সেই ‘জ্বিনের আছরে’ অন্তসত্ত্বা এবার স্কুলছাত্রী, মূল হোতারা পার পেয়ে যাচ্ছে

বাঁশখালীতে নিহত আরেক অন্তসত্ত্বা তরুণীর লাশ তোলা হবে আজ

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর গন্ডামারায় আবার ‘জ্বিনের আছরে’ অন্তসত্ত্বা হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এবার ইউনিয়নের পূর্ব গন্ডামারা গ্রামে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্রী আট মাসের অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় এক প্রবাসীর ছেলের অপকর্ম ধরা পড়ায় প্রভাবশালীরা ‘জ্বিনের প্রভাবে’ ছাত্রীটি অন্তসত্ত্বা হয়েছে বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। ছাত্রীর অসহায় বাবা-মা স্থানীয়ভাবে বিচার চেয়েও বিচার পাচ্ছেন না।

এর আগে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব বড়ঘোনা গ্রামে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে রুমা আক্তার (১৬) নামের এক তরুণীর সঙ্গে সম্পর্কে জড়ায় প্রতিবেশী বজল আহমদের পুত্র তৌহিদুল ইসলাম। মেলামেশায় রুমা আক্তার অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়লে তা ‘জ্বিনের প্রভাবে’ হয়েছে প্রচার করে তাকে হত্যা করা হয় বলে অভিযোগে জানা গেছে। এদিকে হত্যার ১৯ দিন পর গত ২৭ এপ্রিল রুমার বাবা নুরুল আমিন মামলা করায় আদালতের নির্দেশে ময়নাতদন্তের জন্য আজ সোমবার (১ জুলাই) তার লাশ কবর থেকে তোলা হবে।

সরেজমিন ঘুরে জানা গেছে, সর্বশেষ অন্তসত্ত্বা হওয়া পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রীটির বাড়ি গন্ডামারা ইউনিয়নের পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে। ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষিকা হোসনে আরা ১০ বছরের ওই মেয়েটিকে লেখাপড়ার পাশাপাশি ঘরের কাজ করার জন্যও রাখেন। সহকারী শিক্ষিকা হোসনে আরার স্বামী রাউজান উপজেলার একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। তাই তিনি বাড়ি থাকেন না। সহকারী শিক্ষিকার ভাসুর আলী হোসেনও থাকেন সৌদি আরবে। জানা গেছে, ওই ভাসুরের ছেলে মো. মহিউদ্দিন মেয়েটির সঙ্গে গোপনে মেলামেশা করতে থাকলে মেয়েটি একপর্যায়ে অন্তসত্ত্বা হয়ে পড়ে। গত ২৮ জুন মুজিবখিল্যা এলাকায় স্থানীয় তিন ইউপি সদস্যসহ গণ্যমান্যদের নিয়ে বৈঠকে ওই ছাত্রী তার অন্তসত্ত্বা হওয়ার ব্যাপারে মহিউদ্দিনকে দায়ী করে। কিন্তু মহিউদ্দিনের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় ওই দরিদ্র ছাত্রীটির কথা কেউ আমলে নিচ্ছে না।

স্থানীয় মাতব্বরের কাছে মহিউদ্দিনের পরিবার ও সহকারী শিক্ষিকা হোসনে আরা দাবি করছেন, মেয়েটি জ্বিনের প্রভাবে অন্তসত্ত্বা হয়েছে। ঝাড়ফুঁক করে ছাত্রীটির জিনের আঁচড় ছাড়তে হবে।

পূর্ব গন্ডামারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আজিজুর রশিদ বলেন, ‘ছাত্রীটি অন্তসত্ত্বা হয়েছে ঘটনাটি সত্য। তবে মেয়েটির নাম পঞ্চম শ্রেণীতে থাকলেও এই স্কুলে এখন পড়ে না। অন্তসত্ত্বা হওয়ার খবরটি আমরাই প্রথম ওই ছাত্রীর পরিবারকে জানিয়েছি। বর্তমানে ছাত্রীটি আট মাসের অন্তসত্ত্বা।’

ওই স্কুলের সহকারী শিক্ষক হোসনে আরা বলেন, ‘আমি ছাত্রীটিকে অনেকদিন আগে ঘরে কাজের মেয়ে হিসেবে রেখেছিলাম। এখন আমার বাড়িতে থাকে না। আমার ভাসুরের ছেলে মহিউদ্দিনকে ছাত্রীটি দায়ী করলেও ছাত্রীটির ঘটনার বর্ণনার সাথে কিছুই মিল খাচ্ছে না। জ্বিনের প্রভাবে ছাত্রীটি অন্তসত্ত্বা হয়েছে। জ্বিনের আছর সারলেই মেয়েটি ভাল হয়ে যাবে।’

গ্রাম্য সালিশি বৈঠকে থাকা তিনি ইউপি সদস্য আব্দুস সোবাহান সিকদার, নুরুল হাকিম ও আব্দুল জব্বার বলেন, ‘আমরা ছাত্রীটির সঙ্গে অপকর্মের হোতাকে খোঁজার জন্য বৈঠক করেছিলাম। মো. মহিউদ্দিন নামের এক প্রবাসীর ছেলের নামও ছাত্রীটি বলেছে। কিন্তু বারবার বৈঠকে জ্বিনের কথা উঠে আসায় আমরা সমাধান করতে পারিনি। তবে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ আইনের আশ্রয় নেওয়ার জন্য ওই ছাত্রীর পরিবারকে পরামর্শ দিয়েছি।’

গন্ডামারা ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বাদশা বলেন, ‘কিছুদিন আগেও গন্ডামারার বড়ঘোনা গ্রামে এক অন্তসত্ত্বা তরুণীকে জ্বিনে মেরেছে বলে হত্যা করেছিল। আবারও পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী অন্তসত্ত্বা হওয়ার পর জ্বিনের আছর বলে ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এসব দুস্কৃতিকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি কামনা করছি।’

বাঁশখালী উপজেলার উপজেলা নিবাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার বলেন, ‘বাঁশখালীতে বাল্যবিবাহ, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয় রোধে আমি গ্রামে গ্রামে গিয়ে অসংখ্যবার সভা-সমাবেশ করেছি। এসব অপকর্ম রোধে সকল শ্রেণী-পেশার মানুষকে সচেতন ও উদ্যোগী হতে হবে। নয়তো এসব বন্ধ করা সম্ভব নয়। অসহায় ওই ছাত্রীর পরিবারকে আইনের আশ্রয় নিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। আমরা সার্বিক সহযোগিতা করবো।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!