জাতীয় দলের সব ফরম্যাট নিয়ে ভাবছেন মুমিনুল

জাতীয় দলের অন্যতম সফল ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক সৌরভ। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের ধারাবাহিকতা ঈর্ষনীয়। এক সময়তো টেস্ট গড় ছিল সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান ডন ব্রাডম্যানের পর। টেস্ট ক্রিকেটে নিজের আসন পাকাপোক্ত করে নিলেও ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টির দরজা যেন মুমিনুলের জন্য বন্ধ। অবশ্য টি-টোয়েন্টি দলে তিনি কোন সময়ই খুব নিয়মিত ছিলেন না। তবে এক সময় টেস্টের পাশাপাশি কিছুদিন ওয়ানডে দলেও ছিলেন মুমিনুল হক; কিন্তু কালের আবর্তে এখন আর ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি- কোনোটাতেই বিবেচনায় আসেন না। এখন তিনি পুরোদস্তুর টেস্ট স্পেশালিস্ট।

২০১৯ সালের মার্চে ওয়েলিংটনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্ট দলেও ছিলেন মুমিনুল হক; কিন্তু ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে লাল সবুজ জার্সি গায়ে ওঠে না অনেকদিন। শেষ ওয়ানডে খেলেছেন গত বছর ২৬ সেপ্টেম্বর দুবাইয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে। আর টি-টোয়েন্টি ম্যাচে বাংলাদেশ দলকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ছয় বছরেরও বেশি সময় আগে, ২০১৪ সালের ১ এপ্রিল।

মোটকথা, তার সমবয়সী আর সতীর্থরা যখন প্রায় তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলার জন্য ব্যস্ত সময় কাটায়, মুমিনুল তখন অপেক্ষায় থাকেন কবে টেস্ট সিরিজ হবে। কোন দিন শুরু অমুক দলের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ!

কে না চায় সব ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলতে? টেস্ট, ওয়ানডে আর টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটে জাতীয় দলে খেলার চেয়ে ভাল লাগার ও সুখের আর কি আছে? মুমিনুল হক সৌরভও সেটা চান। তবে চাইলেই তো আর হবে না। এজন্য সবার আগে দরকার পারফরমেন্স। সেটা কি তিন ফরম্যাটে সমান ভাল খেলা? সৌম্য সরকার, লিটন দাস আর সাব্বির রহমান রুম্মনরা কি সমান ভাল খেলে তিন ফরম্যাটেই দলে জায়গা করে নিয়েছেন?

একটু খুঁটিয়ে দেখুন, আপনা আপনি উত্তর পেয়ে যাবেন। হয়তো একটি ফরম্যাটে একটু বেশি ভাল খেলেছেন। রান করেছেন। নামের পাশে সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি যোগ হয়েছে বেশ। তখন টিম ম্যানেজমেন্ট আর নির্বাচকদের কাছেও আস্থা বাড়ে। তারা ভাবেন, ‘আরে অমুক তো অমুক ফরম্যাটে বেশ ভাল খেললো। ধারাবাহিকভাবে রান করলো। তাহলে তাকে অন্য ফরম্যাটেও নেয়া যায়। হয়ত তাতেও সফল হবে।’

আসলে টিম ম্যানেজমেন্ট আর নির্বাচকরা কোন এক ফরম্যাটে রান করতে দেখলেই তাকে নিয়ে ভাবেন বেশি। তার প্রতি আস্থা বাড়ে। তার দিকে নজরটাও থাকে বেশি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহালে এমন নজিরই বেশি। ফর্মে আর রানে থাকলে সেই ক্রিকেটারই বিবেচনায় থাকেন। সেই শাহরিয়ার নাফীস, জুনায়েদ সিদ্দিকী, নাজিমউদ্দীন, ইমরুল কায়েস, এনামুল হক বিজয়- সবার ক্ষেত্রেই এমনটা দেখা গেছে। কোন এক বিশেষ ফরম্যাটে ভাল খেলে রান করে বাকি ফরম্যাটেও দলে জায়গা পেয়েছেন।

জাতীয় দলের সব ফরম্যাট নিয়ে ভাবছেন মুমিনুল 1
জাতীয় দলে সব ফরম্যাটে থিতু হওয়ার জন্য টেস্ট ক্রিকেটে খুব ভালো করাটা জরুরী মনে করেন মুমিনুল।

মুমিনুল হকও তা খুব ভালই বোঝেন, জানেন। এ কারণেই আপাততঃ তার লক্ষ্য টেস্টে খুব ভাল খেলা। রান করা এবং পরিসংখ্যান তথা গড়টাকে খুব ওপরে নিয়ে যাওয়া। তার অনুভব তাহলেই সুযোগ আসবে অন্য ফরম্যাটেও।

এ কারণেই তার চোখ শুধুই বিপিএলের ওপর স্থির নয়। জানেন, বিপিএলে ভাল খেললে নজরে আসবেন। বিবেচনায়ও থাকবেন। তারপরও কক্সবাজারের পরিপাটি ব্যাটিং শৈলির বাঁ-হাতি উইলোবাজের মূল লক্ষ্য আগে টেস্টে খুব ভাল খেলা। রান করা এবং পরিসংখ্যানটাকে সমৃদ্ধ করা। এ কারণেই মুখে এমন কথা, ‘না, আমি শুধু বিপিএল নিয়ে ওভাবে চিন্তা করছি না। আমার কাছে মনে হয়, টেস্ট ক্রিকেটে যদি আমি খুব ভালো গড় নিয়ে যাই বা বিপিএলে ভালো অবস্থান নিয়ে যাই, যদি ভালো করতে পারি তাহলে ভালো একটা সুযোগ আসবে।’

নতুন কোচের সঙ্গে সৌজণ্য বিনিময়, হাই-হ্যালো ছাড়া সে অর্থে কোন কথা হয়নি। স্কিল নিয়ে কোন কথা-বার্তাও হয়নি তার। ‘মাঠের টেকনিক্যাল কোনও বিষয়ে কথা হয়নি। হাই-হ্যালো হয়েছে শুধু। দেখা যাক, পরে কি হয়।’

আজ জাতীয় দলের অনুশীলনের পর শেরে বাংলায় উপস্থিত সাংবাদিকদের সাথে আলাপে কোচের কাছে তার কি প্রত্যাশা আর কোচ তার কাছে কি চান? প্রশ্ন করা হলে তা নিয়েও কথা বলেন মুমিনুল। যেহেতু কোচ সবে কাজ শুরু করেছেন। কাজেই ওই ধরনের কথা বার্তা হয়নি। তবে মুমিনুলের ব্যাখ্যা, ‘এখনও ওভাবে চিন্তা-ভাবনা করিনি। হেড কোচ ডোমিঙ্গো যে পরামর্শ দেবেন, যেটা আমার জন্য দরকার সেটা নিবো। আমার যদি ভালো লাগে তাহলে ওভাবে নিবো। সবকিছু মিলে হয়তো ভালোই হবে।’

কোচ কি চাচ্ছে? তা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে মুমিনুল চান নিজের কাজটি ঠিকমত করতে। তার কথা, ‘কোচ কি চাচ্ছেন ওটা চিন্তা না করে নিজের কাজ ঠিকভাবে করলেই হয়। যেমন আপনি যদি ফিটনেসের দিক দিয়ে বা ব্যাটিং বোলিংয়ে ভালো করেন তাহলে দুনিয়ার যত ভালো কোচ হোক বা যত খারাপ কোচ হোক- আপনাকে এমনিতেই দলে নেবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!