‘জহুর আহমদ চৌধুরী রাজনৈতিক আদর্শিক বিশ্বাসের শিকড়’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমদ বলেছেন, ত্যাগ ও আপসহীনতার রাজনীতিতে জননেতা জহুর আহমদ চৌধুরী আমাদের আদর্শিক বিশ্বাসের শিকড়। বহুবিধ গুণাবলী অধিকারী এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব উপমহাদেশের শ্রম আন্দোলনের অগ্রদূত। আদর্শিক মানুষটি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাহচর্যে এসে সত্যিকার অর্থে একজন গণমানুষের নেতা হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন।

সোমবার (১ জুলাই) দুপুরে নগরীর ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সেন্টারে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন। উপমহাদেশের শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রদূত, চট্টগ্রাম শহর আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক, বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ট সহচর, মুক্তিযুদ্ধকালীন ইস্টার্ণ জোনের চেয়ারম্যান এবং স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রীসভার শ্রম, স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর ৪৫ তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করা হয়।

মোসলেম উদ্দিন আরও বলেন, ‘আজ পরিবর্তিত রাজনৈতিক আবহে অতীতের মত অনেক কিছুই নেই। কিন্তু জহুর আহমদ চৌধুরীর মত ত্যাগী ও আদর্শিক মানুষের ছায়াতলে আওয়ামী রাজনীতির মূল ঘূর্ণাবর্ত প্রবহমান। আমাদের সৌভাগ্য যে আমরা যারা সত্যিকার অর্থে রাজনীতি করি জহুর আহমদ চৌধুরীর মত মানুষরাই আমাদের আশ্রয়।’

তিনি বলেন, ‘দল হিসেবে আওয়ামী লীগ উপর্যুপরি তৃতীয় দফায় ক্ষমতায়। এর প্রভাবে ভাল-মন্দ দুটি ধারাই প্রবহমান। তবে আমাদেরকে ভাল দিকটিকেই আকড়ে থাকতে হবে। এ ভাল দিকটি হল আমরা যারা সত্যিকার অর্থে নিখাদ রাজনৈতিক নেতাকর্মী তারা এখন বুঝতে পারছি যে, আত্মতৃপ্তি আমাদেরকে গ্রাস করতে পারে। এ প্রবণতা পরিহার করতে পারলে দল সমৃদ্ধ হবে।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও প্রয়াত নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর সুযোগ্য সন্তান মাহতাব উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘জহুর আহমদ চৌধুরী আমার পিতা। তিনি একজন ষোলআনা খাটি রাজনীতিক। তাই তাঁর সাথে পরিবারের বন্ধন আলগা থাকলেও তাঁর সন্তান হিসেবে আমি গৌরববোধ করি। তিনি কখনও অর্থবিত্তের জন্য রাজনীতি করেন নি। মানুষের ভালবাসায় সিক্ত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে গণমানুষের মুক্তি অর্জনই ছিল তাঁর আরাধ্য স্বপ্ন। এই স্বপ্নটি ছিল বঙ্গবন্ধুরও। এই স্বপ্ন বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে লড়াই-সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন তা অর্জিত হলে বঙ্গবন্ধু ও আমার প্রয়াত পিতার আত্মা শান্তি পাবে।’

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এম এ ছালাম বলেন, ‘আমরা বক্তৃতা ও আলোচনায় ত্যাগী নেতাকর্মীদের মূল্যায়ন করার কথা বলি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে তার প্রতিফলন। সংগঠনের বিভিন্ন স্তরের নেতৃত্বে এখনও প্রতিফলিত করতে পারি নি। কেন পারিনি এ প্রশ্ন যদি করি তাহলে এটাই বলতে হয় যে, ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিজেরাই হাইব্রীডদের করুণানির্ভর হয়ে পড়েছেন।’

চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘জহুর আহমদ চৌধুরীর আওয়ামী রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব। আমরা বর্তমান প্রজন্মের রাজনীতিকরা তাঁর সাহচর্য পাই নি। তবে তাঁরই হাতে গড়ে ওঠা মরহুম এম.এ.মান্নান ও এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সাহচর্যে এসে সঠিক রাজনীতির দীক্ষা নেয়ার সুযোগ ঘটেছে।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক এম রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘জহুর আহমদ চৌধুরীর মত ক্ষণজন্মা রাজনীতিবিদের চট্টগ্রামে জন্ম হয়েছিল বলেই চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ আজ সুপ্রতিষ্ঠিত। জাতির যে কোন সংকটকালীন সময়ে চট্টগ্রামের আওয়ামী রাজীনতি আজ জাতীয় রাজনীতিকে প্রভাবিত করতে পেরেছে। জহুর আহমদ চৌধুরীর আদর্শ অনুসরণ করে আগামী প্রজন্মদের সামনে এগিয়ে আসার আহŸান জানিয়ে বলেন তিনি ছিলেন নিরংহকারী, নির্লোভ ও আপাদমস্তক একজন খাটি বাঙালি রাজনৈতিক।’

চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক শফিকুল ইসলাম ফারুকের সঞ্চালনায় সভার শুরুতে প্রয়াত নেতার প্রতি দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। স্মরণ সভায় বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আলহাজ্ব নঈম উদ্দিন চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি ও পটিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মোতাহেরুল ইসলাম চৌধুরী, সহ সভাপতি ও সিডিএ চেয়ারম্যান এম জহিরুল আলম দোভাষ, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি মো: ইদ্রিছ, মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আলতাফ হোসেন চৌধুরী বাচ্চু, উত্তর জেলার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো: আবুল কালাম আজাদ, প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধা মো: হারিস চৌধুরী, মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নোমান আল মাহমুদ, প্যানেল মেয়র চৌধুরী হাসান মাহমুদ হাসনী, উত্তর জেলার সদস্য ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান এ.টি এম পেয়ারুল ইসলাম, দক্ষিণ জেলার প্রদীপ কুমার দাশ, মুক্তিযোদ্ধা অমল মিত্র, মুক্তিযোদ্ধা ও উত্তর জেলার মোহাম্মদ ইউনুছ, বাগমনিরাম ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আলহাজ্ব মো: গিয়াস উদ্দিন। সভামঞ্চে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের এড. সুনীল কুমার সরকার, এড. ইব্রাহিম হোসেন চৌধুরী বাবুল, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম সুজন, আলহাজ্ব বদিউল আলম, শফিক আদনান, হাসান মাহমুদ শমসের, এড. ইফতেখার সাইমুল চৌধুরী, চন্দন ধর, মশিউর রহমান চৌধুরী, আহমেদুর রহমান সিদ্দিকী, হাজী মো: হোসেন, হাজী জহুর আহমদ, জোবাইরা নার্গিস খান, আবদুল আহাদ, দিদারুল আলম চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের আবু জাফর, আলহাজ্ব খোরশেদ আলম, ডা: তিমির বরণ চৌধুরী সহ মরহুম পরিবারের সদস্যবর্গ। এর আগে সকালে মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরীর দামপাড়াস্থ কবরপ্রাঙ্গণে খতমে কোরআন, দোয়া ও মিলাদ মাহফিল এবং তাঁর কবরে চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতৃবৃন্দ স্ব স্ব জেলার পক্ষে পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। আলোচনা সভার প্রারম্ভে সাবেক মহিলা কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি প্রয়াত নেতা জহুর আহমদ চৌধুরীর পুত্রবধূ বেগম শফিনাজ মাহতাবের ৬ষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর রুহের আত্মার মাগফেরাত কামনা করা হয়।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!