‘টাকাখেকো’ পিকে হালদারের ৭৪ কোটি টাকা এসেছিল চট্টগ্রামের ব্যাংক একাউন্টেও

সাতটি চেকের মাধ্যমে অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের একাধিক ঋণ হিসাব থেকে ১১ কোটি টাকা জমা হয়েছিল চট্টগ্রামের ওয়ান ব্যাংকের একটি একাউন্টে। বিভিন্ন সময়ে ওই এক একাউন্টে সবমিলিয়ে জমা হয়েছে মোট ৭৪ কোটি টাকা। পরে সেই টাকার পুরোটাই তুলে আত্মসাৎ করেন ‘টাকাখেকো’ পিকে হালদার ও তার সহযোগীরা। পিকে হালদার ওরফে প্রশান্ত কুমার হালদার ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্স সার্ভিস লিমিটেডের পরিচালক ছাড়াও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স এবং এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের এমডি ছিলেন। তার বিরুদ্ধে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকা বিদেশে পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পিকে হালদারের মালিকানাধীন অস্তিত্বহীন প্রতিষ্ঠানের সাতটি ঋণ হিসাব থেকে ৩৩টি চেকের মাধ্যমে ৭৪ কোটি টাকা সরানো হয়। এ টাকা ওয়ান ব্যাংকের চট্টগ্রামের স্টেশন রোড শাখার গ্রাহক ইরফান আহমেদ খানের জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে পরিচালিত একটি হিসাবে স্থানান্তর করে আত্মসাৎ করা হয়।

স্টেশন রোড শাখার ওই একাউন্টের মালিক ৯৭ চকবাজারের বাসিন্দা ইরফান আহমেদ খান। হিসাবটি পরিচালিত হয় জেকে ট্রেড ইন্টারন্যাশনালের নামে। ইরফান ওই প্রতিষ্ঠানটির মালিক। অনুসন্ধানে দেখা যায়, পরে ওয়ান ব্যাংক স্টেশন রোড শাখার ওই একাউন্টের টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেন পিকে হালদার, ইরফান আহমেদ খানসহ অন্য সহযোগীরা।

সূত্র জানায়, এসব অর্থের বড় একটি অংশ কানাডা ও সিঙ্গাপুরসহ কয়েকটি দেশে পাচার করা হয়েছে। পাচার করা এ অর্থের পরিমাণ নিরূপণের কাজ চলছে। ধারণা করা হচ্ছে, হাজার কোটি টাকারও বেশি পাচার হয়েছে। বাকি অর্থ বেনামি প্রতিষ্ঠান, কাগুজে ও ভুয়া প্রতিষ্ঠান ও স্বজনদের নামে সরিয়ে নিয়ে বিধিবহির্ভূতভাবে বিনিয়োগ করেন পিকে হালদার।

বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, চারটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে অন্তত ১০ হাজার ২০০ কোটি টাকা সরিয়েছেন পিকে হালদার ও তার ঘনিষ্ঠরা। কারসাজির মধ্যমে ঋণের নামে কাগুজে প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে এসব অর্থ সরানো হয়। প্রতিষ্ঠানগুলোর কয়েকজনসহ ২৫-৩০ ব্যক্তির সহায়তায় এ অপকর্ম সংঘটিত হয়েছে। এদের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৯ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এছাড়া এসব দুর্নীতির সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার অভিযোগে পিকে হালদারসহ এ পর্যন্ত ৮৩ জনের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে।

যে চারটি প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা সরানো হয়েছে সেগুলো হল ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেড থেকে ৩ হাজার কোটি টাকা, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড (এফএএস) থেকে ২ হাজার ২০০ কোটি টাকা এবং রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেড থেকে ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরানো হয়।

প্রশান্ত কুমার হালদার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণের নামে অর্থ সরিয়ে আত্মসাৎ ও দেশের বাইরে পাচারের অভিযোগের বিষয়ে অনুসন্ধান করছে দুদক।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!