জামালখানে প্রকাশ্য চাঁদাবাজিতে কাউন্সিলরের ‘নিজের লোক’

হাঁটার রাস্তা বন্ধ করে দোকান লাগানো হচ্ছে ভাড়ায়

ফুটপাতে দোকান বসানো নিষিদ্ধ থাকলেও চট্টগ্রাম নগরের জামালখান এলাকায় সেটা বোঝার উপায় নেই। চট্টগ্রামের ‘হেলদি ওয়ার্ড’ নামে পরিচিত জামালখানের ফুটপাতের বেশিরভাগই দখল করে স্থায়ী স্থাপনা গড়ে তুলেছেন খোদ কাউন্সিলরই। জনপ্রতিনিধি হয়ে জনগণের হাঁটার রাস্তা বন্ধ করে তিনি ভাড়ায় লাগিয়েছেন একের পর এক দোকান। আবার যেসব দোকান থেকে ভাড়া আদায় করতে পারছেন না তাদের কাছ থেকে চাঁদা আদায়ে লাগিয়েছেন ‘নিজের লোক’। কাউন্সিলর যাদের পরিচয় দিচ্ছেন ‘ভাই’ কিংবা ‘কর্মী’ বলে।

অভিযোগ রয়েছে, জামালখানের ফুটপাতে কাউন্সিলরের অনুসারীদের চাঁদা না দিলে বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যবসায়ী যদি চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানান, তাহলে তাকে পড়তে হয় নির্যাতনের মুখে। অনেক সময় জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান।

ঝামেলার ভয়ে বেশিরভাগ ভুক্তভোগীই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ না করলেও সম্প্রতি এ ধরনের ঘটনায় থানার শরণাপন্ন হয়েছেন কাউন্সিলরের অনুসারীদের হাতে নির্যাতিত এক ব্যবসায়ী। চাঁদা না দেওয়ায় তার দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিতেও বাধ্য করেছে চাঁদাবাজরা— এমনটিই জানিয়েছেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ী জাকারিয়া চৌধুরী নোমান।

জানা গেছে, ২৯ সেপ্টেম্বর জামালখান লিচুবাগান এলাকায় চাঁদা না দেওয়ায় ভাংচুর করা হয় জাকারিয়া চৌধুরী নোমানের দোকান এবং তাকেসহ মারধর করা হয় দোকান কর্মচারীদেরও। পরে চাঁদাবাজদের নির্যাতনের মুখে দোকানটি অন্যত্র সরিয়ে নিতেও বাধ্য হন নোমান।

ব্যবসায়ী নোমান নগরীর কোতোয়ালী থানায় লিখিত অভিযোগে জানান, জামালখান ওয়ার্ড কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের দুই অনুসারী যোজন (২৯) ও সাদ্দাম হোসেনের (৩০) নেতৃত্বে একদল মাদকসেবী চাঁদার দাবিতে নোমানের দোকানটি ভাংচুর ও বন্ধ করে দেয়। হামলার পরদিন বৃহস্পতিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এ অভিযোগ দায়ের করা হয়।

অভিযোগ দায়েরের ব্যাপারটি স্বীকার করে তদন্তকারী কর্মকর্তা বাবলু কুমার পাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, সাদ্দাম ও যোজনের নামে একটি অভিযোগ এসেছে। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে দেখছি। দ্রুত এ বিষয়ে রিপোর্ট জমা দেবো।

অভিযুক্ত সাদ্দামকে মাদকসসেবী দাবি করে নোমান বলেন, ২৭ আগস্ট ইয়াবাসহ পুলিশের হাতে আটক হন সাদ্দাম। সে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী। কিন্তু কাউন্সিলরের কাছের লোক বলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এলাকার কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমনের নাম ভাঙ্গিয়ে তারা এমন অপকর্ম করে যাচ্ছে বলে জানান ভুক্তভোগী নোমান।

নোমানের অভিযোগের ব্যাপারে কাউন্সিলর শৈবাল দাশ সুমন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘তারা আমার কর্মী, আমার ভাই— এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।’ অভিযুক্ত চাঁদাবাজদের পক্ষে সাফাই গেয়ে তিনি বলেন, ভুক্তভোগী দোকানদার নোমান থানায় মামলা করার অধিকার রাখে না। কারণ সে ফুটপাতে দোকান করছে। তার কাছে ট্রেড লাইসেন্সও নেই।’

অবৈধ দোকান হলেও চাঁদা নেওয়ার ব্যাপারটি বৈধ কিনা এমনটা জানতে চাইলে সুমন বলেন, ‘এগুলো মিথ্যা অভিযোগ, সে (নোমান) এগুলো প্রমাণ করতে পারবে না। সে বানিয়ে বলছে।’

এদিকে নেতার সুরে সুর মিলিয়ে অভিযোগটি ‘২০০ ভাগ মিথ্যা’ বলে জানিয়েছেন অভিযুক্ত সাদ্দাম। তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এমন কোনো ঘটনাই ঘটেনি। আমি জানিও না যে আমার বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করা হয়েছে।’

তবে কাউন্সিলর সুমন ও সাদ্দামের সব কথাকে উড়িয়ে দিয়ে ব্যবসায়ী নোমান অভিযোগ করেন, তারা নিজেদের বাঁচাতে মিথ্যা বলছে। সেদিন কী হয়েছে, কে হামলা করেছে— তা সিসিটিভি ফুটেজ দেখলে পরিষ্কার হয়ে যাবে। এর আগেও একাধিকবার তাদের চাঁদা দিতে বাধ্য হন বলে জানান তিনি।

বিএস/কেএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!