জিরো ডিসচার্জ প্ল্যানের আওতায় আসছে চট্টগ্রামের ৭১ শিল্পপ্রতিষ্ঠান

ইটিপির (ইফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট) মাধ্যমে শোধিত পানি পরিবেশে ছেড়ে না দিয়ে পুন:ব্যবহার নিশ্চিত করতে জিরো ডিসচার্জ প্ল্যানের আওতায় আসছে বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের ৭১টি শিল্প প্রতিষ্ঠান। এসব প্রতিষ্ঠানে এই প্ল্যান ৫০ শতাংশ বাস্তবায়ন হলেও পরিবেশের ব্যাপক উন্নয়ন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফলে শিল্পাঞ্চলে পানি সংকটও দূর হবে। উল্লেখ্য, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রায় যে ১৭টি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে পানির পুন:ব্যবহার।

জানা গেছে, একই পানি বার বার ব্যবহার নিশ্চিত করতে ‘জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান’ পদ্ধতি গ্রহণ করেছে পরিবেশ অধিদপ্তর। এই পদ্ধতির মাধ্যমে শিল্প কারখানার ব্যবহৃত পানি ফেলে না দিয়ে পুনরায় ব্যবহার করার উপযোগী করে তোলা হবে। আগামী তিন বছরের মধ্যে ইটিপি আছে নগরের এমন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে এই প্রকল্পের আওতায় আনার পরিকল্পনা করা হয়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের কর্মকর্তারা জানান, জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান প্রকল্পের মাধ্যমে শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত পানি পুন:প্রক্রিয়াজাত করে অধিক ব্যবহার নিশ্চিত করা হবে। এর মাধ্যমে পানির ভূগর্ভস্থ স্তর নিচে নেমে যাওয়া হ্রাস, ইটিপির ব্যবহৃত পানি নদীতে পড়ে নদীর পানি দূষণ রোধ করা, পানি নষ্ট বা অপচয় না হওয়া, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ব্যবহৃত পানি নদীতে গিয়ে পানি দূষণ না হওয়া এবং নদী ও ভূগর্ভস্থ থেকে পানি কম আহরণ করা সম্ভব হবে।

জানা যায়, বর্তমানে চট্টগ্রাম মহানগরীতে মোট ১১০টি প্রতিষ্ঠান ইটিপি চালু করেছে। এর মধ্যে তরল বর্জ্য নির্গমনকারী ৭০ শতাংশ শিল্পপ্রতিষ্ঠানে জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য চিঠি দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর। প্রায় ৮৪টি প্রতিষ্ঠান এই প্ল্যান বাস্তবায়নের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তরে আবেদন করেছে। এর মধ্যে ৭১টি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ সব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চারটি প্রতিষ্ঠান জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে। ৬২টি প্রতিষ্ঠান আংশিক বাস্তবায়ন এবং ৫টি প্রতিষ্ঠান এখনো কার্যক্রম শুরু করেনি। নগরে আছে ছোট বড় প্রায় ৬০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান।
এই প্রকল্প শতভাগ বাস্তবায়ন করা প্রতিষ্ঠান চারটি হচ্ছে- মীর পাল্প অ্যান্ড পেপার; ক্যানপার্ক বাংলাদেশ অ্যাপারেলস (ইউনিট-৫), চিটাগাং এশিয়ান পেপার মিল এবং এমইবি এডিবল ওয়েল রিফাইনারি ইউনিট-২।

