জালালাবাদের ভোটে বাবুর সঙ্গে পাল্লা দেওয়াই বড় চ্যালেঞ্জ ইব্রাহিমের সামনে

চট্টগ্রাম সিটির ভোট

চট্টগ্রাম নগরীর ‘ক্রাইম জোন’ হিসেবে খ্যাত ২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সাবেক কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবুকে বাদ দিয়ে নগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে মনোনয়ন দিয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে এখানে ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ হিসেবে নির্বাচন করছেন সাহেদ ইকবাল বাবু।

সাহেদ ইকবাল বাবু স্থানীয় রাজনীতিতে নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনের অনুসারী। অন্যদিকে ইব্রাহীম প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারী।

সাহেদ ইকবাল বাবুর দাবি অভাবনীয়ভাবে লবিং করে দলীয় মনোনয়ন বাগিয়ে নিয়েছেন মোহাম্মদ ইব্রাহিম। যেটি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের বেশিরভাগই মানতে পারেননি। এছাড়া কাউন্সিলর হিসেবে গত মেয়াদে তার যে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তার ধারারাহিকতা রক্ষায় সাধারণ মানুষের অনুরোধে তিনি নির্বাচন করছেন।

অন্যদিকে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীলদের কাছ থেকে সহযোগিতা না পাওয়ার কথা স্বীকার করে নিলেও ইব্রাহীম বলছেন, প্রধানমন্ত্রী নিজে যাচাই বাছাই করে যে মনোনয়ন দিয়েছেন সেটি নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলছে— তারা আর যাই হোক আওয়ামী লীগের নেতা কর্মী হতে পারেন না।

এক্ষেত্রে শুরু থেকে ইব্রাহীমের পক্ষে নির্বাচনী প্রচার প্রচারণায় সরব থাকা ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ আহমদ চৌধুরী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে চিকিৎসার জন্য ভারতে অবস্থান করায় নিজের শক্তির জায়গায় বেশ বড় আঘাতই পেয়েছেন দলীয় প্রার্থী ইব্রাহীম। অন্যদিকে ভোটের লড়াইয়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. ইয়াকুবকেও পাশে পাচ্ছেন না তিনি। ফলে সাহেদ ইকবাল বাবুর সাথে পাল্লা দিয়ে লড়াই করাটাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাড়িয়েছে ইব্রাহীমের জন্য। তবু জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।

অন্যদিকে সাহেদ ইকবাল বাবু বলছেন, গত মেয়াদে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে প্রায় ১৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন করেছেন তিনি। ব্যাপক উন্নয়নের পাশাপাশি ক্রাইম জোন হিসেবে পরিচিত ছিন্নমূল ও এর আশেপাশের এলাকায় জিম্মি হয়ে থাকা সাধারণ মানুষকে স্বস্তির জীবন উপহার দিতে নানা পদক্ষেপও নিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি করোনাকালে নিজ তহবিল থেকে প্রায় ১৫ লাখ টাকার ত্রাণ সহায়তা নিয়ে এলাকাবাসী পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। এমনকি এসব করতে গিয়ে নিজেও আক্রান্ত হয়েছিলেন করোনাভাইরাসের ছোবলে। এসবের কারণেই ভোটারদের আস্থার জায়গায় থাকবেন তিনি— জোর দিয়েই বলছেন বাবু।

চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে সাহেদ ইকবাল বাবু বলেন, ‘খুব ছোট কিছু পদক্ষেপ আমি নিতে পেরেছি যেগুলো অনেক বড় সমস্যার সমাধান করে দিয়েছে। যেমন এখানে একসময় নিয়মিত জুয়ার আসর বসতো। অনেক বড় অপরাধের পেছনে ভূমিকা ছিল এর। যেমন অনেকে জুয়া খেলার জন্য চুরি-ছিনতাই করতো। একবার একটা বিচার আমি পেলাম— যেখানে জুয়ার বাজিতে এক নারীর তালাক হয়ে যায়। এটিকে সিরিয়াসলি নিয়ে সেখানে জুয়ার আসর বন্ধ করে দিই আমি। এটি কেউ ভাবতেও পারতো না। এই পদক্ষেপটা খুব ছোট ছিল। কিন্তু এতে অনেক মানুষের উপকার হয়েছে।’

‘তাছাড়া গত ৫ বছরে আমার এলাকায় প্রায় ১৬০ কোটি টাকার উন্নয়ন কাজ হয়েছে। এগুলো তো দৃশ্যমান। ওয়ার্ড কার্যালয়ের সেবাও আমি নির্বিঘ্ন করেছি। কোনো সেবার জন্য সরকারি ফির বাইরে একটা টাকা নিইনি। কোনো কোনো ক্ষেত্রে গরিব দুস্থদের জন্য সরকার নির্ধারিত ফিও মওকুফ করে দিয়েছি। এসব কারণে ভোটাররা এখানে বিকল্প কাউকে পছন্দ করছে না’— বলছিলেন বাবু।

