টমটম চালকদের ধর্মঘটে প্যানেল মেয়রের ওপর হামলা, ৩ অভিযুক্ত আটক

টমটম চলাচলে কড়াকড়ি আরোপকে কেন্দ্র করে কক্সবাজারে পৌরসভার টমটম চালকরা ধর্মঘটে যাওয়ার পর পরই হামলা চালান পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহাবুবুর রহমানের ওপর। হামলার প্রতিবাদে তাৎক্ষণিক দোকানপাট বন্ধ করে পৃথক ধর্মঘটে যান দোকান মালিকরা।

বুধবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে এগারটার দিকে কক্সবাজার পৌরসভার গেইটে এ হামলার ঘটনা ঘটে। এই ঘটনা ঘটে। হামলায় আহত কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুবুর রহমান চৌধুরীকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

কক্সবাজার পৌরসভার অপর প্যানেল মেয়র হেলাল উদ্দিন কবির জানান, ‘কক্সবাজার পৌরসভার পক্ষে লাইসেন্সবিহীন ব্যাটারি চালিত ইজি বাইক (টমটম) চলাচলে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়। এতে বেশ কিছু লাইসেন্সবিহীন টমটম আটক করা হয়। এর জের ধরে টমটম মালিক সমিতির নেতা পরিচয়ে রুহুল কাদের মানিক নামের এক যুবকের নেতৃত্বে ১০/১৫ জন মানুষ পৌরসভার গেটে দাঁড়িয়ে হৈ-চৈ শুরু করে। এসময় কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র মাহাবুবুর রহমান তাদের শান্ত হওয়ার অনুরোধ জানালে রুহুল কাদের মানিক প্যানেল মেয়রের উপর হামলা চালায়। এতে মাহাবুব আহত হন।’

এদিকে রাত ৮টায় হেলাল উদ্দিন কবির জানান, ‘এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং হামলার নেতৃত্বদানকারী রুহুল কাদের মানিকসহ ৩ জনকে আটক করেছে পুলিশ। বাকি দুজন হচ্ছেন আবদুল হামিদ ও মুসা।’

কক্সবাজার সদর থানার ওসি শেখ মুনীর উল গীয়াস ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে জানান, ‘এ ঘটনায় একজনকে পুলিশ হেফাজতে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। এ ঘটনার পরপর কক্সবাজার শহরের দোকান মালিকরা ধর্মঘট শুরু করে। একই সঙ্গে শহরে মিছিল সমাবেশ করে।’

এদিকে প্যানেল মেয়রের ওপর হামলার ঘটনা শুনে ঢাকা থেকে কক্সবাজার ছুটে আসেন পৌর মেয়র মুজিবুর রহমান। তিনি সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন প্যানেল মেয়র মাহবুবর রহমান চৌধুরীকে দেখতে যান। পরে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ‘এ ঘটনার নেপথ্যে অনেকেরই ইন্ধন রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে কক্সবাজারে অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে চক্রটি। অচিরেই তাদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে।’

এর আগে ভোর সকাল থেকে কক্সবাজার পৌরসভার কর্তৃক নতুনভাবে দেয়া লাইসেন্স থাকা সত্ত্বেও ট্রাফিক পুলিশের ধরপাকড়ের প্রতিবাদে শহরে অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘট পালন করে টমটম মালিক ও চালকেরা। এতে যানবাহন সংকটে চরম ভোগান্তি দেখা দেয়। পরে বিকেলে ধর্মঘট তুলে নিলে টমটম চলাচল স্বাভাবিক হয়।

অন্যদিকে মাহাবুবুর রহমানের ওপর হামলার প্রতিবাদে দোষীদের গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দিয়ে ধর্মঘটে যান দোকান মালিকরা। পরে মূল আসামিসহ ৩ জনকে গ্রেপ্তারের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেন তারাও। উল্লেখ্য, মাহাবুবুর রহমান সাতকানিয়া-লোহাগাড়া সমিতির সাবেক আহ্বায়ক। অধিকাংশ দোকান মালিক এ সমিতির সদস্য।

অবরোধ পালনকারী টমটম চালকেরা জানান, ‘কক্সবাজার পৌরসভা নতুনভাবে ৫০০ টমটমের লাইসেন্স দেয়। লাইসেন্স প্রতি নেয়া হয় ৮০ হাজার থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত। এসব লাইসেন্স নিয়ে টমটম চালাতে গিয়ে ঘটে বিপত্তি। পৌরসভার দেয়া এসব লাইসেন্স জেলা প্রশাসক ও ট্রাফিক পুলিশের অনুমোদন না থাকার অভিযোগে ধরপাকড় শুরু হয়। গত ৭ দিনে প্রায় ৩০০টি টমটম জব্দ করেছে। টাকা নিয়ে লাইসেন্স নিয়েও তাদের টমটম ধরা হচ্ছে। তাই নিরূপায় হয়ে ধর্মটের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’

শামসু নামে এক প্রতিবন্ধী টমটম চালক জানান, ‘এক লক্ষ টাকার বিনিময়ে কক্সবাজার পৌরসভা থেকে একটি লাইসেন্স দেওয়া হয় আমাকে। কিন্তু লাইসেন্সে জেলা প্রশাসকের স্বাক্ষর না থাকার অভিযোগে আমার টমটমটি ট্রাফিক পুলিশ জব্দ করে। কোনভাবেই তারা টমটম দিচ্ছে না। যার ফলে পরিবার পরিজন নিয়ে অনাহারে দিন কাটছে তার।’

বুধবার সকালে শহরের লালদিঘী পাড়, বাজার ঘাটা, বার্মিজ মার্কেট ও কালুর দোকান এলাকা ঘুরে দেখা যায়, ভোর সকাল থেকে সড়কে একটিও টমটম নেই। গুটি কয়েক যারা টমটম নিয়ে নেমেছিল মোড়ে মোড়ে চালকেরা তাদের না চালানোর জন্য বাধা দিচ্ছে। এসময় চালকেরা বিভিন্ন দাবি নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে দেখা যায়।

কেএস/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!