আড়াই কোটি টাকা যেভাবে নষ্ট করলো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

হালিশহর-আনন্দবাজারে জৈব সারের আজগুবি প্রকল্প

আড়াই কোটি টাকা খরচ করে জৈব সার প্যাকেটজাত করার ‘প্রসেসিং মেশিন গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট’ স্থাপন করা হলেও তার ব্যবহার হয়নি একদিনও। বিদেশি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা নিয়ে এটি বসানোর দীর্ঘ ৮ বছর পেরিয়ে গেলেও এটি ব্যবহারের কোন উদ্যোগ নেয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন। প্রায় ৫০ লাখ টাকায় কেনা মেশিনটি বছরের পর বছর পরিত্যক্ত রাখায় এটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ নষ্ট হয়ে অকেজো হয়ে পড়েছে সেটি।

সম্প্রতি দুদকের ১০৬ হটলাইনে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি মেশিন কেনার অনিয়মের অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করে দুর্নীতি দমন কমিশনের জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১।

ওই অভিযোগে জানানো হয়, হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে দায়িত্বরত মেকানিক্যাল বিভাগের অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনায় বছরের পর বছর ফেলে রেখে নষ্ট করা হয়েছে মেশিনটি। ওই মেশিনের আরও দুটি অংশ প্রকল্পের টাকায় কেনার কথা থাকলেও পরে মেশিনটির বাকি অংশ সংযোজন করেনি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেকানিক্যাল বিভাগ।

জানা যায়, ২০১০-১১ অর্থবছরে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় চট্টগ্রামের হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টটি গতিশীল করতে প্রকল্পের অর্থ পায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন। ওই প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ২২ কোটি ৯৪ লাখ টাকা। এর মধ্যে ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য জমি কেনা, আড়াই কোটি টাকার যন্ত্রপাতি ও বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কিন্তু পরবর্তীতে জমি কেনা নিয়ে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত আর জমি কেনেনি চসিক।

সংশ্লিষ্ট অভিযোগে জানা যায়, যন্ত্রপাতি ও যানবাহন কেনার আড়াই কোটি টাকা থেকে প্রায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যে একটি দেশীয় তৈরি জৈব সার প্যাকেজিং মেশিন ও একটি মাত্র কম্পিউটার ছাড়া কোন সরঞ্জামের হদিস পাওয়া যায়নি। ওই সময় মেয়াদ শেষ দেখিয়ে প্রকল্পের সব টাকাও ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়।

এছাড়া সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা অপসারণের সুবিধার্থে নগরের পতেঙ্গা স্টিলমিল বাজার, ইপিজেড, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, রিয়াজউদ্দিন বাজার, জিইসি মোড়সহ গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় গার্বেজ স্টেশন বসানোর কথা থাকলেও সেটি আর বাস্তবায়ন হয়নি। পরবর্তীতে ওই প্রকল্পের টাকাও ভাগ-বাটোয়ারা হয়ে যায়।

হালিশহর আনন্দবাজার গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের প্রজেক্ট ম্যানেজার ইউসুফ খান বলেন, ‘গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের জৈব সার প্যাকেট করতে মূলত এই মেশিনটি কেনা হয়। মেশিনটি ছিল দেশীয় তৈরি। ওই সময় মেশিনটি দরপত্র দিয়ে কেনা হয়েছিল প্রায় অর্ধকোটি টাকায়। এই মেশিনটিতে আরও দুটি অংশ লাগানোর কথাও ছিল সিটি করপোরেশনের। কিন্তু পরবর্তীতে মেশিনের বাকি অংশ সংযোজন না করায় সম্পূর্ণ অকেজো হয়ে পড়েছে মেশিনটি।’

দুর্নীতি দমন কমিশন জেলা সমন্বিত কার্যালয় চট্টগ্রাম-১ এর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘গত ৩১ ডিসেম্বর দুদক প্রধান কার্যালয় থেকে হালিশহর আনন্দবাজার এলাকায় গার্বেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের একটি প্যাকেটজাত মেশিন কেনার দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তে নির্দেশনা দেওয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে ইতিমধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিদের্শক্রমে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘২০১০-১১ অর্থবছরে করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা আরও গতিশীল করতে দাতা সংস্থা (এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক) থেকে পাওয়া অর্থ দিয়ে বেশ কিছু মেশিন, কম্পিউটার ও যানবাহন কেনা হয়েছিল। জমি কেনা ছাড়া প্রকল্পের বাকি কাজ শেষ করা হয়। কাজ শেষ করা না হলে দাতা সংস্থার টাকা ফেরত দিতে হতো।’

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!