জামিনে বেরিয়ে বহদ্দারহাটে আবারও চাঁদাবাজিতে সেই ‘হামকা’ ইমরান গ্রুপ

জামিনে বেরিয়ে আবারও চাঁদাবাজিতে নেমেছেন র‍্যাবের কথিত সোর্স ও সাংবাদিক পরিচয় দেওয়া ‘হামকা’ ইমরান ও তার দলবল। তবে এবার তিনি পাল্টে ফেলেছেন চাঁদাবাজির ধরণ। চট্টগ্রাম নগরীর বহদ্দারহাটের ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে উচ্ছেদের ভয় দেখিয়ে দলবল পাঠিয়ে তিনি টাকা তুলছেন। দোকানপ্রতি দৈনিক ৩০০ টাকা না দিলে ব্যবসা করতে দেবেন না বলেও হুমকিও দেন তিনি। ব্যবহার করছেন চট্টগ্রামের ‘আন্ডারগ্রাউন্ড’ একটি পত্রিকাকেও।

জানা গেছে, গত সপ্তাহে জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হন ‘হামকা’ ইমরান। অভিযোগ রয়েছে, আগে নিজেকে র‍্যাবের সোর্স ও সাংবাদিক হিসেবে দাবি করে প্রতারণা ও চাঁদাবাজি করতেন তিনি। কিন্তু এবার তিনি টার্গেট করেছেন ফুটপাতের অবৈধ দোকানগুলোকে। দৈনিক টাকা না দিলে নিউজ করে তাদের উচ্ছেদ করা হবে বলেও হুঁশিয়ারি দেন ইমরান। এজন্য তিনি প্রতিনিধিও পাঠান প্রতি দোকানে। প্রতিনিধির মাধ্যমে মোবাইল ফোনে কথা বলে তিনি টাকা আদায়ও করছেন নিয়মিত।

বহদ্দারহাট সিটি কর্পোরেশন মার্কেটের সামনে ফুটপাতের ফল ব্যবসায়ী মঞ্জু বলেন, ‘গত তিন থেকে চারদিন আগে ইমরান নিজে আমার দোকানে এসে দৈনিক ৩০০ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দিলে পত্রিকায় সংবাদ ছাপিয়ে দোকান উচ্ছেদ করে দেবেন বলে জানান।’

পারভেজ নামে বহদ্দারহাটের এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘তিনদিন আগে ইমরানের এক প্রতিনিধি এসে মোবাইল ফোনে তার সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। এ সময় ইমরান বলেন, প্রতিদিন ২০০ টাকা চাঁদা দিতে হবে। চাঁদা না দিলে দোকান বসাতে পারবে না। অন্যথায় পত্রিকায় সংবাদ ছাপিয়ে দোকান উচ্ছেদ করাবেন। আশপাশের সকল দোকানদারের কাছ থেকে একইভাবে চাঁদা দাবি করেছে ইমরান।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ইমরান বলেন, ‘মিথ্যা নিউজে আমি গ্রেপ্তার হয়ে গত সপ্তাহে বেরিয়েছি। জেল থেকে বেরিয়ে আমি চট্টগ্রামের বাইরে আছি। কিন্তু আমার নামে যে অভিযোগ আনা হয়েছে তা সম্পূর্ণ মিথ্যা। আমি কারোর কাছ থেকে চাঁদা দাবি করিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি ফটো সাংবাদিকতা শিখছি। এ সময়ে আমাকে নিয়ে কেউ ষড়যন্ত্র করছে। কিন্তু আমি এসবের মধ্যে নেই। আমার বিরুদ্ধে আবারও মিথ্যা সংবাদ করা হলে আমি আদালতে মামলা করবো।’

এর আগে গত ৩১ জুলাই তার বিভিন্ন অপকর্মের জন্য চট্টগ্রাম নগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হয় কথিত সাংবাদিক ইমরান।

উল্লেখ্য, নগর ও উপজেলার বিভিন্ন থানায় ইমরানের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, আধিপত্য বিস্তারে মারামারিসহ নানা অভিযোগে একাধিক মামলা রয়েছে। ২০১৬ সালের ২৯ অক্টোবর হাটহাজারী দক্ষিণ ছাদেকনগর এলাকা থেকে দুটি মোটরসাইকেল চুরি করে পালিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশের হাতে আটক হন ইমরান। এ সময় তার বিরুদ্ধে হাটহাজারী থানায় চুরির মামলা দায়ের হয়। এ মামলায় তাকে প্রধান আসামি করে ২০১৭ সালের ৬ জুলাই চার্জশিট দাখিল করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোল্লা মো. জাহাঙ্গীর কবির।

অন্যদিকে ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর ষোলশহর নাজিরপাড়া কবরস্থান এলাকায় জায়গার বিরোধ নিয়ে সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে ইমরানের বিরুদ্ধে। এ সময় সাইফুলের প্রায় দেড় লাখ টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন, ঘড়ি ও নগদ টাকা ছিনিয়ে নেন তিনি। এ ঘটনায় নগরের পাঁচলাইশ থানায় তিনজনের নাম উল্লেখ করে এবং ১৫ থেকে ২০ জন অজ্ঞাত আসামি করে মামলা হয়। সেই এজাহারে ইমরানকে ৩ নম্বর আসামি করা হয়।

এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ জুন পূর্বশত্রুতার জের ধরে মুরাদপুর ১ নম্বর রেলগেট এলাকায় মো. রায়হান (৩৩) নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে বেতন-বোনাসের টাকা ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেন ইমরান ও তার সহযোগীরা। এসময় ইমরান ভুক্তোভোগীকে চাপাতি দিয়ে কুপিয়ে তার দুহাত জখম করেন। পরে ছিনতাইয়ের অভিযোগে রায়হান পাঁচলাইশ থানায় ৪ জনকে আসামি ও ৪ থেকে ৫ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২ নম্বর আসামি হিসেবে ইমরানের নাম রয়েছে।

আরএস/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!