জালিয়াতির মাধ্যমে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের রিপোর্ট সরিয়ে ফেলার চেষ্টায় সংঘবদ্ধ চক্র

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদন ছবিসহ হুবহু কপি করে পুরনো তারিখ দিয়ে তথাকথিত একটি ব্লগসাইটে প্রকাশ করে উল্টো চট্টগ্রাম প্রতিদিনের বিরুদ্ধেই কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ করা হয়েছে সার্ভার ব্যবস্থাপনাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে। এমন অবস্থায় সার্ভার কর্তৃপক্ষের অনুরোধে ওই প্রতিবেদনটির প্রকাশ সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে। তবে ইস্যুটির সমাধান হওয়া মাত্রই সেটি আবার দৃশ্যমান করা হবে।

গত ১৪ মার্চ ৭:৪৫ মিনিটে ‘হুমকি দিয়ে ‘পাওয়ার’ দেখালেন পিএইচপির এমডি ইকবাল— ২৩ মিনিটের কলরেকর্ড, ৭৯ এসএমএস— সাম্প্রদায়িক আক্রমণ, ডিজিএফআইয়ের নাম দিয়ে হুমকি’ শিরোনামে চট্টগ্রাম প্রতিদিনে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই রাতে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সার্ভার ব্যবস্থাপনাকারী কোম্পানিকে মেইল পাঠিয়ে একটি অভিযোগ করেন ইলিয়াস হোসাইন নামের এক ব্যক্তি— যিনি eliashossain.org নামে একটি ব্লগসাইটের মালিক বলে সেখানে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংঘবদ্ধ একটি চক্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি অনলাইনমাধ্যম থেকে সরিয়ে ফেলার জন্য এমন অভিনব জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বানোয়াট অভিযোগ করেছে। অথচ অভিযোগকারী নিজেই চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কনটেন্ট হুবহু চুরি করে কপিরাইট লঙ্ঘন করেছে।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের সার্ভার ব্যবস্থাপনাকারী কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো ওই মেইলে ইলিয়াস হোসাইন নামের এক ব্যক্তি দাবি করেন, চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার eliashossain.org নামের ব্লগসাইটে গত ১০ মার্চ প্রকাশিত হয়েছিল। এর সঙ্গে তিনি একটি লিংকও দিয়েছেন।

ওই লিংকে গিয়ে দেখা গেছে, ১৪ মার্চ চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিই সেখানে হুবহু প্রকাশ করা হয়েছে, এমনকি লেখায় ব্যবহৃত ছবিটিও এক। চট্টগ্রামে প্রতিদিনে ১৪ মার্চ তারিখে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিই সেখানে ১০ মার্চের তারিখ দিয়ে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে। কথিত ব্লগসাইটটির (https://eliashossain.org/) অভিযোগ যে মিথ্যা, তার প্রমাণ রয়েছে তাদের প্রকাশিত প্রতিবেদনেই। সেই ছবির ভেতরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের লোগোসহ রিপোর্টের স্ক্রিনশটও তারা লুকাতে পারেনি। তবে চুরি ধরা পড়ে যাওয়ার ভয়ে তারা লেখার ভেতরে ব্যবহৃত চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিজস্ব ইন্টারনাল লিংকগুলো মুছে দিয়েছে। এক্ষেত্রেও তারা প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছে।

প্রথমবার ১৪ মার্চ রাতে কথিত ওই ব্লগসাইটে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের মূল প্রতিবেদন থেকে মাত্র আটটি প্যারাগ্রাফ প্রকাশ করা হয়েছিল। ওই সময় সেখানে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের নিজস্ব ইন্টারনাল লিংকগুলো বহাল ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) সকালে দেখা গেছে, ইউটিউবের ভিডিওটি ছাড়া চট্টগ্রাম প্রতিদিনের পুরো রিপোর্টই হুবহু সেখানে তুলে দেওয়া হয়েছে যথারীতি পেছনের তারিখে। প্রতারণা ধরা পড়ার ভয়ে তারা অবশ্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত ভিডিওটির লিঙ্কটি রাখেনি। ইন্টারনাল লিংকগুলোও মুছে দিয়েছে। তবে ছবির ভেতরে চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অফিসিয়াল লোগোসহ রিপোর্টের স্ক্রিনশট লুকাতে পারেনি।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির বিষয়বস্তু ছিল— পিএইচপি গ্রুপের এমডি ইকবাল হোসেন কর্তৃক চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রকাশককে হুমকি দেওয়া নিয়ে কলরেকর্ডের বিস্তারিত নিয়ে। সেই কলরেকর্ড শুধুমাত্র চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছেই সংরক্ষিত রয়েছে— যা চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও (https://www.youtube.com/watch?v=PrVljjGywDc) ১৪ মার্চ একইসঙ্গে প্রকাশিত হয়। তার আগে তথাকথিত ব্লগ সাইটে সেই কলরেকর্ডের বিস্তারিত কিভাবে প্রকাশ করা সম্ভব?

চট্টগ্রাম প্রতিদিনের অনলাইন সংস্করণে ইতিমধ্যে ২৫ হাজারেরও বেশি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে eliashossain.org নামের তথাকথিত ব্লগসাইটের প্রায় সব কন্টেন্টই ভুয়া এবং অন্য সাইট থেকে কপি করা হয়েছে— যা কপিরাইটের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। সবমিলিয়ে এটা স্পষ্ট যে, চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির কারণে প্রশ্নের মুখে পড়া এক বা একাধিক চক্র প্রতিবেদনটি মুছে ফেলার চেষ্টা করছে, তাই তারা শুধুমাত্র প্রকাশের তারিখ বদলে দিয়ে মিথ্যা অভিযোগের আশ্রয় নিয়েছে। অথচ ওয়ার্ডপ্রেসসহ বিভিন্ন কনটেন্ট ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে পরিচালিত সাইটে যেকোনো পোস্টের তারিখ সহজেই পরিবর্তন করা যায়। প্রশ্ন উঠতে পারে, অখ্যাত কোনো সাইট কি এভাবে তারিখ বদলে দিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসে প্রকাশিত রিপোর্টকেও তাদের নিজস্ব বলে দাবি করে কপিরাইট লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলতে পারে?

বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে বিশেষ পৃষ্ঠপোষকতায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র কপিরাইট লঙ্ঘনের মিথ্যা অভিযোগ করে গুরুত্বপূর্ণ সংবাদমাধ্যমগুলোকে হয়রানির চেষ্টা করে আসছে। এর শিকার হয়েছে প্রথম আলো, বিডিনিউজ ডট কমের মতো সংবাদমাধ্যমও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!