তবে উন্নয়নের গালভরা কথায় ভোটারদের ভোলানোর চেষ্টাকে ‘অযৌক্তিক’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী ইব্রাহীম বলেন, ‘উন্নয়ন খালি জালালাবাদে হয়েছে এমন তো নয়। সারা দেশেই হয়েছে। এখন সে সময় তিনি দায়িত্বে ছিলেন, তাই সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোয় প্রতিনিধিত্ব করেছেন তিনি। কথা হচ্ছে দায়িত্বটা তিনি কতটা সৎভাবে পালন করতে পেরেছেন। সেটা জানতে হলে সরেজমিনে এসে দেখে যান— উন্নয়ন কাজে কী পরিমাণ দুর্নীতি এখানে হয়েছে। এসবও তো ভোটাররা জানে। তাছাড়া উন্নয়ন কি তিনি নিজের পকেটের টাকায় করেছেন? আওয়ামী লীগের উন্নয়নকে পুঁজি করে দলের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন তিনি— এটা তো দল ও নেত্রীর সাথে বেইমানি।’

তবে এটিকে নেত্রীর সাথে বেইমানি হিসেবে মানতে রাজি নন বাবু। উল্টো ইব্রাহীমের বিরুদ্ধেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে মনোনয়ন বাগিয়ে নেওয়ার অভিযোগ এনে বাবু বলেন, ‘আমাদের ওয়ার্ডে দুজন হাজী ইব্রাহীম। একজন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও অন্যজন যিনি মনোনয়ন পেয়েছেন। দুজনই গতবার নির্বাচন করেছেন। এবার মনোনয়ন পেতে সহ সভাপতি হাজী ইব্রাহিমের অনেক তথ্যও সুবিধামত নিজের খাতায় দেখিয়েছেন মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থী। তাছাড়া গত নির্বাচনে হাজি ইব্রাহিম ভাই যে ছয়টি কেন্দ্রে জিতেছেন তার মধ্যে চারটি কেন্দ্রেই জিতেছেন বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনজুর আলম। পক্ষান্তরে আমি যে চারটি কেন্দ্রে জিতেছি তার চারটি কেন্দ্রেই আওয়ামী লীগের মনোনীত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দীনও জিতেছেন। উনার (ইব্রাহীমের) ভাইয়েরা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আছেন, সরকারবিরোধী নাশকতা মামলাও আছে উনার ভাইদের বিরুদ্ধে। তো দলকে কে ঠকালো?’

অন্যদিকে এসব কথাকে ‘অবান্তর ও অনধিকার চর্চা’ দাবি করে ইব্রাহীম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মনোনয়ন দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। তিনি স্পষ্ট বলে দিয়েছেন তিনি বিভিন্নভাবে যাচাই বাছাই করে মনোনয়ন দেন। এখন যারা সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা তো খোদ প্রধানমন্ত্রীর কথাকেই অসম্মান করছেন। আনুগত্য থাকলে তো এমনটা করতে পারতেন না।’

অভিযোগ ইব্রাহীম সমর্থকদেরও কম নেই। নগর ছাত্রলীগের ধর্ম বিষয়ক উপ সম্পাদক এমআরএ হৃদয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘কাউন্সিলর বাবুর ছোট ভাই জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত। তাছাড়া উনার পরিবারের একাধিক সদস্য সরাসরি জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত।’

তবে এমন অভিযোগ অনুমানের উপর ভিত্তি করে বিরোধিতার স্বার্থেই তোলা হচ্ছে মন্তব্য করে বাবু বলেন, ‘আমার ভাই তাবলীগ জামাত করে, জামায়াত নয়। এগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন কথা। বিরোধিতা করার স্বার্থেই বলা।’

নির্বাচনে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে কেমন সহযোগিতা পাচ্ছেন— এমন প্রশ্নের জবাবে ইব্রাহীম বলেন, ‘ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক কাউন্সিলর ফরিদ ভাই প্রথম দফায় আমার পক্ষে খুব খেটেছেন। কিন্তু এখন তিনি অসুস্থ হয়ে ভারতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আল্লাহ উনাকে সুস্থতা দান করুন। আর দলের সেক্রেটারি ইয়াকুব ভাই আমাকে কোনোভাবেই সহযোগিতা করছেন না। আমি তিনবার উনার বাড়িতে গেছি, উনার পায়ে ধরে সালাম করছি। কিন্ত তিনি দেখাও করেন না, কথাও বলেন না। খালি বলেন মহানগর আওয়ামী লীগের লিখিত নির্দেশ পাননি। কিন্তু মহানগরের বক্তব্য তো স্পষ্ট। দেখি এখন উনি কী করেন।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!