জোড়া সেঞ্চুরি করেও পাকিস্তানের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি ইংল্যান্ড

খাদের কিনারে গিয়ে নিজেরা খাদে না পরে উল্টো ইংল্যান্ডকে খাদে ফেলল পাকিস্তান। অথচ এই ইংল্যান্ডের কাছে বিশ্বকাপের ঠিক আগে ওয়ানডে সিরিজে নাকাল হয়েছিল পাকিস্তান। ৩৫৮ রান করেও ইংল্যান্ডের কাছে ৬ উইকেটে হেরেছিল তারা। আরেক ম্যাচ হেরেছিল ৩৪০ রান করে।

ক্রিকেট চরম অনিশ্চয়তার খেলা। সেটি আরও বেশি অনিশ্চিয়তায় পড়ে যখন দলটির নাম হয় পাকিস্তান। পাক্কা জ্যোতিষীও পাকিস্তানকে নিয়ে ভবিষ্যতবাণী দিলে ফেল করার সম্ভাবনা শতভাগ। কখন কি করে বসবে, তারা নিজেরাও জানে না। বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে শোচনীয় পরাজয়ের পর এই পাকিস্তান নিয়ে সমালোচনার ঝড় বয়ে গিয়েছিল। ১০৫ রানে অলআউট হলে সমালোচনা তো সইবার কথাই। কিন্তু সমালোচনায় একটি দল কতটুকুই বা বদলাতে পারে? পাকিস্তানকে না দেখলে কারও বিশ্বাস হওয়ার কথা নয়।
জোড়া সেঞ্চুরি করেও পাকিস্তানের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি ইংল্যান্ড 1
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১০৫ রানে অলআউটের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে উঠেছে পাকিস্তান। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সোমবার চ্যালেঞ্জিং স্কোর গড়েছে সরফরাজ আহমেদের দল। বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫০ ওভাবে ৮ উইকেট হারিয়ে ৩৪৮ রান তুলেছে ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন দলটি।

নটিংহ্যামের ট্রেন্ট ব্রিজ মানেই ব্যাটসম্যানদের স্বর্গরাজ্য! এই মাঠেই দুবার বিশ্বরেকর্ড গড়েছে ইংল্যান্ড। গতবছর অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬ উইকেটে ৪৮১ রান। এর আগে ২০১৬ সালে এই পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩ উইকেট তুলে ৪৪৪ রান! বিশ্বকাপেও রান উৎসবের দেখা মিলল ইংল্যান্ডের পয়মন্ত ভেন্যুতে। এবারও একইভাবে ব্যাটসম্যানরাই দাপট দেখালেন এই মাঠে। কিন্তু শেষ হাসি পাকিস্তানের। রুদ্ধশ্বাস ছড়ানো ম্যাচে জয় তুলে নিয়েছে সরফরাজ আহমেদের দল।

পাকিস্তানের কঠিন চ্যালেঞ্জে টপকে জেতা হলো না স্বাগতিকদের। ১৪ রানে ম্যাচ জিতে নেয় সরফরাজের দল। টানা ১১ হারের পর অবশেষে জয়ের মুখ দেখলো দক্ষিণ এশিয়ার দেশটি।

সোমবার বিশ্বকাপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে টস হেরে ব্যাট করতে নামে পাকিস্তান। ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে তারা তুলে ৩৪৮ রান। জবাব দিতে নেমে জো রুট ও জস বাটলারের শতরানের পরও ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ইংল্যান্ড আটকে যায় ৩৩৪ রানে।

তারই পথ ধরে ২০১৯ বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ম্যাচে এসে জয়ে দেখা পেল ১৯৯২ সালের চ্যাম্পিয়ন দলটি। প্রথম ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকাকে উড়িয়ে দিয়েছিল এউইন মরগানের দল। কিন্তু এবার হোঁচট খেলো ফেভারিটরা। আর দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে পথে ফিরল পাকিস্তান।
জোড়া সেঞ্চুরি করেও পাকিস্তানের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি ইংল্যান্ড 2
নটিংহ্যামের ব্যাটসম্যানদের স্বর্গ জস বাটলার ও জো রুটের শতরান স্বপ্ন দেখালেও জয়ের দেখা পায়নি ইংল্যান্ড।