প্ল্যানটি আংশিক বাস্তবায়ন করা প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- এমইবি পেপার অ্যান্ড বোর্ড মিল, এশিয়া প্যাসিপিক পেপার মিল, এনএইচটি ফ্যাশন, এলিট পেইন্ট অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ চট্টগ্রাম, ইউনিলিভার বাংলাদেশ, ক্যানপার্ক বাংলাদেশ (ইউনিট-১ ও ২), কোয়ালিটেক্স ইন্ডাস্ট্রিজ বিডি, ক্রাউন মিলস বিডি, প্রিমিয়ার ১৮৮৮, ফেবিয়ান থ্রেড, এক্সপোর্ট প্যাক, কোটস (বাংলাদেশ), কেডিএস থ্রেড, ইউনুসকো টিঅ্যান্ডএ (বিডি) ইউনিট-২, ন্যাশনাল এক্সেসরিজ, মুনস্টার পেইন্টস অ্যান্ড কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ, ডেনিম প্লাস (বাংলাদেশ), সিনজেন্টা বাংলাদেশ, সানজি টেক্সটাইল, ইনোভা টেক্সটাইলস, ওয়েল ডিজাইনার্স, কেডিএস স্টিল, হেক্সাগণ কেমিক্যাল কমপ্লেক্স, আবুল খায়ের কনডেন্স মিল্ক অ্যান্ড বেভারেজ, বিডি সি ফুড, ইমাম বাটন ইন্ডাস্ট্রি, গ্লোবাল গার্মেন্টস, জিন্স ২০০০, ইউনিভার্সেল জিন্স, প্যাসিফিক জিন্স, ম্যান্স ফ্যাশন, ট্রান্সকম বেভারেজ, মেসার্স এবিবি, ভ্যানগার্ড গার্মেন্টস, আর্ক সী ফুডস, চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ, আরামিট থাই অ্যালুমিনিয়াম, মীনহার সি ফুডস, মেরিন সার্ভিস সেন্টার (ওয়ার্টসিলা) বাংলাদেশ, সি মার্ক বিডি, বে ফিশিং করপোরেশন, এপেক্স ফুডস, লিজ ওয়াশিং ইন্ডাস্ট্রিজ, ব্রাইটেক্স গার্মেন্টস অ্যান্ড ওয়াশিং, ইউনাইটেড ওয়াশিং, সামদানী ওয়াশ, ক্রিস্টাল ওয়াশ, এমএ ওয়াশ ইন্ডাস্ট্রিজ, স্মার্ট জিন্স, ইস্ট এশিয়া ইলেকট্রিক্যাল, সুরমা গার্মেন্টস ওয়াশিং অ্যান্ড ফিনিশিং কোম্পানি, গোল্ডেন হাইটস, গোল্ডেন হরাইজন (ওয়াশিং ইউনিট), হংকং ডেনিম বিডি, অ্যাপারেল প্রমোর্টাস, গ্লোরী ইন্ডাস্ট্রি, মেসার্স সেকশান সেভেন অ্যাপারেলস, ডেনিম এক্সপার্ট, পদ্মা রেজিন এবং ভিওটি অয়েল রিফাইনারী।
অন্যদিকে, অনুমোদন পেয়েছে কিন্তু এখনো কাজ শুরু করেনি এমন প্রতিষ্ঠানগুলো হলো- রীফ লেদার, এমএ রহমান ডাইং, সুপার নিটিং অ্যান্ড ডাইং মিলস, কেডিএস টেক্সটাইল এবং নেছারব এক্সেসরিজ বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রাম মহানগরের পরিচালক মো. আজাদুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘শিল্প ক্ষেত্রে জিরো ওয়াটার ডিসচার্জ’ কার্যক্রম চট্টগ্রামে বেশ সাফল্য লাভ করেছে। ২০১৮ সাল থেকে চালু হওয়া আমাদের এই প্ল্যানটি তিন বছর মেয়াদী। প্রতিষ্ঠানগুলো ২০১৮ সালে ৩০ শতাংশ, ২০১৯ সালে ৩০ শতাংশ এবং ২০২১ সালে শতভাগ এ প্ল্যান বাস্তবায়ন করবে। এই প্ল্যান বাস্তবায়িত হলে প্রতি বছর শিল্পাঞ্চলে পানি ব্যবহার কমে যাবে।’
মে মাস পর্যন্ত মোট সাতটি প্রতিষ্ঠান জিরো ডিসচার্জ প্ল্যান শতভাগ বাস্তবায়ন করেছে বলে জানান আজাদুর রহমান মল্লিক।

এমএ/এস.আর

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!