টাইগারপাস-পতেঙ্গা সড়কের বেহাল দশা, ভারী গাড়ির কারণে অহরহ ঘটছে দুর্ঘটনা

চট্টগ্রাম নগরীর টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গার দূরত্ব প্রায় ১২ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে প্রতিদিন নরক যন্ত্রণা পোহাচ্ছে সাধারণ মানুষ। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচঢালাই উঠে গিয়ে তৈরি হয়েছে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। কোনো কোনো জায়গায় পিচঢালাই উঠে বেরিয়ে গেছে ইট। ৪৫ মিনিটের এই রাস্তা পার হতে এখন সময় লাগে আড়াই ঘণ্টারও বেশি।

বিশেষ করে বেশি ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে বিদেশযাত্রীদের। নির্ধারিত সময়ে পৌঁছাতে না পেরে ফ্লাইটও মিস করার ঘটনা ঘটছে অহরহ। সেই সঙ্গে ঝাঁকুনির বিড়ম্বনাতো আছেই।

মূলত লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের নির্মাণকাজের কারণে বিড়ম্বনা বেশি পোহাতে হচ্ছে। এছাড়া নিষ্কাশনব্যবস্থা না থাকায় সড়কে পানি জমে থাকছে প্রায় সময়। একইসঙ্গে আছে হকারদের যন্ত্রণা। ফুটপাত দখল করে দোকান খুলে ব্যবসা করছে তারা। আর মানুষজনকে ফুটপাত ছেড়ে হাঁটতে হচ্ছে কাদা-পানি ও গর্ত মাড়িয়ে।

এছাড়া সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থান বারিক বিল্ডিং পেরিয়ে ফকিরহাট ও সল্টগোলা ক্রসিং পেরিয়ে মাইলের মাথা থেকে শুরু করে বন্দর গেটের সামনে সারি সারি কাভার্ড ভ্যান ও লরির লাইন। দিনেরবেলায় এসব ভারী গাড়ি চলাচলে কারণে রাস্তার অবস্থা বেহাল হয়ে পড়েছে। সেইসঙ্গে দীর্ঘ যানজট ও দুর্ঘটনাতো আছেই। স্থানীয় বাসিন্দারা এসব ভারী গাড়ি দিনের পরিবর্তে রাতে চলাচলের দাবি জানান।

গত দেড় মাসে এসব লরি-কাভার্ড ভ্যানের কারণে মারা গেছেন ৩ ব্যক্তি। এরমধ্যে গত ৯ এপ্রিল ইপিজেড বন্দরটিলায় কনটেইনারবাহী লরিচাপায় বাবা-ছেলের মৃত্যু হয়। এরপর ৭ মে বন্দর থানার বারেক বিল্ডিং মোড়ে সিটি বাসের ধাক্কায় আব্দুল গাফফার নামের এক ব্যক্তি নিহত হন। ১৬ মে কাভার্ডভ্যানের ধাক্কায় ভ্যানচালক আল আমিন নিহত হন নেভি হাসপাতাল গেটের সামনে।

সরেজমিন দেখা যায়, টাইগারপাস থেকে পতেঙ্গার ১১ দশমিক ৮ কিলোমিটার সড়কের মধ্যে চৌমুহনী, আগ্রাবাদ, বারিক বিল্ডিং, বিশ্বরোড, কাস্টমস মোড়, সল্টগোলা ক্রসিং, মাইলের মাথা, ইপিজেডের প্রবেশ মুখ, বন্দরটিলা, নেভী হাসপাতাল গেট, সিমেন্ট ক্রসিং, স্টিল মিলস বাজার, কাটগড়, সী-বিচ রোডে সৃষ্টি হয়েছে অসংখ্য খানাখন্দ। ছেট-বড় অনেক গর্তে জমে আছে পানি।

রাস্তার দুই পাশ দখলে নিয়েছে দোকানি ও হকাররা। যত্রতত্র অবৈধভাবে পার্কি করা হয়েছে গাড়ি। সেইসঙ্গে এলিভেট এক্সেপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের যন্ত্রাংশ ফেলে রাখা হয়েছে সড়কের ওপর।

