জিইসিতে ১ টাকার জন্য যাত্রী হত্যার একমাসেও চার্জশিট দেয়নি খুলশী পুলিশ

মাসখানেক আগে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে মাত্র এক টাকা ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে জসিম উদ্দিন নামের এক যাত্রীকে বাস থেকে ফেলে হত্যা করেন বাসের হেলপার আরিফ। নিহত জসিম উদ্দিন পটিয়ার দক্ষিণ ছনহরা গ্রামের আলী নবীর ছেলে এবং নগরীর আগ্রাবাদ এলাকার এইচএনএস অটোমোবাইলসে ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। পরে নিহতের স্ত্রী সেলিনা আকতার বাদী হয়ে খুলশী থানায় একটি মামলা করেন। আলোচিত এই ঘটনার প্রায় একমাস যেতে চললেও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য এখনও চার্জশিট দিতে পারেনি খুলশী থানা পুলিশ।

জানা যায়, গত ২৫ সেপ্টেম্বর রাতে আগ্রাবাদের অফিস থেকে ১০ নম্বর রুটের একটি বাসে ফেরার সময় মাত্র এক টাকা ভাড়া নিয়ে তর্কের জেরে জিইসি মোড়ে আসার পর জসিম উদ্দিনকে (৪৭) বাসের হেলপার আরিফ কিল ঘুষি মারেন। পরে বাস থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলে জসিম উদ্দীন গুরুতর আহত হন। পর দিন ২৬ সেপ্টেম্বর তিনি নগরীর পার্কভিউ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

হেলপার আরিফ পরে পুলিশকে দেওয়া দেওয়া স্বীকারোক্তিতেও জানিয়েছিলেন, ঘটনার দিন রাতে জসিম উদ্দিন আগ্রাবাদ থেকে বহদ্দারহাট যাচ্ছিলেন। এ সময় জিইসি পৌঁছালে তিনি আরিফকে ১২ টাকা ভাড়া দেন। তার ভাড়া ছিলে ৭ টাকা। ৫ টাকা ফেরত পাওয়ার প্রত্যাশায় তিনি ওই হেলপারকে ১২ টাকা দেন। কিন্তু হেলপার তাকে ৪ টাকা ফেরত দেয়। ১ টাকা কম হওয়ায় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি হয়। কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে কিল ঘুষির ঘটনা ঘটে। পরে হেলপার আরিফ জসিম উদ্দিনকে লাথি মেরে চলন্ত বাস থেকে ফেলে দেন। এতে জসিম মাথায় প্রচণ্ড আঘাত পান।

এদিকে দুর্ঘটনার পর স্থানীয়রা ওই বাসের চালক ও হেলপারকে ধরে পুলিশে দিলেও প্রায় একমাস পেরোতে চলেছে। তবে এখনও ময়নাতদন্ত রিপোর্টের জন্য মামলার চার্জশিট দিতে পারেনি খুলশী থানা পুলিশ। ইতিমধ্যে আটক চালক ও হেলপার বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন। বাসটির হেলপার কক্সবাজারের রামু থানার বড়ুয়া পাড়া গ্রামের ফজলুল হকের ছেলে মো. আরিফ (১৯) এবং চালক ঝালকাঠি জেলার সদর থানার বালিঘোনা গ্রামের মনির হোসেনের ছেলে মো. রাকিবকে (২২) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

এদিকে স্বামী হত্যার বিচারের আশায় দিন গুণছেন নিহত জসিমের স্ত্রী সেলিনা আকতার। ১৮ অক্টোবর নিহত জসিমের স্ত্রী সেলিনা আকতার ও তার তিন এতিম শিশুসহ বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সদস্যরা খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদুজ্জামানের সাথে দেখা করে স্বামী হত্যার বিচারের খোঁজ নেন।

জসিমের স্ত্রী সেলিনা আকতার বলেন, ‘মাত্র এক টাকার জন্য কেউ কাউকে মেরে ফেলতে পারে আমার বিশ্বাস হয় না। পরিবহন শ্রমিকদের কাছে একটা মানুষের জীবন কি মাত্র এক টাকার চেয়েও কম? গণপরিবহন শ্রমিকরা এত হিংস্র হয় কেমনে? একমাত্র উপার্জনক্ষম স্বামীর হঠাৎ মারা যাওয়ার পর দুই মেয়ে এক ছেলে নিয়ে কষ্টে দিন পার করছি । সামনের দিনগুলোতে কী অপেক্ষা করছে তা জানি না।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার স্বামীকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যার পর কোনো গণপরিবহন শ্রমিক-মালিক নেতা আমাদের খোঁজখবর নেননি। আমি আমার স্বামী হত্যার বিচার যথাযথ বিচার চাই। যারা তিনটি শিশুকে এতিম করে তাকে বিধবা করে দিয়েছে তাদের সর্বোচ্চ সাজা দাবি করছি।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা খুলশী থানার এসআই সেলিম আল দীন বলেন, ‘আসামিরা আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে নিহতের ময়নাতদন্তের রিপোর্টর জন্য এখনও চার্জশিট দিতে পারিনি। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে মামলার চার্জশিট দেওয়া হবে।’

সিএম/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!