জুয়েল-এনাম বিরোধে দুই ভাগ পটিয়া বিএনপি, কর্মসূচিও আলাদা

জুয়েল কানাডায়, কর্মসূচির ভার এনামের হাতে

চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলা বিএনপির নেতৃত্ব দুই ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছে। বিভিন্ন দলীয় কর্মসূচিও দুই গ্রুপ পালন করছে আলাদাভাবে। এর মধ্যে একটি গ্রুপের নেতৃত্ব সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েলের হাতে। অন্যটির নেতৃত্বে উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম। শাহজাহান জুয়েল কানাডা থাকায় উপজেলা বিএনপির কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি তাকে। পটিয়া উপজেলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে এনামকে। মূলত কেন্দ্র থেকে জুয়েলকে দায়িত্ব না দেওয়ায় দুই গ্রুপের দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে চলে আসে।

অথচ সব ধরনের কর্মসূচিতে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিত থাকাসহ ছয় নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি। এরপরও প্রতিটি কর্মসূচি আলাদা আলাদা পালন করছে দু’গ্রুপের নেতাকর্মীরা।

গত ২০ আগস্ট দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান ও সদস্য সচিব মোস্তাক আহমদ খান পটিয়ার দায়িত্ব এনামুল হক এনামকে দেওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান।

এদিকে সোমবার (২৯ আগস্ট) দুপুর ৩টায় পটিয়া মনসা বাদামতল এলাকায় পটিয়া উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করা হয়েছে।

এতে জাতীয় নির্বাহী কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে। প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগীয়) মাহবুবের রহমান শামীম। সভাপতিত্ব করবেন পটিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক এনামুল হক এনাম।

সমাবেশ পটিয়া উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে হওয়ার কথা থাকলেও রোববার বিকালে হঠাৎ করে স্থান পরিবর্তন করা হয়। তবে এ সমাবেশে শাহাজাহান জুয়েলের অনুসারীরা থাকবে না। তারা পরে আলাদা কর্মসূচি পালন করবে বলে জানা গেছে।

জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট থেকে সারাদেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ এবং বিক্ষোভ মিছিল শুরু করে বিএনপি। কিন্তু গ্রুপিংয়ের কারণে পটিয়ায় এখনও পর্যন্ত তেমন কোনো সভা-সমাবেশ হয়নি। এতে তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হচ্ছে।

পটিয়া উপজেলা বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দীর্ঘদিনের। কমিটি গঠন ও আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে সেই কোন্দল দিন দিন বেড়েই চলেছে। কোন্দলের কারণে দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীসহ যে কোনো কর্মসূচিও পৃথকভাবে পালন করা হচ্ছে।

এদিকে সব পর্যায়ের কর্মসূচিতে নিজ নিজ জেলা ও উপজেলার নেতা, সাবেক সংসদ-সদস্য ও গত জাতীয় নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া নেতাদের উপস্থিত থাকাসহ ছয়টি নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

এছাড়া মৌখিকভাবে জেলা শাখার নেতাদের জানানো হয়েছে, কেন্দ্রীয় নির্দেশনা অনুযায়ী ধারাবাহিক কর্মসূচি পালনে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট নেতাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে।

উপজেলা বিএনপির একাধিক নেতা জানান, সরকার পতনের আন্দোলন সফল করতে এখন তৃণমূলকে দল অনুভব করছে। তৃণমূলও এসব কর্মসূচিতে উজ্জীবিত হবে, আরও শক্তিশালী হবে। কিন্তু কেন্দ্র এবং জেলা বিএনপির নীতিনির্ধারকরা একজনের নাম উল্লেখ করে যে সমন্বয় কমিটি গঠন করেছেন, তা নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের মাঝে হতাশা বিরাজ করছে। যদি সবার সমন্বয়ে গঠন করা হতো তাহলে নেতাকর্মীদের মাঝে একটা স্পিরিট তৈরি হতো। তেলের মূল্যবৃদ্ধি, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের জীবনযাত্রা অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। উপজেলা নেতাদের বিশ্বাস, এ কর্মসূচি সফল হলে সরকার আরও কোণঠাসা হয়ে পড়বে।

বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত) মাহবুবের রহমান শামীম জানান, জনসম্পৃক্ত কর্মসূচি নিয়ে আমরা মাঠে আছি। তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরাও মাঠে নামবেন। কারণ মানুষের সংসার চালাতে হিমশিম অবস্থা। এভাবেতো দেশ চলতে পারে না। ধারাবাহিক এসব কর্মসূচির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের আরও কাছে যাওয়ার সুযোগ পাওয়া যাবে। তৃণমূলের দলীয় নেতাকর্মীরাও উজ্জীবিত হবে। আন্দোলনের মধ্যদিয়েই সরকারের পতন করে আমরা ঘরে ফিরব।

নিজ সংসদীয় আসনে দলের ভেতরে গ্রুপিং স্পষ্ট হলেও এখনও নীরব ভূমিকায় রয়েছেন সাবেক সংসদ সদস্য ও বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য গাজী মো. শাহজাহান জুয়েল। তিনি বর্তমানে কানাডায় অবস্থান করছেন। কেন্দ্র থেকে তাকে দায়িত্ব না দেওয়ায় দলীয় কর্মসূচি নিয়ে দ্বিধা-দ্বন্দ্বে রয়েছে তার অনুসারীরা।

উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব খোরশেদ আলম বলেন, ‘সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। এ আন্দোলন শুধু বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এ আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সবাই চায় এ সরকারের পতন।’

এক প্রশ্নের জবাবে খোরশেদ আলম বলেন, ‘জেলা থেকে পটিয়ায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা থাকলেও আমরা চাইছি সবাইকে নিয়ে সম্মিলিতভাবে এ আন্দোলন-সংগ্রাম বাস্তবায়ন করতে। তাই আগস্ট মাস শেষ হওয়ার আগেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হবে।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা যুবদলের সাবেক সভাপতি ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য বদরুল খায়ের চৌধুরী বলেন, ‘তারেক রহমান সারাদেশব্যাপী আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। যাদের সমন্বয়ের দায়িত্ব দিয়েছেন, তারা সামান্যতম সমন্বয়ও করেননি।’

সাবেক এমপি গাজী মো. শাহাজান জুয়েলের অনুসারী হিসাবে পরিচিত এ নেতা আরও বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্র পটিয়া বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। পটিয়ার দু’বারের সাবেক এমপি, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য শাহজাহান জুয়েলের সঙ্গে সম্পর্কিত কারও সঙ্গে সমন্বয় করা হয়নি। দলে নবাগত এনামুল হক এনামকে একক দায়িত্ব দিয়ে পটিয়ার বিএনপি পরিবারে হতাশা আর বিবাদ সৃষ্টি করে দেওয়া হয়েছে।’

আন্দোলন সফল করতে হলে ঐক্যের বিকল্প নেই। আশা করি, দায়িত্বপ্রাপ্তদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। এজন্য তারেক রহমানের সুদৃষ্টি কামনা করেন এ বিএনপি নেতা।

তিনি আরও জানান, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনামুল হক এনাম অংশ নিয়েছেন। কেন্দ্র ও জেলার নেতারা মিলে এনামকে সমন্বয় করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি আশা করছি দলের এ দুঃসময়ে ভেদাভেদ ভুলে, সবাই এক কাতারে এসে সরকারবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়ে সভা-সমাবেশ সফল করে তুলবে।

ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!