জুলুসের আগুনে পুড়ে জেএসসির স্বপ্ন শেষ রফিকুলের

‘আমাকে নিয়ে যাও, আমি পরীক্ষা দেব’

বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) এরই মধ্যে জেএসসির গণিত পরীক্ষা দিতে বসে গেছে সহপাঠীরা, আর চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (চমেক) বার্ন ইউনিটের ১৫ নম্বর বেডে শুয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছে জেএসসি পরীক্ষার্থী রফিকুল ইসলাম। আহত রফিকুল ইসলাম কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর এলাকার মো.জাহাঙ্গীর আলমের ছেলে।

১০ নভেম্বর চট্টগ্রামে ঈদে মিলাদুন্নবীর জশনে জুলুসের মিছিলে অংশ নেয় রফিকুল। আনন্দের সাথেই তাদের যাত্রা শুরু হয় বাকলিয়ার তুলাতলী থেকে। কিন্তু নগরীর লালখান বাজার এলাকায় গিয়ে হঠাৎ পিকআপ ভ্যানের সাউন্ড সিস্টেমে জেনারেটরের বিস্ফোরণে রফিকুলসহ দগ্ধ হয় আরো পাঁচজন।

চট্টগ্রাম নগরের কালামিয়া বাজার এলাকায় পরিবারের সাথে বসবাস করে রফিকুল। স্থানীয় ইউসেফ বিদ্যালয় থেকে সে এবারের জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি)পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে। পাঁচটি পরীক্ষায় সুস্থভাবে অংশগ্রহণ করলেও বাকি দুটি পরীক্ষায় (বিজ্ঞান ও গণিত) অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

চমেকের বার্ন ইউনিটে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, রফিকুলকে বার্ন ইউনিটের ড্রেসিং রুমে ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করানো হচ্ছে। হাজার ব্যাথার আর্তনাদেও রফিকুল একটাই কথা বলে যাচ্ছে— ‘আমাকে নিয়ে যাও, আমি পরীক্ষা দেব। আমি পরীক্ষা দিতে পারবো। আমার অনেক যন্ত্রণা হচ্ছে কিন্তু তবুও আমি পরীক্ষা দিতে চাই। আমি পারবো পরীক্ষা দিতে। আমার সব বন্ধু পরীক্ষা দিবে। আমিও দিতে চাই।’

ছেলের এসব কথা শুনে কান্নারত অবস্থায় রফিকুলের মা রোকেয়া বেগম দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমার ছেলে জেএসসি পরীক্ষার্থী। বাসায় আমাদের কাউকে না জানিয়ে অন্য ছেলেদের সাথে জুলুসে চলে যায়। এমন দুর্ঘটনা হবে কে জানতো! ছেলের কান্না ও কষ্ট আমি কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না। ওর একটাই কথা ও পরীক্ষা দেবে। কিন্তু ও যে উঠে বসতেই পারছে না, কিভাবে যাবে পরীক্ষা কেন্দ্রে সেটা ওকে বোঝাতে পারছি না। ভালোভাবেই পাঁচটি পরীক্ষা শেষ করেছে রফিকুল। বাকি কেবল দুটি পরীক্ষা।’

রফিকুলের মা আরো বলেন, ‘গাড়িতে এসব সাউন্ড সিস্টেম না রাখলে কী হয়? যারা জুলুসের গাড়িতে সাউন্ড সিস্টেমের ব্যবস্থা করে তাদের জরিমানা করা উচিত। এ কারণেই কতজনকে দুর্ঘটনার শিকার হতে হল। একজনের অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হওয়ায় তাকে ঢাকায় নিয়ে গেলে। খুব কষ্ট লাগছে। আমার ছেলেটা পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ছটফট করছে। আল্লাহ আমার ছেলেকে যেনো বাঁচিয়ে রাখে, তাহলে জীবনে অনেক পরীক্ষা দিতে পারবে।’

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘রফিকুল ইসলামের ১৫ ভাগ পুড়ে গেছে। শুনেছি সে জেএসসি পরীক্ষার্থী। কিন্তু ওর পক্ষে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা সম্ভব নয়। ওর পেট থেকে পায়ের নিচের অংশ পর্যন্ত বার্ন হয়েছে। উঠে বসতেও পারছে না। সুস্থ হতে অনেক সময় লাগবে।

উল্লেখ্য, রোববার (১০ নভেম্বর) দুপুরে নগরীর লালখানবাজার এলাকায় জশনে জুলুসে অংশগ্রহণ করা একটি পিকআপ ভ্যানের সাউন্ড সিস্টেমে জেনারেটরের বিস্ফোরণে অগ্নিদগ্ধ হয়েছিল রফিকুলসহ আরো ছয়জন। বাকিরা হলেন, নুর নবী (৬), মো.কাউছার (২০), রিফাত (১০), ইয়ামিন (৯), হৃদয় (১৬)।

এসএএস/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!