টাকায় টান পড়ায় সপ্তাহে ২ দিন সশরীর ক্লাশ রাঙামাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে, গাড়িও চলছে কম

বার্ষিক বাজেটে সংকট ও জ্বালানির তেলের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বেকায়দায় পড়েছে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি)। এমন পরিস্থিতিতে কৃচ্ছ্রসাধনের সিদ্ধান্ত নিয়ে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে ৫ দিন সশরীর ক্লাস কমিয়ে দুদিন করা হয়েছে। বাকি তিনদিন অনলাইনে ক্লাস নিলেও এ ব্যাপারে কোনো লিখিত নোটিশ দেয়নি প্রশাসন। এছাড়া ক্যাম্পাসের পরিবহন বাসগুলোকে সপ্তাহের ৫ দিন চলাচলের সিডিউল পরিবর্তে দুই দিনে আনা হয়েছে। ৫ দিনের অফিস করা হয়েছে ৪ দিনে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, গত বছরের ডিসেম্বর থেকে সপ্তাহে ৫ দিন শরীরে ক্লাসের পরিবর্তে দুইদিন ক্লাস নেওয়ার কথা জানান সংশ্লিষ্ট বিভাগের শিক্ষকরা। বাকি তিনদিন অনলাইনে ক্লাস নেওয়ার কথা বলা হলেও এ ব্যাপারে কোনো নোটিশ দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সিদ্ধান্তের পর থেকে সপ্তাহের প্রতি রোববার ও বুধবার ক্যাম্পাসে সশরীরে ক্লাস নিচ্ছে বিভাগগুলো। বাকি সোম, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার অনলাইনে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে। যে দুইদিন ক্লাস সশরীরে নেওয়া হচ্ছে, সেই দুইদিন ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থী পরিবহনের চারটি বাস চলাচল করছে। বাকি দিনগুলোতে পরিবহনও বন্ধ থাকে।

কয়েকটি ব্যাচের ক্লাস প্রতিনিধিরা (সিআর) জানান, মূলত ডিসেম্বর মাসের শুরুর দিক থেকেই সপ্তাহে দুদিন সশরীরে ক্যাম্পাসে পাঠদান ও তিনদিন অনলাইন ক্লাসের কথা জানায় বিভাগীয় শিক্ষকরা। কারণ হিসেবে বলা হয়, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর থেকে বাসের পরিচালনা খরচ প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায়। এ কারণে তেলের পাম্পগুলোতে কয়েক লাখ টাকা বকেয়া হয়ে গেছে। পরিস্থিতি সামলাতে সপ্তাহে দুইদিন ক্লাস নেওয়া হচ্ছে সশরীরে। বাকি ৩ দিন অনলাইনে ক্লাস হচ্ছে এখন। এর মধ্যে প্রতি সপ্তাহের রোববার ও বুধবার ক্লাস হয়। মূলত গত বছরের ৪ ডিসেম্বর থেকেই এই নিয়ম চলছে।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও পরিবহন সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, রাবিপ্রবি প্রশাসনের শিক্ষার্থীদের জন্য চারটি পরিবহন বাস রয়েছে। এর মধ্যে তিনটি মিনিবাস ও একটি বড় বাস রয়েছে। ২০২২ সালের ডিসেম্বর থেকে ৫ দিন পরিবহন চলাচল সিডিউল কমিয়ে দুইদিনে করা হয়েছে। বাকি তিনদিন ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থী পরিবহন বাসগুলো বন্ধ থাকছে। অন্যদিকে সপ্তাহের ৫ দিন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস ডিউটি কমিয়ে চারদিনে করায় প্রতি বৃহস্পতিবারও ক্যাম্পাস বন্ধ থাকছে। তবে এই সংকট কাটাতে হলে আগামী অর্থবছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারা জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধাবস্থার কারণে জ্বালানি মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনের জ্বালানি ব্যয় ৬০ শতাংশের বেশি বেড়েছে। এর মধ্যে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে পরিবহনখাতের জ্বালানি ব্যয় ধরা হয়েছে কেবল ১৭ লাখ টাকা। এছাড়া গত ২০২১-২২ অর্থবছরে জ্বালানি খাতবাবদ রাবিপ্রবি প্রশাসনের ৬ লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। চলতি অর্থবছরের জ্বালানি বাজেট থেকেও কৃচ্ছ্রসাধণের জন্য ২০ শতাংশ অর্থ কেটে নিলে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পায় কেবল সাড়ে ১৩ লাখ টাকার মতো। পরিবহনখাতের হিসাবে প্রতি মাসে ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা মতো জ্বালানি ও পরিবহনখাত বাবদ ব্যয় হয়ে থাকে। সেখানে বার্ষিক বাজেটে ১৭ লাখ টাকা হওয়ায় অর্থ সংকটে কৃচ্ছ্রসাধনের উদ্যোগ নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

২০০১ সালে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রাবিপ্রবি) স্থাপিত হলেও বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাকার্যক্রম শুরু হয় ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অষ্টম ব্যাচের শিক্ষার্থীরা অধ্যয়নরত। শুরুতে ম্যানেজমেন্ট এবং কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ চালু হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স ও ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগ চালু হয়েছে। এর মধ্যে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে অষ্টম ব্যাচ, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগে তৃতীয় ব্যাচ ও ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগ দ্বিতীয় ব্যাচ ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে ম্যানেজমেন্ট অ্যান্ড কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে প্রতি ব্যাচে ৫০ জন শিক্ষার্থী, ট্যুরিজম অ্যান্ড হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট, ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রণমেন্টাল সায়েন্স ও ফিসারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগ ২৫ জন করে শিক্ষার্থী রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনখাতের কৃচ্ছ্রসাধন প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (ভিসি) ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে বৈশ্বিক মন্দা চলছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি হওয়ায় আমাদের জ্বালানি ব্যয় বেড়েছে সর্বনিম্ন ৬০ শতাংশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনে সিডিউল কমিয়ে দুই দিনে নিয়ে এসেছি। যে কারণে সপ্তাহে দুইদিন সশরীরে পাঠদান ও তিনদিন অনলাইনে ক্লাস চলবে। অন্যদিকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস একদিন কমিয়ে চারদিন করা হয়েছে। অফিস ও সশরীরে পাঠদান কমলেও আমরা অনলাইনের মাধ্যমে পূর্ণোদ্যমে কাজ করে যাচ্ছি।’

কবে নাগাদ এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব— এমন প্রশ্নের জবাবে ড. সেলিনা আখতার বলেন, ‘আশা করছি আগামী বছর এই সংকট কেটে যাবে। আমরা ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন বাজেট সংকটের বিষয়টি জানিয়েছে। রাবিপ্রবি আগামী অর্থবছর থেকে পরিবহন খাতের বাজেটে ৪৫ লাখ টাকা বরাদ্দ পেতে পারে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!