জিন নয় বরং তাপমাত্রাই সরীসৃপের লিঙ্গ নির্ধারণ করে

লাইফস্টাইল ডেক্স :

জন্মের সময় মানুষ এবং অন্যান্য প্রাণীদের লিঙ্গ কীভাবে নির্ধারিত হয়, তা নিয়ে বহুকাল ধরেই মানুষ ভাবনা-চিন্তা করতো। প্রাচীন গ্রীক ও রোমান পণ্ডিতেরাও এসব নিয়ে বিশদ আলোচনার চেষ্টা করেছিলেন। সেই প্রচেষ্টা হতেই একেকটা তত্ত্ব দাঁড় করিয়েছিলেন তাঁরা। যেমন- সাপ ও কচ্ছপদের দেখে কেউ কেউ বলেছিলেন, তাপমাত্রার তারতম্যের কারণে মানুষদেরও নারী-পুরুষ লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।

%e0%a6%ac%e0%a6%ac

একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় ভ্রূণ জন্ম নিয়ে বাড়তে থাকলে সেটা নারী হয়। আর সেটা হতে কম বা বেশি তাপমাত্রায় ভ্রূণ বাড়লে সেটা পুরুষ হয়ে জন্মায়। কেউ কেউ আবার বলেছিলেন, বাবা-মায়ের শরীরের বিভিন্ন অংশের হাড় ও পেশীর শক্তি এবং দৃঢ়তার কথা। এটিও নাকি ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারিত হয়ে থাকে। এছাড়াও ধারণা করা হতো, শুক্রাণু নারীর জরায়ুর একদম অন্য প্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছাতে পারছে কিনা, তাতেও নাকি লিঙ্গ নির্ধারিত হয়।অবাক করার মতো মজার একটি তত্ত্ব উঠে আসে রোমান প্রকৃতিবিজ্ঞানী ‘Pliny The Elder’ এর লেখায়।তাঁর লেখায় উল্লেখ করেছিলেন, মাদী ভেড়া হতে কন্যা ভেড়া শাবক পেতে হলে পুরুষ ভেড়ার ডান অণ্ডকোষ শক্ত করে বেঁধে রাখতে।

 

এর আগে ৩৩০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ নাগাদ অ্যারিস্টটলও সবাইকে পরামর্শ দিয়ে গিয়েছিলেন, পুরুষদের বাম অণ্ডকোষ সার্জারি করে কেটে ফেলে দেয়ার জন্যে, যাতে তারা পুত্র সন্তানের জন্ম দিতে পারে এবং এই তত্ত্বই মধ্যযুগ পর্যন্ত ইউরোপে প্রচলিত ছিলো।

 

মানুষের লিঙ্গ নির্ধারণের ক্ষেত্রে তাপমাত্রার উল্লেখযোগ্য তেমন ভূমিকা থাকার প্রমাণপত্র না মিললেও সরিসৃপের ক্ষেত্রে এই সত্যতা প্রতিষ্ঠিত।সরিসৃপদের লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া প্রধানত দুটি প্রক্রিয়ায় হয়ে থাকে যাদের মধ্যে একটি হল-জিনগত বা জিনোটাইপিক লিঙ্গ নির্ধারণী প্রক্রিয়া অপরটি হল তাপমাত্রা নির্ভর লিঙ্গ নির্ধারণী প্রক্রিয়া।কাছিম কিংবা লিজার্ডদের, স্তন্যপায়ীদের মতো লিঙ্গ নির্ধারনী জিন X ও Y বিদ্যমান থাকে।এদের মধ্যে যারা স্ত্রী তাদের একই ধরনের দুটি X জিন থাকে যাদের হোমোগ্যামিটিক বলা হয়।

 

অন্যদিকে পুরুষদের একটি X ও একটি Y জিন থাকে যাদের হেটেরোগ্যামিটিক বলা হয়।সরিসৃপ বিশেষত সাপদের লিঙ্গ নির্ধারণী জিনজোড়া হল W এবং Z। পুরুষ সাপদের দুটি Z জিন(হোমোগ্যামিটিক) এবং স্ত্রী সাপদের একটি Z ও একটি X জিন(হেটেরোগ্যামিটিক) বিদ্যমান।তাপমাত্রা নির্ভর লিঙ্গ নির্ধারণী প্রক্রিয়ায়,সরিসৃপের ডিমের অভ্যন্তরস্থ ভ্রুণ তৈরীর একটি নির্দিষ্ট সময়কালে পরিবেশের তাপমাত্রাই ঠিক করে দেয় ভবিষ্যতের সন্তানটি পুরুষ না স্ত্রী হবে।সাধারণত ডিম পাড়ার পরপরই এ তাপীয় সংবেদনশীলতা শুরু হয় এবং সরিসৃপদের এই প্রক্রিয়া অনেকাংশেই নির্ভর করে ডিম পাড়ার ও পরিচর্যার স্থানের তাপমাত্রার উপর।

 

উদাহরণস্বরূপ, নিন্ম তাপমাত্রাযুক্ত স্থানে সাধারণত ২৮ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় কাছিম ডিম পাড়লে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ডিম ফুটে পুরুষ বাচ্চাই বের হয় এবং অপেক্ষাকৃত ঊষ্ণ বাসস্থানে(৩১ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের উপরে) তার বিপরীত ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।কুমিরের বিভিন্ন প্রজাতি বিশেষত আমেরিকান এলিগেটরদের মধ্যে গবেষণা চালিয়ে দেখা গেছে, মাঝারি বা অত্যানুকুল তাপমাত্রায় পুং সন্তান এবং অতি নিন্ম ও অতি উচ্চ তাপমাত্রা স্ত্রী সন্তানের জন্ম হয়।

 

বিভিন্ন গবেষণায়ও প্রমাণিত হয়েছে যে তাপমাত্রা নির্ভর লিঙ্গ নির্ধারণী প্রক্রিয়ায় জিনোটাইপের তেমন কোন ভূমিকাই নেই।অবাক করার মতো ব্যাপার হচ্ছে,ভ্রুণীয় দশায় এজাতীয় সরিসৃপদের নির্দিষ্ট কোন লিঙ্গই থাকে না যতক্ষণ না অবধি তারা তাপীয় সংবেদনশীল দশায় প্রবেশ করে।

 

সূত্র : সবুজ মন্ডল

এ এস / জি এম এম / রাজীব প্রিন্স :

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!