টাইগারপাসে উচ্ছেদ, লুটপাটের অভিযোগে সিটি কর্পোরেশন কার্যালয় ঘেরাও

অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের নামে পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই দোকান ভেঙে দিয়ে মালামাল লুটপাট ও নষ্ট করার অভিযোগে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী নগর ভবন ঘেরাও করে অবস্থান নিয়েছে ভুক্তভোগীরা।

বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) চট্টগ্রাম নগরীর বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে দোকান উচ্ছেদের পর বিক্ষুব্ধরা দুপুরে টাইগারপাসের অস্থায়ী নগর ভবন ঘেরাও করে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের পাশে বাটালি পাহাড়ের পাদদেশ ঘেঁষে দীর্ঘদিন ধরে ১৫-২০টি টং দোকান চালিয়ে আসছিলেন স্থানীয় খেটে খাওয়া কিছু মানুষ। বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মারুফা বেগম নেলীর নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযানে গেলে এসব টংয়ের দোকানিরা দোকানে থাকা তাদের মালামাল সরিয়ে ফেলার সময় চায়। কিন্তু তাদেরকে কোনো ধরনের সময় না দিয়ে ১০ মিনিটের ‘তাণ্ডব’ চালিয়ে ভেঙে দেওয়া হয় এসব দোকান।

এ সময় দোকানে থাকা মালামাল সরাতে না দিয়ে বিভিন্ন দিকে ছুঁড়ে ফেলে নষ্ট করাসহ সিটি কর্পোরেশনের লোকজনের বিরুদ্ধে লুটপাটের অভিযোগ তুলেছে ভুক্তভোগী দোকানিরা। উচ্ছেদ করা প্রতিটি দোকানে প্রায় ২০-৫০ হাজার টাকার মালামাল ছিল। এ অভিযোগে দুপুর ১টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের ফটকের সামনে প্রতিবাদ জানায় শতাধিক মানুষ। এ সময় বিক্ষুব্ধরা সিটি কর্পোরেশন কর্মকর্তাদের তিনটি গাড়ি দাগ করে দেয়।

বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে পরিবার নিয়ে থাকেন পঙ্গু মো. সোহেল (৩০)। তিনি বলেন, ‘২০১৩ সালে এক দুর্ঘটনায় পঙ্গুত্ব বরণ করি। এরপর এখানে ছোট্ট টংয়ের দোকান চালিয়ে আসছিলাম। কিন্তু উচ্ছেদে ভেঙে দেওয়া হয়েছে দোকান। অনেক অনুরোধের পরও দোকান থেকে কোনো ধরনের মালামাল সরিয়ে নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়নি। তাই ক্ষোভে-দুঃখে হুইলচেয়ারে বসেই অন্যদের সঙ্গে প্রতিবাদ জানাতে এসেছি।’

তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে আরও বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশনের অস্থায়ী কার্যালয়ের এ জায়গায় আগে আমাদের ঘর-বাড়ি ছিল। তখন বস্তি উচ্ছেদের নামে আমাদের বাড়ি-ঘর উচ্ছেদ করা হল। তখন আমাদের বলা হয়েছিল, আমাদের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করা হবে। সে জায়গায় আমাদের জন্য বিল্ডিং বানানো হল। কিন্তু নানা টাল-বাহানা করে আমাদের ফ্ল্যাট বুঝিয়ে দেওয়া হল না। এরমধ্যে পরিবার নিয়ে কোনো রকম বাটালি পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটা জায়গায় দোচালা ঘর করে থাকছি। দুই সন্তান আর বউ নিয়ে আমার পরিবারের আমিই একমাত্র উপার্জনকারী। আমার দোকান ভাঙায় প্রায় ৩০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

এদিকে ভুক্তভোগী টং দোকানিসহ আশপাশের বস্তির শতাধিক মানুষ বিক্ষোভ করে নগর ভবনের সামনে। এ সময় ভবনের প্রধান ফটকে তালা লাগিয়ে দেয় সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে মেয়রের প্রতিনিধি হিসেবে জামালখান ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন এবং মেয়রের পিএস ও ভারপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা আবুল হাশেম ঘটনাস্থলে গিয়ে বিক্ষুদ্ধ মানুষের সঙ্গে কথা বলেন। এছাড়া তাদের উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে পুনর্বাসনের আশ্বাস দেন।

এ বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এম রেজাউল করিম চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে ‘ব্যস্ত আছি’ বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

জেন/এএইচ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!