জরিমানা দিয়ে আবার পাহাড় কাটছে বাঁশখালীর পাহাড়খেকোরা

একদিনেই ৬ লাখ টাকার মাটি বিক্রি

চট্টগ্রামের বাঁশখালীর নাপোড়া শামশুইয়া ঘোনা এলাকায় সমতল থেকে ৩৫ ফুট উঁচু ৬ একর পাহাড়। নাম ছিলো বট্টল্যাশিয়া পাহাড়। বর্তমানে রইস্যা পাহাড় নামে পরিচিত। ওই পাহাড়ের শিরোভাগে স্কেভেটর বসিয়ে দেদারচ্ছে কাটছে পাহাড়ের লাল মাটি। ওই লাল মাটি কেটে ট্রাকে করে বিক্রি করছে স্থানীয় কিছু পাহাড়খেকো যুবক। ওই মাটি বাঁশখালীর বিভিন্নপ্রান্তে নিয়ে যাবার সময় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকায় নির্মাণ করা গ্রামীণ রাস্তা ভেঙ্গে চৌচির হয়ে গেছে।

ভয়াবহ আকারে পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে গ্রামবাসী অভিযোগ দেন বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে। ওই অভিযোগ পেয়ে রোববার (২৪ অক্টোবর) বিকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী এবং উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. মাজহারুল ইসলাম ঘটনাস্থলে যান।

ওই সময় তাঁরা স্কেভেটর ও ট্রাক জব্দ করেন এবং পাহাড় কাটায় জড়িত নুরুল আবছার, নুরুল আমিন, মো. দিদার, সাদ্দামসহ ৪ জনকে আটক করেন। পরে তাঁরা ভ্রাম্যমান আদালত বসিয়ে তাঁদের ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

জরিমানা দিয়ে মুক্ত হয়ে পাহাড়খেকোরা সোমবার (২৫ অক্টোবর) সকাল থেকে আবার ৩৫টি ট্রাক দিয়ে বিপুল উদ্যমে পাহাড়কাটা শুরু করেছে।

সোমবার দুপুর ১২টায় সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বাঁশখালী প্রধান সড়কের নাপোড়া শামশুইয়া ঘোনা সড়কে ট্রাকের র‌্যালী। প্রতিটি গাড়িতে পাহাড়ি মাটি। প্রায় দুইকিলোমিটার গ্রামীণ রাস্তায় পাহাড়ি মাটিভর্তি র‌্যালি দেখে গ্রামের মানুষ অস্থির হয়ে ওঠেছে। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের টাকায় ওইসব সড়কের কিছু কিছু জায়গায় ইট বসানো হয়েছে এবং মাটি দেয়া হয়েছে। অবিরত ট্রাক ভর্তি মাটি বিক্রয় এবং ট্রাকের আসা-যাওয়ায় ওইসব সড়কের ইট ওঠে এবং রাস্তা ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে। শেষ প্রান্তে গিয়ে দেখা গেছে ৬ একরের বট্টল্যাশিয়া পাহাড়।

ওই পাহাড়ের এক একর জায়গা কিনেছিলেন মৃত রশিদ আহমদ। তাই ওই পাহাড়টি রইস্যা পাহাড় নামে পরিচিত। খতিয়ানে পাহাড় লিখা থাকলেও ২০১৭ সালে রশিদ আহমদের ছেলে নুরুল আবছার, নুরুল আমিন ও রুহুল আমিনরা তাদের নামে নতুনভাবে জমির শ্রেণি পাল্টে খতিয়ান করেছেন “নাল” লিখিয়ে। সমতল থেকে ৩৫ ফুট উঁচু বিশাল পাহাড়টি পাহাড় হিসেবে দৃশ্যমান হলেও খতিয়ানভুক্ত নাল জমি দেখিয়ে পাহাড় নয় নাল জমি কাটছেন বলে দাবি তুলছেন এলাকায় পাহাড়খেকোরা। এছাড়া ভ্রাম্যমান আদালতে ৫০ হাজার টাকা জরিমানার বিষয়টি আপত্তিজনক বলেও দাবি করেন তারা।

সরেজমিনে আরও দেখা যায়, প্রতি ট্রাক লাল মাটি বিক্রি করছে ১৮০০ টাকা। ৩৫টি ট্রাকের প্রতিটি অন্ততঃ দুপুর পর্যন্ত ১০ গাড়ি করে ৩৫০ গাড়ি মাটি বিক্রয় করেছে। যার মূল্য আনুমানিক ৬ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এলাকাবাসীর অভিযোগ জরিমানা দিয়েও বহুগুণ টাকার মাটি বিক্রয় করতে পারায় পাহাড়খেকোরা মাটি কাটা থামাচ্ছে না। দেদারসে কাটছে পাহাড়ি মাটি। ওই রইস্যা পাহাড়ের লাল মাটি বিক্রয়ে ৩৭ লাখ টাকার একটি চুক্তি করেছে মাটি ক্রেতা অপর একটি গ্রুপ। ওই গ্রুপ আরও বেশি দামে আরেকটি প্রতিষ্ঠানকে বিক্রয়ের চুক্তি করেছেন বলে এলাকায় প্রচার রয়েছে।

রইস্যা পাহাড়ের মালিক দাবিবার নুরুল আবছার বলেন, ‘খতিয়ানভুক্ত আমার বাবার নামীয় পাহাড় কাটছি। তাছাড়া এটা আগে পাহাড় ছিল এখন নাল জমি। এই বলে দৃশ্যমান একটি পাহাড়কে নাল জমি বলে ২০১৭ সালের নতুন সৃজনকরা একটি খতিয়ান দেখালেন। তিনি দাবি করেন ইউএনও ৫০ হাজার টাকা যে জরিমানা করেছেন তাও অন্যায় করেছেন। আমরা আমাদের পৈত্রিক জমি কাটছি, এটা অন্যায় নয়।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. সাইদুজ্জামান চৌধুরী বলেন, ‘ গত রবিবার সন্ধ্যায় নাপোড়ার শামশুইয়া ঘোনা এলাকায় পাহাড় কাটার অভিযোগে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছি। ওরা যদি আবার পাহাড়কাটার সাহস দেখায় তাহলে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। পাহাড় কেটে কেউ পরিবেশ ধ্বংস করতে পারবে না। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হচ্ছে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!