মাইলের মাথা থেকে ঈসা খাঁ গেট পর্যন্ত রাস্তার দু’পাশে উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় কাদাযুক্ত নোংরা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছে পথচারীরা। ইপিজেড ও স্টিল মিলস কাঁচাবাজারের সবজি সড়ক দখল করে খালাস করছে ব্যবসায়ীরা।

এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসার অপরিকল্পিত খোঁড়াখুঁড়ি কারণে বছরজুড়েই ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষদের। রাস্তায় নতুন করে ঢালাই দিলেই কয়েকদিন পর এসে আবার রাস্তা কাটতে দেখা যায় সংস্থা দুটিকে।

গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক ব্যবহার করে প্রতিদিন সিইপিজেড, কেইপিজেডসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরিতে যায় অনেক মানুষ। স্কুল-কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থীও এই পথ ব্যবহার করেন। দিনের পর দিন বেহাল সড়কে যানজটের কবলে পরে যাত্রীদের শুধু পতেঙ্গা থেকে সল্টগোলা ক্রসিং পেরোতেই দুই থেকে আড়াই ঘণ্টা লেগে যায় লাগে।

পতেঙ্গা মুসলিমাবাদ এলাকার স্থানীয় যুবক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘বন্দর-পতেঙ্গাবাসী নরক যন্ত্রণা থেকে কবে মুক্তি পাবে? ব্যবসায়িক কিংবা ব্যক্তিগত কাজে নিউমার্কেট যেতে হলে যানজটের কারণে আমাদের কষ্টের শেষ থাকে না। পুরো সড়কজুড়ে অসংখ্য ছোট-বড় গর্ত। ধুলোবালির কারণে দম বন্ধ হয়ে আসে। নাগরিক দুর্ভোগ দেখার কী কেউ নেই?’

গার্মেন্টসকর্মী আসমা বেগম বলেন, ‘লোকাল বাসে করে লালদীঘি থেকে অফিসে আসা-যাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন তিন-চার ঘণ্টা বাড়তি সময় যানজটে কেটে যায়। পথে দেরী হলে অফিসে নানান কথা শুনতে হয়।’

সিডিএ নির্বাহী প্রকৌশলী ফ্লাইওভার প্রকল্প পরিচালক মাহফুজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘বর্ষার আগেই রাস্তার মেরামত ও সংস্কার হবে। সিডিএর অর্থায়নে রোডের কার্পেটিং করলেও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং ওয়াসা অপরিকল্পিতভাবে না জানিয়ে কেটে ফেলছে। সম্প্রতি সিডিএকে না জানিয়ে পতেঙ্গা-কাটগড় মোড়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তেলের লাইনের রাস্তা কেটে ফেলেছে। ইপিজেড কাঁচাবাজারের সামনে জলবদ্ধতা নিরসনে আমরা ড্রেন করে দিয়েছি কিন্তু খাল ভরাটের কারণে ড্রেন করেও সুফল মেলেনি। কাস্টমস মোড়ে ওয়াসার পাইপ লাইনের কারণে বন্ধ রয়েছে এক্সেপ্রেসওয়ের নির্মাণকাজ।’

চট্টগ্রাম ওয়াসা ও সিটি কর্পোরেশন ফ্লাইওভার নির্মাণকাজ সিডিএর সঙ্গে সমন্বয় করে করলে ২০২৪ সালের জুন মাসে কাজ শেষে হবে বলে জানান তিনি।

যানজট নিয়ে চট্টগ্রাম নগর পুলিশের উপকমিশনার (বন্দর ট্রাফিক) শাকিলা সুলতানা পলি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘লালখানবাজার থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পের কাজের জন্য যানজট একটু বেশি। প্রকল্প কর্মকর্তাদের সঙ্গে সমন্বয় করে যানজট নিরসনে ট্রাফিক বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে।’

অবৈধ পার্কিং ও হকারদের কাছ থেকে ট্রাফিকরা টাকা আদায় করছে−এ অভিযোগ প্রসঙ্গে শাকিলা সুলতানা পলি বলেন, ‘এসব বিষয় সংশ্লিষ্ট থানা ও সিএমপির অপরাধ বিভাগ দেখবে। ট্রাফিক বিভাগের কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম এবং ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক একেএম ফজলুল্লাহর মুঠোফোন একাধিকবার ফোন দিলেও তারা রিসিভ করেননি।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!