জালিয়াতি করে মদ খালাস, বন্দর-কাস্টমস কর্মকর্তাদের ‘সন্দেহ’ দুদকের

আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট জড়িত থাকার সত্যতা মিলেছে

আইপি (ইমপোর্ট পারমিট) জালিয়াতির মাধ্যমে আমদানি করে বন্দর ও কাস্টমস থেকে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে দুই লরি মদের চালান খালাসের ঘটনায় বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের জড়িত থাকতে পারে বলে সন্দেহ করছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। একইসঙ্গে এ ঘটনায় আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টরাও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে বলে প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে দুদক।

এছাড়া কাস্টমস কর্মকর্তাদের পাসওয়ার্ড হ্যাক করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সার্ভারে প্রবেশ করে জাল চালান রিপোর্ট তৈরি করে পণ্য খালাস করে ওই জালিয়াতি চক্র—এমনটাই জানিয়েছে দুদক এনফোর্সমেন্ট টিম।

এর আগে গত ২২ জুলাই গভীররাতে চট্টগ্রাম থেকে খালাস হওয়া দুই কন্টেইনার মদের চালান নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও থেকে আটক করে র‌্যাব।

কাস্টম হাউস চট্টগ্রামের এআইআর টিম, আনস্টাফিং, স্ক্যানিং ও গেট ডিভিশনকে ফাঁকি দিয়ে কাভার্ডভ্যানে বের করা হয় কন্টেইনার দুটি।

আইপি জালিয়াতি করে কুমিল্লা ও ঈশ্বরদী ইপিজেডের দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করে মেশিনারি ও ববিন ঘোষণায় চালান দুটি খালাস করা হয়। এ দুটি চালানের আমদানিকারক ছিল বিএইচকে টেক্সটাইল ইপিজেড ঈশ্বরদী, পাবনা (BIN : 001163633-1105) কর্তৃক দাখিলকৃত বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-২০০১৫৬ এবং হাসি টাইগার কো. ইপিজেড কুমিল্লার (BIN : 0003056111-0601) দাখিলকৃত বিল অব এন্ট্রি নম্বর সি-২০০২৩১।

দুটি চালানেই ২০ জুলাই বিল অব এন্টি দাখিল করা হয় চট্টগ্রাম কাস্টমসে। আর আইপি নম্বর ব্যবহার করা হয় IDI805210008 এবং IE2705220030। নম্বর যাচাই করা হলে আইপি জাল বলে প্রমাণ হয়।

এ ঘটনায় শুধুমাত্র সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের আসামি করে মামলা করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। মামলাটি তদন্ত করছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

বৃহস্পতিবার (২০ অক্টোবর) দুপুরে দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপপরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত এর নেতৃত্বে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে আরও ছিলেন উপপরিচালক (সংযুক্ত) মো. ফজলুল বারী ও সহকারী পরিচালক মো. এমরান হোসেন।

দুদক জানায়, অভিযানে গিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার সঙ্গে অভিযোগের বিষয়ে আলোচনা করা হয়। এই সংক্রান্ত রেকর্ডপত্র তাৎক্ষণিকভাবে চাওয়া হয়। কাস্টমস কমিশনার তাৎক্ষণিক কিছু রেকর্ডপত্র সরবরাহ করে। বাকি রেকর্ডপত্রগুলো বিভিন্ন দপ্তরে ছড়িয়ে আছে উল্লেখ করে এই বিষয়ে চাহিদাপত্র দিতে বলেন কমিশনার। পরে তাৎক্ষণিক চাহিদাপত্র দেয় দুদক। এরপর সরবরাহ করা হয় রেকর্ডপত্র।

এছাড়া চট্টগ্রাম বন্দরের যে সকল জায়গায় পণ্য খালাস এবং স্ক্যানিং করা হয় সে সকল জায়গা সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়। সেখানে দেখা গেছে, গার্মেন্টস পণ্য আনার ঘোষণা দিয়ে পাঁচটি বিল অব এন্ট্রির মাধ্যমে মদ খালাস করা হয়।

দুদক জানায়, অভিযানে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের জালিয়াতির বিষয়টির প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় বন্দর ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের জড়িত থাকতে পারে। চাহিদাপত্রের প্রেক্ষিতে পরবর্তীতে চট্টগ্রাম কাস্টমস ও বন্দর কর্তৃপক্ষ হতে পাওয়া রেকর্ডপত্র পর্যালোচনা করে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দেওয়া হবে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয়, চট্টগ্রাম-১ এর উপ-পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত।

এমএ/ডিজে

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!