জামিনে বেরিয়েই স্কুলছাত্রীকে তুলে নিয়ে গেল সাতকানিয়ার সন্ত্রাসী ফারুক, এলাকাজুড়ে আতঙ্ক

অস্ত্র আইনের মামলা থেকে জামিনে বেরিয়ে এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণ করে নিয়ে গেল চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার নলুয়ার সন্ত্রাসী ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক। ১৪ বছর বয়সী ওই ছাত্রী গাটিয়াডেঙ্গা সফিয়া মমতাজুল হক উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। এমন ঘটনায় এলাকাজুড়ে আতঙ্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ ঘটনায় ১৫ সেপ্টেম্বর সাতকানিয়া থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ওই ছাত্রীর নানা।

অপহরণের শিকার ওই ছাত্রীর নানা বলেন, ‘আমরা থানায় এজাহার জমা দিয়েছি। আমরা থানায় এজাহার দাখিল করার পর থেকে ফারুক বিভিন্নভাবে হুমকি ধমকি দিচ্ছে। আমরা নাতনির জানমালের নিরাপত্তা নিয়েও আমরা শংকিত। আমি নাতনিকে উদ্ধারে ঊর্ধ্বতন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

তবে সাতকানিয়া থানার ওসি তারেক মো. আবদুল হান্নান বলেন, ‘বাদির লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ভিকটিমকে উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মো. ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক বাদির নাতনিকে গত ১৫ সেপ্টেম্বর বিকেল ৩টায় নতুন বাড়ি থেকে পুরনো বাড়িতে যাওয়ার সময় জোরপূর্বক অপহরণ করে নিয়ে যায় অজ্ঞাত স্থানে। বিকেল ৫ টা ৯ মিনিটে টাইগার ফারুক মোবাইল ফোনে ভিকটিমের নানীকে জানান, ওই ছাত্রী তার হেফাজতে আছে।

স্থানীয়রা জানান, ওই ছাত্রীর বাড়ি আমিলাইশ ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে। তবে সে পার্শ্ববর্তী নলুয়ায় নানার বাড়ি পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গায় থেকে পড়ালেখা করে। এর আগে সন্ত্রাসী টাইগার ফারুকের নজর পড়ে ওই ছাত্রীর মায়ের ওপর। মোবাইলে ভয়ভীতি দেখিয়ে তাকে উত্যক্ত করতে থাকে ফারুক। একপর্যায়ে জোরপূর্বক অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে যায় ওই গৃহবধূকে। সেই থেকে কয়েক বছর ফারুক ওই গৃহবধূকে ঘরে আটকে রেখে বসবাস করতে থাকে স্বামী-স্ত্রীর মতো। কিন্তু তাদের বিয়ে হয়েছে— এমন তথ্য কেউ জানেন না।

জানা গেছে, গত ১৩ আগস্ট রাতে নলুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের বাড়িতে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে সন্ত্রাসী ফারুকসহ তার সহযোগীরা। ওই ঘটনায় ২২ আগস্ট জেলে যায় ফারুক। এই সুযোগে ফারুকের কবল থেকে পালিয়ে ওই গৃহবধূ চলে যান আগের স্বামীর কাছে। কিন্তু ফারুক জেল থেকে বেরিয়ে ওই গৃহবধূকে আবারও তুলে আনার জন্য ওঠেপড়ে লাগে। কিন্তু এরপরও বাগে আনতে না পেরে ফারুক আগের ঘরের মেয়েকে সর্বশেষ অপহরণ করে নিয়ে গেল।

স্থানীয়রা জানান, ফারুক ওরফে টাইগার ফারুক মাদকাসক্ত ও সন্ত্রাসী। এলাকায় এমন কোনো অপরাধ নেই যা সে করে না। অস্ত্রবাজি, মারামারি, চাঁদাবাজি, ডাকাতি, জমি দখল, গরিব ও অসহায় মহিলাদের নির্যাতন, মাদকসেবন ও বিক্রয়, আশপাশের এলাকায় সন্ত্রাসী হিসেবে ভাড়ায় খাটাসহ বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে ফারুক জড়িত। মূলত স্থানীয় প্রভাবশালী ফখরুদ্দীন মিন্টু ও কামাল উদ্দিনের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে ফারুকের সন্ত্রাসী হয়ে ওঠা। সম্প্রতি জেলে গেলে মিন্টুর লোকজনই তাকে জেল থেকে ছাড়িয়ে আনে।

যোগাযোগ করা হলে ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ‘আমি গরিব ও অসহায় মানুষ, ছোটখাট ব্যবসা করে জীবনযাপন করি। কয়েক বছর আগে আমার স্ত্রীকে সন্ত্রাসী ফারুক অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নিজের কাছে রাখে। তার কাছ থেকে পালিয়ে আসায় এখন আমার মেয়েকে অপহরণ করে নিয়ে গেছে। বউ-মেয়ে সবকিছু ফারুকের হাতে জিম্মি। আমার স্ত্রী নিজেই বলেছে তাদের মধ্যে কোনো বিয়ে হয়নি। সে এখন আমার কাছে আছে। জীবনের নিরাপত্তার কথা ভেবে সন্ত্রাসী ফারুকের বিরুদ্ধে কিছুই করতে পারছি না। কারণ তার পক্ষে কিছু প্রভাবশালী রয়েছে। তাদের আশ্রয়ে থেকে ফারুক নানা অপকর্ম ও অপরাধ কর্মকাণ্ড চালিয়ে থাকে।’

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!