নিস্ফল/ নিজ দূর্গেও জামায়াতকে পাশে পায়নি অলির ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’

জামায়াতের ওপর ভর করে নিজের দূর্গে এসে পাঁচ দিনের মাথায় বিশাল শোডাউনের নানা প্রস্তুতি নিলেও তার প্রতিফলন ঘটাতে পারেনি অলি আহমদের ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চ’। দাওয়াত দেওয়ার পর জামায়াতসহ নতুন এই রাজনৈতিক প্ল্যাটফরমে সমমনা অনেকের আসার কথা থাকলেও সেই জামায়াতই আসেনি। তবে জামায়াত নেতারা বলছেন, একসময় তাদের চরম বিরোধী অলির এ তৎপরতায় নৈতিক সমর্থন থাকলেও কৌশলগত কারণে আপাতত প্রকাশ্যে আসতে চান না তারা। এরকম পরিস্থিতিতে গত চার দিন আগে ঢাকায় যেসব দাবি করেছিলেন ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চের’ সংবাদ সম্মেলনে, চট্টগ্রামের নিজ দুর্গে এসে সেটিই মূলত পুনঃপাঠ করেছেন তিনি।

সোমবার (১ জুলাই) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ড. কর্নেল (অব.) অলি আহমেদ ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চে’র শোডাউন করার চেষ্টা করেন। নতুন কিছু ঘোষণা না আসলেও ঢাকার সেই ১৮ দফা দাবি পুনরায় পাঠ করেন। এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধকালীন স্মৃতিচারণও করেন। যদিও এর আগে চট্টগ্রাম আসার পথে সোমবার সকালে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গুলিসহ এলডিপির মহাসচিব রেদোয়ান আহমেদ আটকের ঘটনায় সমাবেশ নিয়ে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়। পরে সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত নিলেও জামায়াত তাদের জনশক্তিকে আর সমাবেশে যোগ দিতে বার্তা পাঠায়নি।

চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে 'জাতীয় মুক্তি মঞ্চের' সভা
চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের বঙ্গবন্ধু হলে ‘জাতীয় মুক্তি মঞ্চের’ সভা

এ ছাড়াও জামায়াত নেতাকর্মীরা বিভিন্ন মামলায় পলাতক আসামি হওয়ায় পুলিশের ভয়ও ছিল বলে জানা গেছে। কারণ সমাবেশ শুরুর আগ থেকে নগর পুলিশের সিনিয়র সহকারী কমিশনার নোবেল চাকমার নেতৃত্বে বিপুলসংখ্যক পুলিশ মোতায়েন ছিল প্রেসক্লাবের সামনে। পাশাপাশি সাদা পোশাকে গোয়েন্দা নজরদারিও ছিল।

জামায়াতের একটি থানা কমিটির সভাপতি নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া জোট নেত্রী। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও আমাদের আপত্তি আছে। অলি সাহেব যেহেতু এই দুটি বিষয়কে সামনে রেখে অগ্রসর হচ্ছেন তাতে আমাদের নৈতিক সমর্থন আছে।’ তবে জোটে যাওয়ার ব্যাপারে দলীয় সিদ্ধান্তের বিষয়টি তিনি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, ‘জাতীয় ঐক্য নিয়ে যিনিই কাজ করবেন আমরা তাদের সাথে থাকতেই পারি।’

এদিকে অলি আহমদ ‘জাতীয় মুক্ত মঞ্চ’কে ‘জাতির মুক্তি মঞ্চ’ আখ্যা দিয়ে বলেন, ‘বিগত দুটি সংসদ নির্বাচন নিয়ে মানুষের প্রশ্ন আছে। সরকার গঠন অবৈধ। তাই তাদের হাত থেকে জাতিকে মুক্ত করতে আমাদের এই উদ্যোগ। আমাদের সংগ্রাম জাতির মুক্তির জন্য। আমরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করে তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করবো। খালেদার মুক্তিই জাতির মুক্তি।’

জামায়াতকে পাশে না পেলেও ২০ দলের আরেক শরিক দল কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ ইবরাহিম বলেন, ‘২০ দলীয় জোটে আমরা ছিলাম, আছি, থাকবো। জোটের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিগত শীর্ষ বৈঠকগুলোতে জোটের পরীক্ষিত শরিকরা উপস্থিত ছিলেন না। আমাদের এই জোটে যাদের ভালো লাগবে তারা সবাই আসবে। সবার জন্য আমাদের দরজা খোলা।’

গত ২৭ জুন ঢাকায় জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে নতুন করে জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ যে ১৮ দফা দাবি দিয়েছিলেন এলডিপির সভাপতি কর্নেল (অব.) অলি আহমদ। ১৮ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে দেশবিরোধী চুক্তি প্রকাশ, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান রক্ষা, জাতীয় বিশেষজ্ঞ কমিশন গঠন, গুম-খুন বন্ধের পদক্ষেপ ও মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার।

সমাবেশে বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মোহাম্মদ ইবরাহিম বীরপ্রতীকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক শাহাদাত হোসেন সেলিম, সাবেক এমপি নুরুল আলম চৌধুরী, ইসমাঈল হোসেন বেঙ্গল, বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন চট্টগ্রাম নগর সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর চৌধুরী, জাতীয় দলের সভাপতি অ্যাডভোকেট এহসানুল হুদা, জাগপার সিনিয়র সহ-সভাপতি প্রকৌশলী রাশেদ প্রধান, নগর সভাপতি আবু আনাস, এলডিপির রাঙামাটি সভাপতি দিবাকর দেওয়ানসহ কল্যাণ পার্টি ও এলডিপির নগর, জেলা নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

বক্তারা বিএনপি নেতৃবৃন্দের সমালোচনা করে বলেন, মীরজাফর সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেনি। ষড়যন্ত্রই করেছিল। নির্বাচনের আগে বিএনপিসহ ঐক্য ফ্রন্ট নেতৃবৃন্দ বঙ্গভবনে কী সুক্ষ্ম সমঝোতা করেছে তা এখনো অপ্রকাশিত রয়ে গেল। দেশে মেগা প্রকল্পের নামে মেগা লুটপাট হচ্ছে।

এফএম/এডি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!