জমির ‘দালালি’র ২১ কোটি মিললো কাউন্সিলরের ব্যাংক হিসাবে

দুই সাংবাদিকসহ ১০ জনের তথ্য মেলেনি এখনও

সাবেক কাউন্সিলরের ব্যাংক একাউন্ট থেকে ১৩ দিন আগে পাওয়া গেল ২০ কোটি টাকা। এরপর রোববার ডাকবিভাগের সঞ্চয়ী একাউন্ট থেকে মিলল আরও ৮০ লাখ টাকা। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম কার্যালয়ের অভিযানে টাকা জব্দের এই দুই ঘটনা যার একাউন্ট থেকে, তিনি হলেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেল। দুদকের সন্দেহ, এই পুরো টাকাটাই কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণের আলোচিত সেই দুর্নীতিরই একটি অংশ।

গত ১ সেপ্টেম্বর দুদক চট্টগ্রাম কার্যালয়ের উপ-সহকারী পরিচালক মো. শরীফ উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি টিম কক্সবাজারের বেসিক ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক এবং ট্রাস্ট ব্যাংকের শাখা থেকে কাউন্সিলর জাবেদের একাউন্টে থাকা ২০ কোটি টাকা জব্দ করে। এরপর রোববার (১৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে ডাকবিভাগের কক্সবাজার শাখায় অভিযান চালিয়ে ৮০ লাখ টাকা জব্দ করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধানে দেখা গেছে, কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ নিয়ে যে বিশাল দুর্নীতি হয়েছে, তাতে কথিত মধ্যস্থতার (দালালি) নামে অবৈধ উপায়ে এসব টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে। কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত যে মামলাটি নিয়ে অনুসন্ধান চালাচ্ছে দুদক, তাতে এলএ শাখায় অনিয়মের সঙ্গে সাবেক পৌর কাউন্সিলর জাবেদ কায়সার নোবেলের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখায় ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের ২০ থেকে ৩০ শতাংশ হারে কমিশন দিয়ে অধিগ্রহণের টাকা আদায় করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। দালালি বা এলএ অফিসের কমিশনের টাকা আগাম পরিশোধ নিয়েই এক ধরনের জমজমাট বাণিজ্য গড়ে উঠেছে সেখানে। কমিশনের টাকা আগাম পরিশোধের জন্য চড়া সুদে টাকা ধার দেওয়া হতো ক্ষতিগ্রস্ত ভূমির মালিকদের। কাউন্সিলর জাবেদসহ একটি চক্র এই কাজে নেতৃত্বে দিয়ে আসছিলেন।

এর আগে কক্সবাজার দুই সাংবাদিক ও জনপ্রতিনিধিসহ ১০ জনের ব্যাংক হিসাব তলব করে দুদক। কক্সবাজারে বিভিন্ন প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে জমির মালিক থেকে কোটি টাকার ঘুষ নিয়ে সেই অর্থ পাচার অভিযোগ তদন্ত করতে ওই ১০ জনের ব্যাংক হিসাব চায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-২ এর এক চিঠিতে সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে বিটিভির কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি জাহেদ সরওয়ার সোহেল ও দৈনিক কালের কন্ঠের কক্সবাজার জেলা প্রতিনিধি তোফায়েল আহমেদসহ মোট ১০ জনের ব্যাংক হিসাবের বিস্তারিত চাওয়া হয়।

দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) একই সাথে ব্যাংকের কাছে ওই ব্যক্তিদের নামে অথবা তাদের পরিবারের কোন সদস্য অথবা তাদের প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ব্যাংক একাউন্টের লেনদেনের হিসাবও তলব করে। দুই সাংবাদিক ছাড়াও দুদক আরও যে ৮ জনের ব্যাংক লেনদেনের হিসাব তলব করে— তারা হলেন কক্সবাজার পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলার জাবেদ মুহাম্মদ কায়সার নােবেল, মহেশখালীর উপজেলার ধলঘাটার নূরুল কবীর, উখিয়ার ইনানী এলাকার আহমদ হোসেন, মহেশখালী উপজেলার হোয়ানকের মােসলেম উদ্দিন ভূঁইয়া, মহেশখালীর কালামারছড়ার আরিফুর রহমান, উখিয়ার ইনানী এলাকার মহিবুল্লাহ, মহেশখালীর মাতারবাড়ির মুস্তাফিজুর রহমান ও একই এলাকার আব্দুছ সাত্তার।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!