জালিয়াতি করে চাকরি চসিকে, পাস না করেই উপসহকারী প্রকৌশলী

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আমির আবদুল্লাহ খান। প্রায় সাত বছর আগে উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি হয়েছিল এই কর্মকর্তার। ১৬ বছর আগে সরকারি একটি প্রতিষ্ঠান থেকে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে পাশ না করার পরও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে জমা দেন ডিপ্লোমা পাস অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট। সিটি কর্পোরেশনের সচিবালয় শাখায় এই উপসহকারী প্রকৌশলীর এখন পর্যন্ত ওই এক অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট ছাড়াও আর কোনো সার্টিফিকেট নথিপত্রে জমা নেই।

অন্যদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী আমির আবদুল্লাহ খান নিয়ম অনুযায়ী দায়িত্ব পালন করেন না বলেও রয়েছে অভিযোগ। প্রতিদিন কর্মদিবসে দুপুরের খাবার বিরতির পর থেকে তিনি প্রায়ই কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকেন। চসিকের কর্মকর্তা হলেও চট্টগ্রাম নগরীর চকবাজার আলী প্লাজায় টিভি-ফ্রিজের মেকানিক হিসেবে পরিচিতি রয়েছে আমির আবদুল্লাহ খানের।

জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৯ জানুয়ারি চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বিদ্যুৎ শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগদান করেন আমির আবদুল্লাহ খান। ওই সময় তার নিয়োগ নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করেছিলেন সেখানকার সাবেক প্রধান প্রকৌশলী মোখতার আলম। সাবেক ওই প্রধান প্রকৌশলী সম্পর্কে আমির আবদুল্লাহ খানের দুলাভাই হন। তার বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার মোবারকখালী এলাকায়।

সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯৭ সালের জুন-জুলাই সেশনে চট্টগ্রাম সরকারি পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউট থেকে ইলেক্ট্রিক্যাল বিভাগে ডিপ্লোমা কোর্স শেষ করার পর আমির আবদুল্লাহ খান মূল সার্টিফিকেটের পরিবর্তে অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট জমা দেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে। এই অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেটের সিরিয়াল নম্বর ৭১৮, রেজিস্ট্রেশন নম্বর ২৪২৪, রোল নম্বর ৯২১৬৯ এবং সেশন ১৯৯২-৯৩। কিন্তু তিনি আদৌ ডিপ্লোমা পাস করেছেন কিনা— সে বিষয়ে সত্যতা যাচাই করতে ওই প্রতিষ্ঠানে খোঁজ নেওয়া হলেও সেখানে পাসের সত্যতা মেলেনি।

খোঁজ নিতে গেলে চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের অধ্যক্ষ স্বপন কুমার নাথ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমির আব্দুল্লাহ খান এখানকার সাবেক ছাত্র ছিল। তিনবার সে রেফার্ড পরীক্ষা দিয়েও পাশ করতে পারেনি। তার কোর্স শেষ করার সার্টিফিকেট যেটা দেখিয়েছে, সেটা এখান যে কোনো ছাত্র কোর্স শেষ করার আগে নিতে পারে। এই অ্যাপিয়ার্ডকে মূল সনদ বলা যাবে না। সে যে সালে পাশ করার তথ্য দেখিয়েছে বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড থেকে তার নামে এখানে কোনো সার্টিফিকেট আসেনি। আমাদের রেজিস্ট্রার খাতায় নথিপত্রে তাকে সার্টিফিকেট দেওয়া হয়েছে— এমন কোনো তথ্যও নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আমির আবদুল্লাহ খান বলেন, ‘আমি একটু ব্যস্ত। আপনার সঙ্গে পরে কথা বলবো।’ কিন্তু পরে তাকে একাধিকবার কল কল করা হলে সাড়া মেলেনি।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সচিব আবু শাহেদ চৌধুরী বলেন, ‘চাকরিতে যোগদানের সময় আমির আবদুল্লাহ খানের সার্টিফিকেট নিয়ে জালিয়াতির বিষয়টি এখন শুনলাম। আমি নোট নিয়েছি, খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। সত্যতা পেলে আইন অনুসারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করা হবে।’

মুআ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!