জামায়াতের মজলিসে শুরায় চট্টগ্রামের ৮, নতুন মুখ নুরুল আমিন

মাসব্যাপী গোপন ভোট

চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা মিলে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরায় স্থান পেয়েছেন আট নেতা। এর মধ্যে নগরের পাঁচ, দক্ষিণ জেলার দুই ও উত্তর জেলার একজন। কঠোর গোপনীয়তায় মাসব্যাপী ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে ২৯ নভেম্বর। এতে সারাদেশের ‘রোকন’রা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন।

এবারের মজলিসে শুরায় চট্টগ্রাম থেকে স্থান পেয়েছেন চট্টগ্রাম নগরের আমির মুহাম্মদ শাহজাহান, সেক্রেটারি নজরুল ইসলাম, নায়েবে আমির শাহজাহান চৌধুরী ও আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নুরুল আমিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আমির জাফর সাদেক, সেক্রেটারি ড. হেলাল উদ্দিন নোমান এবং উত্তর জেলা আমির অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা, দক্ষিণ জেলা ও নগর মিলে প্রায় আড়াই হাজার রোকন রয়েছেন। জামায়াতের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ২৯০ জন রোকনের বিপরীতে একজন শুরা সদস্য নির্বাচিত হন। অবশিষ্ট ১৪৬ জনের জন্য একজন শুরা সদস্য নির্ধারণ করা যাবে।

এবারের শুরা সদস্যদের মধ্যে মুহাম্মদ শাহজাহান শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতি ছিলেন। তার বাড়ি কক্সবাজার জেলায়। চট্টগ্রাম নগর আমিরের দায়িত্ব পাওয়ার আগে তিনি কক্সবাজার জেলা আমির ছিলেন। সম্প্রতি তিনি নগর সেক্রেটারি ও নবনির্বাচিত কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরা সদস্য নজরুল ইসলামসহ ১২ জন নেতাকর্মী নিয়ে সূবর্ণা আবাসিক এলাকা থেকে পাঁচলাইশ থানা পুলিশের হাতে আটক হয়ে কারাগারে আছেন। তবে আদালত তাদের জামিন মঞ্জুর করেছেন। যে কোন সময় মুক্তি পেতে পারেন বলে জানা গেছে।

নগর জামায়াতের দুই নায়েবে আমীরের একজন সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের সাবেক সাংসদ শাহজাহান চৌধুরী, অপরজন শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আ জ ম ওবায়েদুল্লাহ। শাহজাহানের অনুসারীদের দাবি সাতকানিয়া-লোহাগাড়া আসনের আরেক সাবেক সাংসদ আ ন ম শামসুল ইসলামের প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নগর জামায়াতে দায়িত্বের বাইরে ছিলেন শাহজাহান চৌধুরী। মুহাম্মদ শাহজাহান নগর আমির হওয়ার পর শাহজাহান চৌধুরীকে আবার দায়িত্বে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। জামায়াতের ভয় ছিল শাহজাহান চৌধুরী শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুর ইসলামি রাজনৈতিক দল ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’-এ চলে যেতে পারেন। কারণ শাহজাহান-মঞ্জুর সম্পর্ক অন্য নেতাদের চেয়ে বেশি ঘনিষ্ঠ ছিল বলে দাবি অনেকের।

আ জ ম ওবায়েদুল্লাহর পৈত্রিক বাড়ি ভোলায় হলেও স্কুলজীবন থেকে তিনি চট্টগ্রামে। দীর্ঘদিন সহযোগী সংগঠনগুলো দেখাশোনা করলেও নগর আমির হিসেবে আ ন ম শামসুল ইসলামের শেষ মেয়াদে ওবায়দুল্লাহকে এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি করা হয়। তার পরের কমিটিতে আফসার উদ্দিন চৌধুরীর সাথে নায়েবে আমির করা হয়। শাহজাহান-নজরুল কমিটিতে তিনি নায়েবে আমিরের দায়িত্বে আছেন।

অধ্যক্ষ নুরুল আমিন চৌধুরীর বাড়ি চট্টগ্রামের ফটিকছড়িতে। আশির দশকের শেষ দিকে তিনি শিবিরের চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি ছিলেন। প্রচার সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন শিবিরের কেন্দ্রীয় কমিটিতেও। দীর্ঘদিন নগর জামায়াতের বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করলেও এবারই প্রথম কেন্দ্রীয় কমিটিতে স্থান করে নিলেন।

দক্ষিণ জেলা আমির জাফর সাদেক পেশায় একজন ব্যবসায়ী। দীর্ঘদিন তিনি দক্ষিণ জেলা জামায়াতের আমিরের পদে আছেন। সাতকানিয়া পৌর নির্বাচনে একবার পরাজিত হয়েছিলেন। সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও জমা দেননি।

দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. হেলাল উদ্দীন মোহাম্মদ নোমান আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি রিকয়ারমেন্ট কোর্সেস বিভাগের প্রভাষক। এই বিভাগটি মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ে জামায়াতের পছন্দের বিষয়গুলো পড়ানো হয়। এই বিভাগের শিক্ষকরাও সবাই শতভাগ জামায়াতে এজেন্ডা বাস্তবায়নে সচেষ্ট থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অধ্যক্ষ আমিরুজ্জামান ব্যারিস্টার সুলতান আহমদ ডিগ্রি কলেজে অধ্যাপনা করতেন। বর্তমানে আন্তর্জাতিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রামের বোর্ড অফ ট্রাস্ট্রিজের সদস্য। উত্তর জেলা জামায়াতে দীর্ঘদিন সেক্রেটারির দায়িত্ব পালন করেছেন। উত্তর জেলা জামায়াতের আমির মফিজুর রহমানকে দল থেকে বহিস্কারের পর আমিরুজ্জামান আমির পদে আসেন।

যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতের প্রথম সারির নেতাদের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর জামায়াত কার্যত কূলহারা হয়ে পড়ে। মাঝের সারির নেতারা এখন দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। তার উপর সংস্কারের কথা বলে একটি অংশ দলত্যাগ করেছেন। যারা আছেন তারা দলীয় কর্মসূচিতে পরিবর্তন আনার কথা ভাবছেন। ইতোমধ্যে আমির নির্বাচিত হয়েছেন সিলেটের ডা. শফিকুল ইসলাম। মজলিসে শুরা গঠন হয়েছে। শুরার সাথে পরামর্শ করে ডা. শফিক তার কমিটির সেক্রেটারি ঠিক করবেন। সেক্রেটারি হিসেবে মহেশখালী-কুতুবদিয়া আসনের সাবেক সাংসদ এএইচএম হামিদ হোসাইন আযাদের কথা নেতাকর্মীদের মুখে জল্পনা আছে। এরপর ঠিক হবে কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ, তারপর নির্বাহী পরিষদ। এরপর সকল মহানগর, জেলা থেকে শুরু করে ইউনিট পর্যায়ের কমিটি গঠন হবে বলে জানা গেছে।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!