‘জুতার বাড়ি’তে হল শিশু ধর্ষণচেষ্টার মীমাংসা, ‘টাকা খেয়ে’ মেম্বারের কাণ্ড

ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগ মীমাংসা করা হল ‘জুতার বাড়ি’ দিয়ে। অভিযোগ উঠেছে ষষ্ঠ শ্রেণীর এক ছাত্রীকে ধর্ষণচেষ্টার পর যৌননিপীড়কের পক্ষ নিয়ে টাকার বিনিময়ে নামমাত্র ‘সালিশ’ বসানো হয়। অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরও সেই বৈঠকে যৌননিপীড়ককে ‘জুতার বাড়ি’ দিয়েই খালাস দেন এক ইউপি সদস্য।

বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাতে ছদাহা ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ডে স্থানীয় ইউপি সদস্য আহমদ কবির মেম্বারের উপস্থিতিতে প্রায় শতাধিক মানুষ নিয়ে এই ধর্ষণচেষ্টার সালিশ বসে।

এর আগে গত ১০ নভেম্বর দুপুর আড়াইটার দিকে ছদাহার ২নং ওয়ার্ডের একটি বাড়িতে ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ুয়া ১০ বছরের এক কন্যাশিশু জকরিয়া নামের স্থানীয় এক ব্যক্তির উঠানে ঘুরতে গেলে শিশুটিকে টাকার লোভ দেখিয়ে তার পাকাবাড়ির একটি কক্ষে নিয়ে যান। বাসায় জকরিয়ার স্ত্রী না থাকার সুযোগে তিনি ওই শিশুকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। শিশুটি এতে ভয় পেয়ে পালিয়ে আসার সময় জকরিয়ার স্ত্রী দেখে তাকে ফেলেন। এ সময় স্ত্রী স্বামীর কুকর্মের প্রতিবাদ জানালে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে বাপের বাড়িতে তাড়িয়ে দেন।

পরে এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্ত্রী ধর্ষণচেষ্টার শিকার ওই স্কুলছাত্রীর মায়ের কাছে গিয়ে স্বামী অভিযুক্ত জকরিয়ার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে বলেন।

এরপর ওই স্কুলছাত্রীর মা-বাবা তাদের বাড়ির মালিকসহ স্থানীয় ইউপি সদস্য আহমদ কবিরকে ঘটনা জানান। কিন্তু আহমদ কবির মেম্বার পরিবারের মানসম্মান ও মামলার খরচের কথা উল্লেখ করে শিশুটির পরিবারকে ভয় দেখান। অভিযোগে জানা গেছে, এর আগে ওই মেম্বার ‘ঝামেলা থেকে বাঁচিয়ে দেওয়া’র কথা বলে অভিযুক্ত জকরিয়ার কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন।

গত বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) রাত আটটার দিকে জকরিয়ার বাড়িতে ইউপি সদস্য কবিরের উপস্থিতিতে সালিশ বৈঠক বসে। সেখানে ওই শিশু ও তার মা ঘটনার বিবরণ দিতে গিয়ে জানান, জকরিয়া শিশুদের প্রায়ই এরকম ‘খারাপ কাজে’ নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা চালান। এলাকায় এ নিয়ে তার কুখ্যাতি আছে।

পরে অভিযুক্ত যৌননিপীড়ক জকরিয়ার গালে স্যান্ডেলের কয়েকটি ‘বাড়ি’ দিয়ে ধর্ষণচেষ্টার অভিযোগের ‘মীমাংসা’ করা হয়।

ধর্ষণচেষ্টার মতো গুরুতর ফৌজদারি অপরাধ গ্রাম্য শালিসে মীমাংসা করা যায় কিনা— এমন প্রশ্নের জবাবে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আহমদ কবির বলেন, ‘ধর্ষণের হাত থেকে পালিয়ে বাঁচা মেয়েটির স্যান্ডেল দিয়ে রাতে সমাজের শত শত মানুষের সামনে জকরিয়ার গালে জুতো পিটা করেই শেষ করা হয় বিচারটি। তবে আমি কোন টাকা পয়সা নিই নাই।’

ছদাহা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মোশাদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, ‘ধর্ষণের চেষ্টা করার সময় কন্যাশিশুটি পালিয়ে এসেছে— এটা আমি শুনেছি। এই সংক্রান্ত কোনো বিচার না করার জন্য আমি সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্যকে নির্দেশনা দিয়েছিলাম।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!