিভিন্ন কাজ নিয়ন্ত্রণ করে আসছেন। বর্তমানেও চট্টগ্রামের সাতকানিয়া-লোহাগাড়া ছাড়াও বান্দরবান ও কক্সবাজারে তাদের কোটি কোটি টাকার ৮টি ছোট-বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। প্রকল্পগুলো হলো সাতকানিয়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (নতুন ভবন), মডেল মসজিদ বান্দরবান বালাঘাটা, সাতকানিয়া পৌরসভা ২নং ওয়ার্ডে আরসিসি সড়ক নির্মাণ, কক্সবাজার পৌরসভার আরসিসি ড্রেন, সাতকানিয়া পৌরসভার কাশিমবাড়ি পুকুর রিটেইনিং ওয়াল, সাতকানিয়া পৌরসভার কাশিমবাড়ি বদ্দাপাড়া আরসিসি সড়ক ৫নং ওয়ার্ড, সাতকানিয়া পৌরসভার মধ্যম ছিটুয়াপাড়া আমিন এসবি বাড়ি আরসিসি সড়ক এবং স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অধীনে লোহাগাড়া ব্রিকফিল্ড সড়কের নির্মাণ কাজ।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!