জয়পুরহাট শিক্ষা কর্মকর্তা ও অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সমাবেশ ও স্মারকলিপি

জয়পুরহাট প্রতিনিধি
দুর্নীতি,অনিয়ম,স্বেচ্ছাচারিতা ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও দু’জন অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে জয়পুরহাট উপজেলা সদরের সহকারী প্রাথমিক শিক্ষকরা। আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য সমাবেশ শেষে শিক্ষকগণের হয়রানির ২১টি অভিযোগ উল্লেখ করে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কাছে স্মারকলিপিও দেওয়া হয়েছে। রবিবার বিকেলে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের সামনে প্রতিবাদ সমাবেশের পর শিক্ষকরা ওই স্মারকলিপি পেশ করেন।
রবিবার বিকেলের ওই প্রতিবাদ সমাবেশে শিক্ষকরা অভিযোগ করেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা বদলী নীতিমালা লঙ্ঘন করেছেন। নীতিমালায় জেষ্ঠ্যতার অগ্রাধীকার থাকলেও তিনি জেষ্ঠ্য শিক্ষকদের বদলীর আবেদন গ্রহণ না করে কনিষ্ঠদের বদলী আবেদনে সুপারিশ দিয়ে তাদের বদলী নিতে সহযোগীতা করেছেন। এ ছাড়া বদলী বাণিজ্যের পাশাপাশি টাইম স্কেল, ইনক্রিমেন্ট, শ্রান্তি বিনোদন, ইবি ক্রস, জিপিএফ লোন, জিপিএফ একাউন্ট চালু সহ চাকুরী ক্ষেত্রে শিক্ষকদের পদে পদে হয়রানির অভিযোগ করা হয়।
সমাবেশে অফিস সহকারী মেহেদি হাসান ও আব্দুল করিমের বিরুদ্ধে শিক্ষকদের সাথে দুর্ব্যবহার এবং চাকুরী সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে উৎকোচ ছাড়া কাজ না করার অভিযোগ করে বক্তব্য রাখেন জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সভাপতি হাবিবুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান, শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম, মোতাছিন বিল্লাহ, রায়হান কবির মনিরুল ইসলাম প্রমূখ। পরে তাঁরা দল বেঁধে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুজ্জেহার কাছে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও দু’জন অফিস সহকারীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও হয়রানির ২১টি অভিযোগ তুলে ধরে আইনগত ব্যবস্থা নিতে স্মারকলিপি পেশ করেন। স্মারকলিপির অনুলিপি তারা স্থানীয় দুই সংসদ সদস্য, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, উপ-পরিচালক ও জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন প্রশাসনিক দপ্তরে প্রেরণ করেন।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বদরুজ্জেহা শিক্ষকদের স্মারকলিপি পাওয়ার কথা স্বীকার করে বলেন,তদন্ত সাপেক্ষে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
হয়রানির শিকার কোমরগ্রাম সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক কানিজ ফাতেমা অভিযোগ করেন,চাকুরীর পর জিপিএফ একাউন্ট চালু করার জন্য অফিসে গেলে অফিস সহকারী মেহেদি হাসান তাঁর কাছে উৎকোচ দাবি করেন। উৎকোচ না দেওয়ায় তাঁকে অফিস থেকে ফরম দেওয়া হয়নি। পরে তিনি অন্য উপজেলা থেকে ফরম সংগ্রহ করে একাউন্ট খুলেছেন।
চান্দা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রেবেকা সুলতানা অভিযোগ করেন,২১ বছরের জেষ্ঠ্যতা নিয়েও তাঁর বদলী আবেদনে সুপারিশ করা হয়নি। অথচ তিন বছরের কনিষ্ঠ এক শিক্ষক পৌর সদরে বদলী হয়েছেন শিক্ষা অফিসের সুপারিশের ভিত্তিতে।
দেওনাহার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এমরান হোসেন অভিযোগ করেন,বাবার উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতে যেতে তাঁর পাসপোর্ট করতে শিক্ষা অফিস তাঁর কাছ থেকে দুই হাজার ২০০ টাকা নিয়ে কাগজপত্র সম্পন্ন করে দিয়েছে।
শ্যামপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মহিবুল হাসিব জানান,উপজেলা শিক্ষা অফিস শিক্ষকদের অবয়ব বুঝে তাদের সাথে আচরণ করা হয়। তিনি জিপিএফ ফান্ড থেকে ঋণ নিতে গিয়ে স্থানীয় অবসরপ্রাপ্ত এক প্রধান শিক্ষককে উৎকোচ দিয়ে ঋণ পেয়েছেন বলে জানান। ৯৬ হাজার টাকা ঋণ নিতে অফিস খরচ বাবদ তাঁর কাছ থেকে ৮০০ টাকা নেওয়া হয়েছে। অবসর নেওয়ার পরও ওই শিক্ষক ছাড়া শিক্ষা অফিসে কোন কাজ হয়না বলেও তিনি দাবি করেন।
জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সমাজের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান অভিযোগ করেন,শিক্ষকদের কাজে উপজেলা শিক্ষা অফিসে গেলে তাদের মানুষ বলে কোন মূল্যায়ন করা হয় না। প্রতিটি কাজেই শিক্ষকদের ঘুষ দিতে বাধ্য করা হয়।
শিক্ষকদের এসব অভিযোগ সম্পর্কে জয়পুরহাট সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা নাইয়ার সুলতানা সম্পূর্ণ অস্বীকার করে বলেন,শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের নির্দেশে কনিষ্ঠ দু’জন শিক্ষকের বদলী নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে কিছুটা ক্ষোভ আছে। তবে কোন অনিয়মের সাথে তিনি জড়িত নন দাবি করে বলেন,অফিসের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে শিক্ষকরা আমার সাথে আলোচনা করতে পারত। আমার অনুপস্থিতিতে চাকরীবিধি লঙ্ঘন করে শিক্ষকদের এ ধরণের কর্মসূচী পালন দুঃখজনক।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!