অথচ জস বাটলার ও জো রুটই প্রায় শেষ করে দিয়েছিলেন পাকিস্তানের সম্ভাবনা। শুরুর ধাক্কা সামলে দু’জন গড়েন ১৩০ রানের জুটি। পথ খুঁজে নেয় দল। যদিও ইংল্যান্ড দলীয় ১২ রানে হারিয়েছিল প্রথম উইকেট। ৮ রান তুলে সাজঘরে ফেরেন জেসন রয়। জনি বেয়ারস্টো (৩২) সম্ভাবনা জাগিয়ে আউট। তারপর ৯ রানে এউইন মরগান ফিরে গেলে বিপাকে পড়ে স্বাগতিকরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
টস: ইংল্যান্ড
পাকিস্তান ৩৪৮/৮ (৫০ ওভার)
হাফিজ ৮৪, বাবর ৬৩, সরফরাজ ৫৫,
মঈন ৫০/৩, ওকস ৭১/৩, উড ৫৩/২
ইংল্যান্ড ৩৩৪/৯ (৫০ ওভার)
রুট ১০৭, বাটলার ১০৩, বেয়ারস্টো ৩২
ওয়াহাব ৮২/৩, শাদাব ৬৩/২, আমির ৬৭/২
ফল: পাকিস্তান ১৪ রানে জয়ী।
ম্যাচসেরা: মোহাম্মদ হাফিজ

পতনের এখানেই শেষ নয়, বেন স্টোকসকে (১৩) ফিরিয়ে ম্যাচে পাকিস্তানকে এগিয়ে নেন একাদশে ফেরা শোয়েব মালিক। কিন্তু তারপরই বাটলার-রুট পাল্টে দেন সব হিসাব। দেখে-শুনে খেলতে থাকেন দুজন। তাদের ব্যাটেই পথ খুঁজে নেয় ইংল্যান্ড।

যে দলটির সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ১১৮, তারাই ৫ উইকেট পৌঁছে যায় ২৪৮ রানে। ১০৪ বলে ১০৭ রানে ফেরেন রুট। তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১৫তম শতরান। তিনি ফেরার পর শতরান আসে বাটলারের ব্যাটেও। ক্যারিয়ারের নবম সেঞ্চুরি হাঁকিয়েই ধরেন সাজঘরের পথ। ৭৬ বলে করেন ১০৩ রান।
জোড়া সেঞ্চুরি করেও পাকিস্তানের ছোবল থেকে রক্ষা পায়নি ইংল্যান্ড 3
কিন্তু শেষটা ভাল হলো না ইংল্যান্ডের। ওয়াহাব রিয়াজ ও মোহাম্মদ আমিরের বোলিং তোপে জয়ের কাছে গিয়েও হতাশ হতে হয় তাদের।

বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা বেশ করেছিলেন ফখর জামান আর ইমাম-উল-হক। উদ্বোধনী জুটিতে দুজন যোগ করেন ৮২ রান। ফখর ৪০ বলে ৩৬ রান করে মঈন আলীর শিকার। এরপর ইমাম ফেরেন ৪৪ রানে। তাদের দেখানো পথেই এরপর দলকে এগিয়ে নিয়েছেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ হাফিজ।

বাবর আজম তুলে নেন ক্যারিয়ারের ১২তম হাফসেঞ্চুরি। তিনি ফেরেন ৬৬ বলে ৬৩ রানে। কম যান নি মোহাম্মদ হাফিজও। তার ব্যাট থেকে এসেছে ৬২ বলে ৮৩ রান। ইনিংসে ছিল ৮ বাউন্ডারি ও ২ ছক্কা! সরফরাজ আহমেদ সতর্ক ব্যাট করেছেন। তিনি আটকে যান ৪৪ বলে ৫৫ রানে।

ইংল্যান্ডের সবচেয়ে সফল বোলার মঈন আলি। ১০ ওভারে ৫০ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। ২ উইকেট পেয়েছেন মার্ক উড। তবে হতাশ করেছেন আগের ম্যাচে ঝড় তোলা জোফরা আর্চার। ১০ ওভারে ৭৯ রান দিয়ে উইকেট পাননি এই পেসার।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!